সহজে বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম
আপনি কি বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম খুজছেন? বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনিয় পদক্ষেপ গুলো নিয়ে আজকের এই পোস্টে আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি আপনার কাজে আসবে।
একটি বিকাশ একাউন্ট খোলার পর বিভিন্ন কারণে এই বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার দরকার হতে পারে। তবে আপনার উচিত আগেই তা বুঝে নেয়া যে আপনার একাউন্টি বন্ধ করার দরকার আছে কিনা। একাউন্ট যদি বন্ধ করার একান্ত দরকার হয় তবে বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম জেনে নিন। তারপর নিয়ম অনুযায়ি পদক্ষেপ নিন।
যাই হোক। এই পোস্টে আমরা দেখবো বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম, একাউন্ট বন্ধ করার আগে করণিয় এবং সেই সাথে কি কি ডকুমেন্টস বা অন্য কিছু দরকার হতে পারে। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক।
Table of Contents
সংক্ষেপে বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম
আপনার বিকাশ একাউন্টি বন্ধ করার জন্য আপনার একাউন্টের ব্যালেন্স শূন্য করে নিন। তার পর আপনার প্রয়োজনিয় ডকুমেন্টস, যেমন: এনআইডি কার্ড, ছবি ও সিম নিয়ে আপনার নিকটস্থ বিকাশের কাস্টমার কেয়ার ভিজিট করুন। সেখানে বিকাশের এজেন্ট আপনাকে বিকাশ একাউন্টি বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনিয় সকল সহায়তা করবে।
বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম নিয়ে আরো জানুন।
কখন বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করবেন কখন করবেন না
বিভিন্ন কারণে আপনার বিকাশ একাউন্টি আপনার মনে হতে পারে যে বন্ধ করে দেই। তবে আপনি হয়তো তা নাও জানতে পারেন যে এমন কিছু সমস্যা আছে যার জন্য আপনাকে আপনার একাউন্ট বন্ধ করার দরকার নাই। এখানে নিচে এমনি কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরবো। চলুন তা দেখে নেয়া যাক।
- আপনার যদি বিকাশ সিম হারিয়ে যায় তবে একাউন্ট বন্ধ করার দরকার নেই।
- বিকাশের পিন যদি ভুলে যান তবে একাউন্ট বন্ধ করার দরকার নেই (পড়ুন- বিকাশের পিন ভুলে গেলে করণীয়)।
- যদি আপনার বিকাশ একাউন্টের মালিকানা পরিবর্তন করতে চান, তবে বন্ধ করা যেতে পারে।
- যদি আপনি আপনার বিকাশ একাউন্ট নাম্বার পরিবর্তন করতে চান তাহলেও বন্ধ করতে পারেন।
- আবার যদি বিকাশ একাউন্ট হ্যাক হয়েছে মনে হয় তবে তা সাময়িক ভাবেও বন্ধ করতে পারেন।
- আপনি আর বিকাশ ব্যবহার করতে চান না, তবে তা বন্ধ করতে পারেন না করলেও পারেন।
সিম হারানোর কারণে কেন বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করবেন?
আপনার যদি বিকাশ একাউন্ট আছে এমন সিমটি কোনো ভাবে হারিয়ে যায় এবং এজন্য আপনি যদি বিকাশ একাউন্টি বন্ধ করার পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে আপনার তা করার প্রয়োজন নেই। কারণ সিমটি যদিও আপনার আর খুজে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই তবে সিমটি তুলে নেয়া সম্ভব।
আপনি আপনার সিমটি সিম বিক্রি করে এমন কোনো সিম এজেন্টের কাছে গিয়ে তুলে নিতে পারবেন। এজন্য তাদের শুধু বললেই হবে যে আপনার সিম হারিয়ে গেছে, তাই আপনি ওই সিমটি তুলতে চান।
এখানে আপনার সাথে অবশ্যই আপনার এনআইডি কার্ডটি থাকতে হবে। আগের সিমটি যদি আপনার নামে হয়ে থাকে তবে আপনি তা অবশ্যই রিপ্লেস করতে পারবেন। তবে এর জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট একটি চার্জ দিতে হবে।
আরো পড়ুন- বিকাশ সিম হারিয়ে গেলে করণীয় কি জেনে নিন।
বিকাশ একাউন্টের মালিকানা পরিবর্তন করার জন্য বন্ধ করবেন?
হ্যাঁ, বিকাশ একাউন্টের মালিকানা পরিবর্তন করার জন্য আপনাকে অবশ্যই আপনার বিকাশ একাউন্টি বন্ধ করে দিতে হবে। কেননা পুরোনো একাউন্টি বাতিল করার পরই আপনি আপনার মালিকানা পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন এবং নতুন মালিকের নামে একাউন্ট খুলতে পারবেন।
আপনার একাউন্টি যদি পূর্বে আপনার বাবার নামে খোলা থাকে তবে তিনি ও তার ডকুমেন্টস সহ গিয়ে একাউন্ট বন্ধ করে তারপর আপনার নামে খোলার জন্য ডকুমেন্টস দিয়ে বিকাশ একাউন্টি নতুন করে ওপেন করতে হবে। এখন আপনি যদি না যানেন যে একাউন্ট কার নামে খোলা হয়েছে তবে পড়ুন- বিকাশ একাউন্ট কার নামে আছে তা যেভাবে দেখবেন।
বিকাশ একাউন্ট হ্যাক হলে কি একাউন্ট বন্ধ করবেন?
বিকাশ একাউন্ট যদি মনে হয় যে হ্যাক হয়েছে বা অন্য কারো কাছে এর এক্সেস আছে, তবে তা সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেয়াটাই ভালো। হ্যাঁ আপনি তা সাময়িক ভাবে বন্ধ করতে পারবেন। বিকাশ এমন সুযোগ রেখেছে।
এর জন্য বিকাশ কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের ফোন নম্বর ১৬২৪৭ তে কল করে আপনার সমস্যা সম্পর্কে বলুন। তারপর তারা আপনাকে আপনার একাউন্ট সম্পর্কিত কিছু তথ্য জিঙ্গেস করবে। তথ্য দেয়ার পর বিকাশ থেকে আপনার একাউন্টি সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে এই বন্ধ করে দেয়া পারমানেন্ট নয়।
আরো পড়ুন- বিকাশ একাউন্ট হ্যাক হলে করণীয় কি
অন্য যোকোনো কারণে
অন্য যেকোনো কারণে আপনার বিকাশ একাউন্টি বন্ধ করার দরকার হতে পারে। যেমন ধরুন আপনি যদি আপনার সিম অপারেটর পরিবর্তন করতে চান, আগের সিম বাদ দিয়ে নতুন কোনো সিমে একাউন্ট করতে চান, বা বিকাশ ব্যবহার বন্ধ করতে চান, তবে আপনি বন্ধ করতে পারেন।
বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনিয় ডকুমেন্টস ও অন্যান্য
বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করতে আপনার কিছু ডকুমেন্টস দরকার হবে এবং সাথে আপনাকেও থাকতে হবে। চলুন দেখে নেয়া যাক কি কি ডকুমেন্টস ও অন্যান্য জিনিস পত্র দরকার হবে এখানে।
- একাউন্ট যার নামে খোলা তার এনআইডি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- বন্ধ করার পর নতুন করে খোলার জন্য যার নামে খুলবেন তার এনআইডি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- যে নাম্বারে খুলবেন সেই সিমকার্ডটি।
- যে ব্যাক্তির নামে খুলা হচ্ছে সে নিজে।
বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম (ধাপে ধাপে দেখুন)
#১. বিকাশ ব্যালেন্স শূন্য করে নিন: আপনার বিকাশের একাউন্টে যদি কোনো টাকা থেকে থাকে তবে তা সরিয়ে নিন। কেননা আপনি আপনার একাউন্টি বন্ধ করে দেয়ার পর আপনার এই টাকা আর আপনার একাউন্টে অবশিষ্ট থাকবে না। তাই তা কোথাও ব্যবহার করে ফেলুন, যেমন বিকাশ থেকে মোবাইল রিচার্জ করতে পারেন। তারপর ব্যালেন্স দেখতে পড়ুন বিকাশ একাউন্ট চেক করার নিয়ম।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় যে আপনি আপনার টাকা অন্য কারো একাউন্টে ট্রান্সফার দিয়ে দিন। এতে করে আপনি আপনার একাউন্টে থাকা যেকোনো এমাউন্ট ট্রান্সফার দিয়ে দিতে পারবেন। যেখানে যেখানে টাকা ট্রান্সফার করতে পারেন:
রকেটে একাউন্টে | বিকাশ থেকে রকেটে টাকা ট্রান্সফার করার নিয়ম |
বিকাশ থেকে ব্যাংকে | বিকাশ থেকে ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম |
সোনালী ব্যাংকে | সোনালী ব্যাংক থেকে বিকাশে টাকা ট্রান্সফার করার নিয়ম |
ইসলামী ব্যাংকে | বিকাশ থেকে ইসলামী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম |
আবার চাইলে বিল দিয়েও একাউন্ট ব্যালেন্স শূন্য করতে পারেন। পড়ুন: বিকাশে বিদ্যুৎ বিল চেক ও পরিশোধ করার নিয়ম।
#২. প্রয়োজনিয় সকল জিনিস সংগ্রহ করুন: আপনার একাউন্টি বন্ধ করার জন্য আপনার প্রয়োজনিয় সকল ডকুমেন্টস এবং আনুষাঙ্গিক জিনিসগুলো সংগ্রহ করুন। যেমন ধরুন আপনার বাবার নামে আপনার সিমে বিকাশ খোলা। তবে আপনি আপনার বাবাকে সহ এবং তার এনআইডি ও ছবি সহ এবং সেই সাথে আপনি ও আপনার এনআইডি ও ছবি সহ কাস্টমার কেয়ারে যেতে হবে।
#৩. নিকটস্থ কাস্টমার কেয়ার ভিজিট করুন: আপনার যদি বিকাশের কাস্টমার কেয়ার কোথায় আছে তা জানা না থাকে তবে গুগল থেকে জেনে নিন। সার্চ করুন ”bkash customer care near me“ লিখে।
#৪. ডকুমেন্টস সহ কাস্টমার কেয়ার ভিজিট করুন: একাউন্ট বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনিয় সকল ডকুমেন্টস সাথে করে স্বশরীরে কাস্টমার কেয়ারে ভিজিট করুন। তারপর তাদের আপনার প্রয়োজন সম্পর্কে বলুন। তারা আপনাকে আপনার একাউন্ট বন্ধ করে দিতে বা আবার নতুন করে একাউন্ট করতে সব রকম সহযোগিতা করবে।
বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার পর নতুন বিকাশ একাউন্ট
একাউন্ট বন্ধ করে দেয়ার পর আপনি চাইলে আবার নতুন বিকাশ একাউন্ট করতে পারবেন। এই একাউন্ট কাস্টমার কেয়ার থেকেই করে নিতে পারবেন বা আপনি নিজেই খুলতে পারবেন আপনার মোবাইল থেকে।
বিভিন্ন প্রকার বিকাশ একাউন্ট দেখে নিন
পার্সোনাল বিকাশ | পার্সোনাল বিকাশ একাউন্ট |
পার্সোনাল রিটেইল | বিকাশ পার্সোনাল রিটেইল একাউন্ট |
মার্চেন্ট একাউন্ট | বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম |
এজেন্ট একাউন্ট | বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম |
আরো পড়ুন- বিকাশ একাউন্ট সাময়িক বন্ধ হলে করনীয় |
বিকাশ একাউন্ট বন্ধ সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর
না, বিকাশ একাউন্ট ঘরে বসে বন্ধ করা যায় না। একাউন্ট বন্ধ করতে আপনাকে অবশ্যই কাস্টমার কেয়ারে যেতে হবে। তবে হ্যাঁ আপনার একাউন্টি আপনি চাইলে সাময়িক ভাবে বন্ধ করতে পারবেন বিকাশে কল করার মাধ্যমে।
হ্যাঁ যায়। তবে মূল বিষয়টি হলো এখানে বিকাশ পুরোনো একাউন্টি বন্ধ করে দেন। তারপর নতুন যিনি মালিক হতে চান, তিনি তার এনআইডি ব্যবহার করে নতুন একটি একাউন্ট খুলে নিতে হয়।
হ্যাঁ, একাউন্ট বন্ধ করার সময় বিকাশ একাউন্ট যার নামে খোলা তাকে স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে। তিনি যদি উপস্থিত না থাকেন তবে একাউন্ট বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
এক্ষেত্রে তার মৃত হওয়ার প্রমাণ পত্র থাকলে তা আপনাকে কাস্টমার কেয়ারে দেখাতে হবে।
হ্যাঁ, আপনার বিকাশ একাউন্টি বন্ধ করে দেয়ার পর আপনি আবার নতুন করে বিকাশ একাউন্ট করতে পারবেন। তা আপনারই এনআইডি ব্যবহার করে করতে পারবেন।
আপনি চাইলে আপনার বিকাশ একাউন্ট একটি সিমিত সময়ের জন্য বন্ধ করতে পারবেন। তবে তা করতে হলে আপনাকে বিকাশের কাস্টমার কেয়ারে কল করতে হবে।