স্কলারদের থেকে জানুন ব্যাংকে চাকরি হালাল না হারাম

ব্যাংকে চাকরি হালাল না হারাম এনিয়ে চিন্তায় আছেন? এই পোস্ট থেকে স্কলারদের বলা কিছু কথা কোরআন হাদিসের আলোকে জেনে নিন ব্যাংক জব হালাল হবে কিনা।

ADVERTISEMENT

অনেকে ”ব্যাংকে চাকরি হালাল না হারাম” এই প্রশ্নে সরাসরি হারাম বলে দেন। কিন্তু আবার bank এমন একটি প্রতিষ্ঠার, যেটি ছাড়া আমরা আমাদের দৈনন্দিন লেনদেনের একটি বিশাল অংশ পরিচালনা করতে পারি না। তাহলে ব্যাংকে চাকরির হুকুম কি? আর ব্যাংকে চাকরি হারাম কেন?

এই পোস্টে ব্যাংক এর চাকরির ব্যাপারে আলেমদের মত সহ দেখবো যে আসলে চাকরি হালাল নাকি হারাম। ইসলামী ব্যাংক গুলোর ব্যাপারেও এখানে আলোচনা করা হবে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

ADVERTISEMENT

ব্যাংকে চাকরি হালাল না হারাম

যেহেতু ব্যাংকের সাথে আমাদের প্রতিদিনকার লেনদেন অনেকাংশে জরিত। তাই এটি অনেক বড় একটি প্রশ্ন। এই প্রশ্নের ব্যাপারে ইসলাম কি বলে? আসুন তার বিস্তারিত কোরআন হাদিসের আলোকে জেনে নেই।

সুদ দেওয়া সম্পর্কে হাদিস

প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সুদের সত্তর প্রকার গুনাহ রয়েছে। আর এর নিম্নটি হলো নিজ মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার সমপর্যায়ের গুনাহ।’ (মুসতাদরেকে হাকেম, আন-নিহায়া ফি গারিবিল হাদিস)।

ADVERTISEMENT

ব্যাংকে চাকরি হারাম কেন?

যে ব্যাংক সুদের কারবারের সাথে সম্পৃক্ত নাই, তাদের আমরা হালাল হিসেবে ধরে নিতে পারি। তবে আমরা সবাই কম বেশি জানি যে ব্যাংক গুলোর মূল ভিত্তি হলো সুদের কারবার। আর সুদের কারবারের সাথে জরিত যেকোনো কিছুই হারাম। তাই ব্যাংকের চাকরিকে সচরাচর হারাম বলা হয়। তবে এখানে কি কোনো হালাল ব্যাংক নাই? আসুন তা জেনে নেই।

ব্যাংকে চাকরি কখন হালাল?

বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকগুলো অন্তত সমাজে এটি ছড়িয়ে দিতে সমর্থ হচ্ছে যে সুদ হারাম। তারা তাদের বোর্ড গুলো পরিচালনা করছে শরিয়া বোর্ড দিয়ে, যারা মনিটর করে ব্যাংকিং ব্যাবস্থা ইসলামী উপায়ে চলছে কিনা।

তবে এটা বলা যাবে না যে তাদের কাজগুলো পুরোপুরি সুদ মুক্ত বা ইসলামী। তাদের কিছু বিষয় নিয়ে কন্ট্রভার্সি আছে। তারপরও যেহেতু আমরা এখন ব্যাংকিং ব্যবস্থার সাহায্য ছাড়া অনেকআংশে অচল। তাই এই ব্যাবস্থা তুলনা মূলক ভালো। এব্যাপারে আলেমরা কি বলে, আসুন দেখে নেযা যাক।

ADVERTISEMENT
আরো পড়ুন- সুদমুক্ত ইসলামী ব্যাংক খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড

ব্যাংকে চাকরি হালাল না হারাম মিজানুর রহমান

বর্তমান সময়ের একজন জনপ্রিয় বক্তা মিজানুর রহমান আজহারি ব্যাংকের ব্যাপারে লোকেদের সাজেশন দিয়ে থাকেন যে, তারা যেন নিজেদের অন্য ব্যাংক বাদ দিয়ে ইসলামী ব্যাংক গুলোর সাথে সম্পৃক্ত করে নেয়। এতে করে বুঝা যায় যে তিনিও অন্যান্য সুদি ব্যাংকের চাকরি হালাল হবে না, এই ব্যাপারে একমত। আরো জানতে নিচের ভিডিওটি দেখুন।

ব্যাংকে চাকরি হালাল না হারাম মিজানুর রহমান

ব্যাংকে চাকরি নিয়ে জাকির নায়েক

ডঃ জাকির নায়েক, তিনিও ইসলামী ব্যাংক গুলোতে কাজ করার ব্যাপারে সাজেশন দিয়ে থাকেন। এ সম্পর্কে জানতে নিচের ভিডিওটি দেখুন।

