ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার ও কি কি বিস্তারিত দেখুন
ব্যাংক গুলো তাদের কাস্টমারদের প্রয়োজন অনুযায়ি Bank Account সুবিধা ভাগ করে ভিন্ন ভিন্ন একাউন্ট চালু করে। এতে করে কাস্টমারের চাহিদা পূরণে ব্যাংকের যেমন সুবিধা হয় তেমনি কাস্টমারও আরো ভালো সার্ভিস উপভোগ করতে পারে।
একজন সাধারণ গ্রাহকের টাকা জমানোর জন্য যে একাউন্ট সুবিধা প্রয়োজন হয়, তা নিশ্চই একজন ব্যবসায়ির প্রয়োজনিয় একাউন্ট সুবিধা থেকে ভিন্ন হবে। এমনি প্রয়োজন বিবেচনা করে Bank Account কে বিভিন্ন প্রকারে ভাগ করা হয়ে থাকে। ব্যাংকের এই হিসাব গুলো হয়ে থাকে যেমন: সেভিংস, কারেন্ট, ইত্যাদি।
যাই হোক, এই পোস্টে আমরা দেখবো ব্যাংক একাউন্ট বলতে কি বুঝায়, ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার ও কি কি, ব্যাংকে সর্বোনিন্ম ও সর্বোচ্চ কতো টাকা রাখা যায়, এমনি আরো অনেক প্রশ্ন।
Table of Contents
ব্যাংক একাউন্ট বলতে কি বুঝায়?
ব্যাংক হল একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা আর্থিক লেনদেন পরিচালনায় একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এটি আমাদের অর্থের তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে কাজ করে, বিভিন্ন ধরণের সেবা প্রদান করে, যেমন আমানত সংগ্রহ বা গ্রাহকের নিজস্ব আমানত উত্তোলনের সুবিধা৷
আরো পড়ুন- ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার ও কি কি?
ব্যাংক ভেদে হয়তো বিভিন্ন ধরণের একাউন্ট বা হিসাব দেখা গেলেও ব্যাংক হিসাব প্রধানত চার প্রকার। এই চার ধরণের একাউন্টকে ব্যাংক কাস্টমারের সুবিধা অনুযায়ি আরো বিভিন্ন প্রোডাক্ট হিসেবে চালু করে থাকে। এই চার প্রকার একাউন্ট গুলো হলো:
- সেভিংস একাউন্ট বা সঞ্চয়ি হিসাব,
- কারেন্ট একাউন্ট বা চলতি হিসাব,
- রিকারিং ডিপোজিট একাউন্ট বা পুনর্নবীকরণ জমা হিসাব,
- ফিক্সস ডিপোজিট একাউন্ট বা স্থায়ি আমানত হিসাব।
আরো পড়ুন- অনলাইন ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
কার জন্য কোন একাউন্ট?
সঞ্চয়ি হিসাব প্রধানত কে খুলে থাকে?
সঞ্চয়ি হিসাব বা সেভিংস একাউন্ট সচরাচর যেকেউ ব্যাংকে টাকা জমা রাখার জন্য খুলতে পারে। এই একাউন্ট একজন ব্যাক্তি খোলার পাশাপাশি চাইলে একাধিক ব্যাক্তি মিলে যৌথ একাউন্ট করতে পারেন আর স্টুডেন্টরা স্টুডেন্ট একাউন্ট করতে পারেন। একাউন্ট সঞ্চয়ি হলেও গ্রাহক এখানে লেনদেন করার সুযোগ পান। এ একাউন্টে গ্রাহককে অল্প পরিমাণে লাভ বা সুদ দেয়া হয়।
যাদের ১৮ বছর বয়স হয়েছে শুধু তারাই নিজের এই একাউন্ট খুলতে পারেন। তবে এর নিচে কেউ খুলতে চাইলে তাকে তার অবিভাবকের অধিনে একাউন্ট খুলতে হবে। এই একাউন্ট খুলার জন্য নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হয়, যা কাস্টমারকে অবশ্যই সরবরাহ করতে হবে।
আরো পড়ুন- অনলাইন ব্যাংকিং
চলতি হিসাব প্রধানত কে খুলে থাকে?
কারেন্ট একাউন্ট বা চলতি হিসাব প্রধানত ব্যবসায়িরা খুলে থাকেন। ব্যবসায়িদের সাধারণত অনেক বেশি লেনদেন হয়ে থাকে। তাই তারা এই একাউন্টে যেকোনো সময় বড় আকারের লেনদেনও করতে পারেন। এ একাউন্টের কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে না। আর এই একাউন্টে সুদ দেয়া হয় না এবং একাউন্টের জন্য এক্সট্রা চার্জ দিতে হয় গ্রাহককে।
এই একাউন্ট করার জন্য চলতি হিসাবের গ্রাহককে বেশ কিছু কাগজপত্র জমা দেয়ার পাশাপাশি তার ট্রেড লাইসেন্সও জমা দিতে হয়।
রিকারিং ডিপোজিট একাউন্ট
রিকারিং ডিপোজিট একাউন্ট বা পুনর্নবীকরণ জমা হিসাব মূলত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ মাসিক কিস্তিতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য উচ্চ সুদের বীপরিতে জমা করা হয়। এ হিসাবের বিভিন্ন ধরণের মেয়াদ হয়, এবং লাভের পরিমাণ ও ব্যাংক ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়।
ফিক্সস ডিপোজিট একাউন্ট
ফিক্সস ডিপোজিট একাউন্ট, FDR বা স্থায়ি আমানত হিসাব মূলত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ যা জমা দেয়ার পর থেকে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত উত্তোলন করা যায় না।
তবে আমানতকারী চাইলে পেনাল্টি পরিষোধ করে অনির্দিষ্ট কালের জন্য নির্দিষ্ট আমানত বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করতে পারেন। এই হিসাবে আমানতকারী তার জমানো অর্থের উপর একটি উচ্চ সুদ পেয়ে থাকেন।
আরো পড়ুন- ফিক্সড ডিপোজিট করার জন্য কোন ব্যাংক সবচেয়ে ভাল
ব্যাংক একাউন্টে সর্বনিম্ন কত টাকা রাখতে হয়?
এটি মূলত ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংকের ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম এবং তাদের একাউন্টের ধরণের উপর নির্ভর করে। কোনো কোনো ব্যাংকে সেভিংস একাউন্টের ক্ষেত্রে সর্বোনিন্ম যে লিমিট তা হয় ৫০০ আবার কোথাও ১০০০, এই টাকা টাকা আপনার একাউন্টে থাকতেই হবে।
কারেন্ট একাউন্টের ক্ষেত্রে তা ১০০০ থেকে চার বা পাঁচ হাজারও হতে পারে। অন্য দিকে স্টুডেন্ট একাউন্টের ক্ষেত্রে তা হতে পারে শুধু মাত্র ১০০ বা ২০০ টাকা।
আরো পড়ুন- ব্যাংক একাউন্ট ব্যালেন্স চেক করার নিয়ম
ব্যাংকে সর্বোচ্চ কত টাকা রাখা যায়?
বাংলাদেশে একটি Bank account -এ কতো টাকা রাখা যাবে এমন কোনো নির্দিষ্ট সর্বোচ্চ পরিমাণ নেই। অর্থাৎ আপনি কতো টাকা রাখবেন সেটি ব্যাংক কতৃক নির্দিষ্ট নয়। তবে টাকা রাখার বিষয়টি যদি হয় টাকা জমা করার, তাহলে কিছু বিষয় আপনার মাথায় রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক একটি একক লেনদেনে নগদ উত্তোলন এবং জমার পরিমাণের উপর কিছু সীমা আরোপ করে। যেমন, কোনো এক ব্যাক্তির টাকার এমাউন্ট বেশি তোলার অনুমতি নেই। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিদিন ১,০০,০০০ টাকা নগদ তোলা অনুমতি আছে। এর থেকে বেশি তুলতে হলে ব্যাংককে আগেই তা অবগত করতে হবে।
টাকা নগদ জমার ক্ষেত্রে ১০,০০,০০০ বা তার বেশি হলে তখন টাকার উৎসের ডকুমেন্টেশন ব্যাংকে জমা দিতে হবে। আপনার হিসাবের লেনদেনে যদি সন্দেহজনক কিছু থাকে, সেটি ১ টাকার লেনদেন হলেও তা শাখা বাংলাদেশ ব্যাংককে আলাদা ভাবে রিপোর্ট করবে ব্যাংকগুলো এবং লেনদেনের সমর্থনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপনার নিকট চাইবে।
এই লেনদেন হিসাবের তথ্য পরবর্তী মাসের ২১ তারিখের মধ্যে শাখাকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বরাবরে পাঠাতে হবে। একে নগদ লেনদেন রিপোর্ট বলে।
সামগ্রিকভাবে, বাংলাদেশে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সর্বোচ্চ এমাউন্ট রাখা যেতে পারে এমন কোনও নির্দিষ্ট সর্বোচ্চ লিমিট নেই। তবে বড় লেনদেন বা ব্যালেন্সের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হতে পারে।
আরো পড়ুন- বাংলাদেশে কোন ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ জেনে নিন
সেভিংস একাউন্ট কারেন্ট একাউন্ট পরিবর্তন করা কি সম্ভব?
না, আপনি সেভিংস একাউন্টকে কারেন্ট একাউন্টে পরিবর্তন করতে পারবেন না। সেভিংস এবং কারেন্ট একাউন্ট দুটি ভিন্ন ধরণের একাউন্ট। এদের সুবিধাগুলোও ভিন্ন ভিন্ন।
আপনার যদি সেভিংস একাউন্টকে কারেন্ট একাউন্টে পরিবর্তন করার দরকার হয়ে থাকে তবে আপনি যা করতে পারেন তা হলো, আপনি নতুন করে একটি কারেন্ট একাউন্ট খুলতে পারবেন প্রয়োজনিয় ডকুমেন্টস সাবমিট করার মাধ্যমে।
শেষকথা
আপনার প্রয়োজন ভেদে আপনি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবেন। ব্যাংক কাস্টমারের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার একাউন্ট খোলার সুবিধা রাখে।
আপনি টাকা সেভ করতে চাইলে সেভিংস একাউন্ট এবং আপনি টাকা যদি চালাতে চান মানে ব্যবসা করতে চান তাহলে চলতি একাউন্ট। এভাবেই আপনি বাছাই করতে পারবেন আপনার জন্য কোন একাউন্ট।
আরো পড়ুন
- ব্যাংক একাউন্ট ট্রান্সফার করার নিয়ম
- এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম
- জন্ম নিবন্ধন দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
- ব্যাংক এবং এনজিও এর মধ্যে পার্থক্য
- ব্যাংক একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম