বিদেশ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম
এই পোস্টে বিদেশ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনি এখান থেকে উপকৃত হবেন।
বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর যে নিয়ম গুলো আছে, এর মধ্যে সহজ একটি হচ্ছে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম। এই ব্যাংক সকল প্রবাসীদের উপার্জিত অর্থ সহজে এবং বৈধ উপায়ে দেশে আনার সুযোগ করে দেয়। আপনিও যদি একজন প্রবাসী হয়ে থাকেন তবে আপনিও এই সুবিধা নিতে পারবেন।
তবে আপনি যদি বিদেশ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম না যেনে থাকেন, তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। আজকের এই পোস্টে আপনার সুবিধার্থে বিদেশ থেকে Dutch Bangla Bank এ টাকা পাঠানোর নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
এখানে আপনি জানতে পারবেন বিদেশ থেকে দেশে টাকা পাঠাতে হলে কি করতে হবে এবং কোথায় যেতে হবে। এছাড়াও যেসকল স্থান থেকে আপনি টাকা ট্রান্সফার করতে পারবেন, তাদের একটি লিস্ট নিচে দেয়া থাকবে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
Table of Contents
বিদেশ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম
বিদেশ থেকে খুব সহজে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠনোর নিয়ম অনুসরণ দেশে প্রিয়জনের নিকট টাকা পাঠানো যায়। সরাসরি টাকা পাঠানো যাবে প্রিয়জনের ব্যাংক একাউন্টে। এর জন্য আপনাকে আপনার নিকটস্থ এক্সচেইন্জ হাউজে যেতে হবে। সেখানে আপনার রিসিভারের কিছু তথ্য দেয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার টাকা দেশে সেন্ড করতে পারবেন।
তবে আপনি যাকে টাকা পাঠাবেন, তার একটি ব্যাংক একাউন্ট ডাচ বাংলা ব্যাংকে থাকতে হবে। ডাচ বাংলার স্টুডেন্ট একাউন্টেও টাকা আনা যাবে। না থাকলে একটি একাউন্ট করে নিতে হবে। এটি ছাড়া লেনদেন করা যাবে না। কারণ একাউন্ট না থাকলে আপনি টাকা পাঠাবেন কোথায়? একাউন্ট করার বিষয়ে তথ্য পেতে ভিজিট করুন ডাচ বাংলা ব্যাংক।
একাউন্ট থাকলে বা একাউন্ট খোলা সম্পন্ন হলে আপনি আপনার রিসিভার থেকে সেই একাউন্টের নাম্বার সংগ্রহ করে নিন। সেই সাথে আরো কিছু জিনিস সংগ্রহ করুন, যেমন: আপনার রিসিভারের নাম, অর্থাৎ যে নাম তিনি ব্যাংকে ব্যবহার করেছেন সেই নাম। নাম দেয়ার সময় খেয়াল রাখবেন যেন কোনো ভুল না হয়।
সেই সাথে আরো লাগবে যে ব্র্যাঞ্চে আপনার রিসিভারের একাউন্ট আছে সেই ব্র্যাঞ্চের নাম এবং ব্র্যাঞ্চ কোড। এগুলো সংগ্রহ করে নিন একদম নির্ভুল ভাবে, যাতে কোনো সমস্যায় না পড়তে হয়।
তথ্য নির্ভুল ভাবে দিতে হবে কারণ কিছু ভুল হলে আপনার ট্রান্জেকশন সফল নাও হতে পারে, অথবা ট্রান্জেকশন হোল্ডও হয়ে যেতে পারে। তাই এই বিষয়ে সাবধান হওয়া জরুরি।
অনুমদিত এক্সচেইন্জ হাউজের সাথে লেনদেন সম্পন্ন হওয়ার পর তারা আপনাকে একটি টোকেন দিবে। এই টোকেনটি আপনি সংগ্রহ করে রাখবেন, যাতে কোনো প্রয়োজনে তা ব্যবহার করতে পারেন।
আরো পড়ুন- বিদেশ থেকে অগ্রণী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম
টাকা পাঠাতে যেসকল তথ্য দরকার হবে
১. রিসিভারের ডিবিবিএল একাউন্ট |
২. রিসিভারের পুরো নাম |
৩. একাউন্ট যে শাখায় খোলা, সে শাখার নাম |
৪. সেই শাখার কোড, মানে ব্র্যাঞ্চ কোড |
ডাচ বাংলা ব্যাংক অনুমোদিত এক্সচেঞ্জ হাউজ গুলোর তালিকা
বিদেশ থেকে সরাসরি দেশে প্রিয়জনের কাছে টাকা পাঠাতে পারবেন ডাচ বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে। আর ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠাতে হলে আপনার নিকটস্থ এক্সচেঞ্জ হাউজ, যেগুলো ডাচ বাংলা দ্বারা অনুমোদিত, সেগুলো থেকে আপনার টাকা পাঠাতে হবে। তাই আপনার জেনে নেয়া দরকার যে কোন কোন এক্সচেঞ্জ হাউজ অনুমোদিত।
অনুমোদিত এক্সচেঞ্জ হাউজ গুলোর তালিকা:
- ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফার।
- ইউ.এ.ই এক্সচেঞ্জ সেন্টার এল.এল.সি।
- আল আনসারী এক্সচেঞ্জ এল.এল.সি, ইউ.এ.ই।
- এক্সপ্রেস মানি ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস।
- চেঞ্জ এক্সচেঞ্জ কোং, বাহরাইন।
- ট্রান্সফাস্ট রেমিটেন্স এল.এল.সি।
- ইনস্ট্যান্ট ক্যাশ।
- প্লাসিড এক্সপ্রেস।
- মারকেনট্রেড এশিয়া সেন্ডিরিয়ান বেরহাদ।
- প্রভু মানি ট্রান্সফার।
- রিয়া ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইউ.এস.এ।
- বিএফসি এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (ই.জেড.রেমিট)।
- হাবিব এক্সচেঞ্জ কোম্পানি।
- লুলু ইন্টারন্যাশনাল এক্সচেঞ্জ এল.এল.সি।
- ওরিয়েন্ট এক্সচেঞ্জ কোম্পানি এল.এল.সি।
- ওয়াল স্ট্রিট এক্সচেঞ্জ সেন্টার এল.এল.সি।
- আল-ফালাহ এক্সচেঞ্জ কোম্পানি।
- আল-আহালিয়া এক্সচেঞ্জ ব্যুরো কাতার।
- লারি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি।
- ডলার এক্সচেঞ্জ কোং লিঃ ইউ.এস.এ।
- আই.এম.ই রেমিট ইনকরপরেশন।
- স্ট্যান্ডার্ড এক্সপ্রেস।
- ওয়াল স্ট্রিট ফাইনান্স এল.এল.সি।
- ইউ.এস মানি এক্সপ্রেস কোম্পানি ওমান।
- আল জাদিদ এক্সচেঞ্জ এল.এল.সি।
- ওমান ইন্টারন্যাশনাল এক্সচেঞ্জ অস্ট্রেলিয়া।
- এস.বি.এক্স মানি প্রাইভেট লিমিটেড।
- আই.এম.ই(এম) সেন্ডিরিয়ান বেরহাদ।
- ব্যাংক আল বিলাদ জাপান।
- ইস্ট বেঙ্গল এক্সচেঞ্জ ইনকরপরেশন।
- হ্যালো পয়সা প্রাইভেট লিমিটেড ইতালি।
- ন্যাশনাল এক্সচেঞ্জ।
বিশ্বের অনেকগুলো নামি দামি প্রতিষ্ঠানের সাথে ডাচ বাংলা ব্যাংকের চুক্তি আছে। সুতরাং আপনি খুব সহজেই আপনার আশে পাশে এমন একটি এক্সচেঞ্জ হাউজ পেয়ে যাবেন। এগুলোর মধ্যে অন্তত একটি আপনার খুজে পেতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
লিস্টটি দেখে আপনার আশে পাশে খোজ নিন। অথবা ইন্টারনেটের মাধ্যমেও আপনি তাদের খুজে পেতে পারেন। তাদের লোকেশন সার্চ করে সরাসরি তাদের অফিসেও চলে যেতে পারবেন।
অনুমোদিত এক্সচেঞ্জ হাউজে গিয়ে যেভাবে টাকা পাঠাতে পারবেন
ধাপ ১. অর্থ হস্তান্তরের মাধ্যমগুলো সিলেক্ট করুন
বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ডাচ ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তরের বিভিন্ন অনুমোদিত এক্সচেঞ্জ হাউজ রয়েছে। আপনি চাইলে ব্যাংক ট্রান্সফার, অনলাইন মানি ট্রান্সফার পরিষেবা, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন বা মানিগ্রামের মতো মাধ্যম গুলো ছাড়াও অর্থ স্থানান্তরের সার্ভিসগুলো ব্যবহার করতে পারেন৷ সুতরাং যেকোনো একটি সিলেক্ট করুন।
ধাপ ২. মাধ্যম গুলোর সার্ভিসের তুলনা করুন
আপনার পাওয়া বিভিন্ন মাধ্যম গুলোর ফি কেমন এবং এদের সার্ভিস কেমন তা আগে তুলনা করে নিন। এতে আপনি হয়তো সবচেয়ে সাশ্রয়ি অপশনটি খুজে পাবেন আপনার অর্থ হস্তান্তরের জন্য।
ধাপ ৩. মাধ্যম নির্বাচন হলে স্থানান্তর শুরু করুন
আপনার অপশন নির্বাচন এবং লেনদেন চার্জ ও সেবা সমূহ যাচাই করার পরে আপনি অর্থ স্থানান্তর শুরু করতে পারেন। সার্ভিস পেতে আপনাকে নির্দিষ্ট পয়েন্টে যেতে হতে পারে, অথবা তাদের অনলাইন সেবা নিয়ে সার্ভিস প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারেন। হস্তান্তরের জন্য সার্ভিস প্রোভাইডার কে সঠিক তথ্য প্রদান নিশ্চিত করুন এবং তাদের দেয়া নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন।
অর্থ স্থানান্তরের প্রমাণ হিসাবে আপনাকে সার্ভিস প্রোভাইডার একটি লেনদেন নম্বর বা রসিদ প্রদান করতে পারেন। তা সংরক্ষণ করুন। এটি বিভিন্ন প্রয়োজনে কাজে লাগতে পারে। যেমন দেশে অর্থ গ্রহণ করা সময় দরকার হতে পারে বা পরে কোনো কারণে টাকা ফেরত নেয়ার দরকার হলে কাজে লাগবে।
ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর সুবিধা
আপনি যদি বিদেশ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠান তবে এখানে আপনি কিছু সুবিধা পাবেন। সচরাচর অন্যান্য ব্যাংক গুলোও তাদের পলিসি অনুযায়ি বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা দিয়ে থাকেন। তেমনি ডাচ বাংলা ব্যাংকও তাদের গ্রাহকদের কিছু সুবিধা দিয়ে থাকে। সেই সুবিধা গুলো কি কি, আসুন তা দেখে নেয়া যাক।
- সহজে কিছু স্টেপ ফলো করে দেশে টাকা পাঠানো যায়।
- এটি সম্পূর্ণ বৈধ একটি প্রকৃয়া।
- বৈধ প্রকৃয়ায় টাকা পাঠানোর কারণে সরকার কর্তৃক ঘোষিত প্রনোদনা পাওয়া যায়।
- টাকা পাঠালে তা সরাসরি রিসিভারের একাউন্টে জমা হয়।
- এ প্রকৃয়ায় টাকা পাঠানোর কোনো ঝুকি নেই, যেমনটা হুন্ডি বা অন্য কিছুতে আছে।
হুন্ডি কি, সেখানে কিভাবে টাকা লেনদেন করে তা জানতে পড়তে পারেন হুন্ডি কি এবং হুন্ডি ব্যবসা কিভাবে করে।
ডাচ বাংলা ব্যাংক রেমিটেন্স নিয়ে শেষকথা
আপনি যদি প্রবাসী হোন তবে আপনার কষ্ট করে উপার্জিত অর্থ চেষ্টা করবেন সব সময় বৈধ পথে পাঠাতে। কেননা এতে করে আপনার যেমন সুবিধা থাকবে কিছু, ঠিক তেমনি দেশও আপনার দ্বারা উপকৃত হবে।
আপনার সুবিধা হলো এ সিস্টেমটি বৈধ এবং রিস্ক ফ্রি। আপনার অর্থ হারানোর ভয় এখানে নেই। সম্পূর্ণ নিরাপদ একটি প্রকৃয়ায় আপনার প্রিয়জনের কাছে আপনার টাকা পৌছে যাবে।
নিরাপদে আপনার টাকা প্রিয়জনের কাছে পৌছাতে ডাচ বাংলা ব্যাংক আপনার কাজটিকে সহজ করেছে। অল্প কিছু ধাপ অনুসরণ করেই এই লেনদেন সম্পন্ন করা যাচ্ছে খুব সহজে।
কোনো কারণে যদি কোনো সমস্যা হয়, যেমন ধরেন যদি আপনি আপনার রিসিভারের ইনফর্মেশন যদি ভুল দেন, তবে আপনার ট্রান্জেকশন হোল্ড হয়ে যাবে। ভয়ের কিছু নেই, আপনি সেই টাকা ব্যাক পাবেন।
যদিও এতে করে আপনার সময় নষ্ট হচ্ছে। তাই যখনই আপনি লেনদেন করবেন, তখনই চেষ্টা করবেন যেন আপনার দেয়া তথ্য ভুল না হয়। দরকার হলে রিচেক করবেন।
কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর
বিদেশ থেকে আপনি দেশে সর্বোচ্চ কতো টাকা পাঠাতে পারবেন তার কোনো লিমিটেশন নেই। তবে আপনি যদি একবারে অনেক বড়ো এমাউন্ট পাঠান তবে আপনার আয়ের পক্ষে বা আপনার টাকার সোর্স এর সাথে সম্পর্কিত কোনো ডকুমেন্টস দিতে হবে।
হ্যাঁ, দেয়া যাবে। আপনি যে দেশে আছেন সে দেশের ব্যাংকে গিয়ে ওয়ার ট্রান্সফার বা অন্য কোনো নিয়মে দেশে ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠাতে পারবেন।
বাংলাদেশে যেকোনো ব্যাংকেই আপনি একদম ফ্রিতে টাকা পাঠাতে পারবেন। এখানে আপনার কাছ থেকে কোনো ফি কাটবে না। আরো একটি ভালো বিষয় হলো আপনি যখন দেশে ডাচ বাংলা বা অন্য কোনো ব্যাংকে টাকা পাঠাবেন তখন ব্যাংক থেকে আপনি একটি নির্দিষ্ট এমাউন্টের টাকা বোনাসও পাবেন।
হ্যাঁ যাবে। আপনি কোনো একটি অনুমদিত মানি ট্রান্সফার এজেন্সির কাছে গিয়ে যদি দেশে ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠানোর ব্যাপারে বলেন তবে তারা আপনাকে সহযোগিতা করবে কিভাবে আপনি এটি করতে পারবেন তা নিয়ে।
রেমিটেন্স রিসিভ নিয়ে আরো কিছু পোস্ট দেখতে পারেন
রেমিটেন্স নিয়ে আরো জানতে পড়ুন Remittance এই পোস্টি। হোম পেজে যেতে ক্লিক করুন bankline এ।