বাংলাদেশের কোন কোন ব্যাংকে চাকরি করা জায়েজ

বিভিন্ন আলেমদের মত এমন যে, যেহেতু বাংলাদেশে বেশির ভাগ ব্যাংক সুদ ভিত্তিক, তাই সরকারি বেসরকারি বা বানিজ্যিক ব্যাংক গুলো হালাল হবে না। তবে ইসলামী ব্যাংক অনেক আংশে নিজেদের সুদ মুক্ত রাখার চেষ্টা করে। তাই যদি কোনো অলটারনেটিভ না থাকে তবে ইসলামী ব্যাংক গুলোতে চাকরি করা যেতে পারে।

ADVERTISEMENT

সেক্ষেত্রে চাকরি করা যেতে পারে ইসলামি ব্যাংকে, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকে, শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংকে, বা আরো এমন যেসকল ব্যাংক রয়েছে সেখানে।

ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট খুলে লেনদেন করতে জানুন ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে।

সুদি ব্যাংকের চাকরিতো হারাম। কিন্তু সেই ব্যাংক হারাম যেহেতু, সেহেতু সেখান থেকে কি লোন নেয়া জায়েজ হবে? এ ব্যাপারে জানতে পড়ুন ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া কি জায়েজ কিনা এই পোস্টি।

এখন আসুন সুদ সম্পর্কে কোরআন হাদিসের আলোকে আরেকটু জেনে নেয়া যাক

সুদের অপরাধ যে কত মারাত্মক তা বোঝানোর জন্য বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিসই যথেষ্ট। তাহলো- প্রিয় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সুদের সত্তর প্রকার গুনাহ রয়েছে। যার মধ্যে নিম্নটি হলো নিজ মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার সমপর্যায়ের গুনাহ।’ (মুসতাদরেকে হাকেম, আন-নিহায়া ফি গারিবিল হাদিস)।

ADVERTISEMENT

সুদ খাওয়া হারাম। আল্লাহ তাআলা সুদ খাওয়াকে শুধু হারাম ঘোষণাই করেননি, সুদের সাথে জড়িত ব্যক্তির অবস্থান কেমন তা উপমাসহ পবিত্র কোরআনুল কারিমে উল্লেখ করেছেন। কোরাআনে একাধিক আয়াতে সুদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

#১. الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لاَ يَقُومُونَ إِلاَّ كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُواْ إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَأَحَلَّ اللّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا فَمَن جَاءهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىَ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللّهِ وَمَنْ عَادَ فَأُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

‘যারা সুদ খায়, তারা কেয়ামতের দিন দণ্ডায়মান হবে, যেভাবে দণ্ডায়মান হয় ওই ব্যক্তি; যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে, ক্রয়-বিক্রয়ও তো সুদ নেয়ারই মতো! অথচ আল্লাহ তাআলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। এরপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, আগে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই জাহান্নামে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৫)

ADVERTISEMENT

#২. يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً وَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়োনা। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩০)

#৩. يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَذَرُواْ مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সব বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৮)

#৪. يَمْحَقُ اللّهُ الْرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ

আল্লাহ তাআলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোনো অবিশ্বাসী পাপীকে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৬)

সুদ খাওয়া, সুদ দেয়া এবং সুদের লেনদেনে সাহায্য ও সহযোগিতা করা; সবই হারাম এবং অভিশপ্ত কাজ হিসেবে গণ্য। এ সম্পর্কে হাদিসে পাকে প্রিয় নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে সতর্ক করেছেন-

হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লানত করেছেন- সুদখোর, সুদের হিসাবরক্ষক এবং তার সাক্ষীদ্বয়ের প্রতি। তিনি আরো বলেছেন, (সুদের সঙ্গে জড়িত) তারা সবাই সমান অপরাধী।’ (বাইহাকি, মিশকাত)

আরো পড়ুন- ইসলামি ব্যাংকগুলো কি ঘুরিয়ে সুদ খায়?

ব্যাংক জব হালাল না হারাম নিয়ে কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর

বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি হালাল না হারাম?

বাংলাদেশ ব্যাংকও সুদি কার্যক্রমের বাইরে নয়। সেই সাথে এটি সুদি ব্যাংকগুলোর মনিটরিংও করে থাকে। সুতরাং তারাও সুদের সাথে যুক্ত এবং তাই হালাল বলা যাবে না।

সরকারি ব্যাংকে চাকরি কি হালাল?

সরকারি কোনো ব্যাংকই ইসলামীক নয়। তাদের প্রধান ভিত্তিই হলো সুদ। তাই তাদের হালাল বলা যায় না।

ব্যাংকে চাকরি করলে বেতন হালাল হবে না হারাম হবে?

সুদের সাথে জরিত ব্যাংকে চাকরি করলে বেতন হালাল হবে এটাতো অসম্ভব কথা। তবে ইসলামী ব্যাংক গুলোতে হতেও পারে। বিকল্প অপশন থাকলে ব্যাংকে চাকরি না করাই ভালো সতর্কতার জন্য।

আরো পড়ুন- মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলামীক ব্যাংকিংইসলামীক ব্যাংকিং সম্পর্কে আরো দেখুন
হোমে যানbankline
ADVERTISEMENT

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *