বিকাশ একাউন্ট বন্ধ হলে করনীয় দেখুন
আপনার বিকাশ একাউন্ট কি বন্ধ হয়ে গেছে? এই পোস্টে আপনি জানতে পারবেন যে বিকাশ একাউন্ট হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে করণিয় কি?
কাস্টমার সচরাচর বিকাশ একাউন্ট সাময়িক বন্ধের সমস্যায় পড়েন। কেননা বিকাশের বেশ কিছু বিষয় আছে যেগুলো করলে বিকাশ তৎক্ষনাত কাস্টমারের বিকাশ একাউন্টি সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেয়। এটি তারা মূলত তাদের কাস্টমারদের একাউন্টের সুরক্ষা দেয়ার জন্যই করে থাকে।
আমরা হয়তো আমাদের দৈনন্দিন জীবণে বহুল প্রয়োজনিয় এই bkash একাউন্টি কখনো বুঝে হোক বা না বুঝে এমন ভাবে ব্যবহার করে ফেলি যে পরে বিকাশ তা অস্বাভাবিক ভেবে বন্ধ করে দেয়।
এখন কথা হলো আপনিও যদি এই সমস্যার মুখোমুখি হন বা অলরেডি হয়েছেন তবে আপনার জেনে রাখা প্রয়োজন যে বিকাশ একাউন্ট বন্ধ হলে করনীয় কি, যা এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক।
Table of Contents
বিকাশ একাউন্ট বন্ধ হলে করনীয় (সংক্ষেপে)
বিকাশ একাউন্ট যদি বন্ধ হয়ে যায় তবে আপনাকে দ্রুত কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করতে হবে তা পূনরায় সচল করার জন্য। এসময় আপনার বিকাশ সংক্রান্ত কিছু প্রয়োজনিয় তথ্য সাথে রাখুন যেমন: এনআইডি কার্ড, বিকাশ ব্যালেন্সের তথ্য, ইত্যাদি। বিকাশ কাস্টমার কেয়ার থেকে আপনাকে আপনার একাউন্ট সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো জিঙ্গেস করা হবে যাতে করে তারা নিশ্চিত হতে পারে যে একাউন্টি আপনার। সব ঠিক থাকলে তারা আপনার একাউন্টি সচল করে দিবে।
বন্ধ বিকাশ একাউন্ট ফিরে পেতে প্রয়োজনিয় তথ্য সমূহ
- বিকাশ একাউন্টধারীর এনআইডি নাম্বার (দেখে নিন বিকাশ একাউন্ট কার নামে আছে)।
- একাউন্টধারীর পুরো নাম।
- তার জন্ম তারিখ।
- পিতার নাম।
- বিকাশের বর্তমান ব্যালেন্স (বিকাশে ব্যালেন্স দেখার নিয়ম)।
- শেষ লেনদেনের পরিমাণ।
যেকারণে বিকাশ একাউন্ট বন্ধ হতে পারে
যখনি বিকাশ মনে করে যে একটি একাউন্ট থেকে অস্বাভাবিক কোনো কার্যক্রম বা লেনদেন হচ্ছে, তখনি বিকাশ থেকে ওই একাউন্টি বন্ধ করে দেয়। এই একাউন্ট বন্ধ করা হয় সাময়িকের জন্য। মূলত কাস্টমারের নিরাপত্তার জন্যই এই ব্যবস্থা। এতে কাস্টমারের কিছুটা ভোগান্তি হলেও তা তার একাউন্ট সেইফ রাখার জন্য ভালো।
এমন অনেক কাজ আছে যা কাস্টমার বুঝে বা না বুঝে করে থাকেন। হয়তো তিনি ভাবছেন যে এটি আর এমন কি। কিন্তু এতে তার একাউন্ট বন্ধ হতে পারে তা না জানায় কাস্টমার এধরণের কাজ গুলো করে থাকে। তাই নিচ থেকে জেনে নিন কোন কোন কারণে আপনার একাউন্ট বন্ধ হতে পারে।
- অস্বাভাবিক লেনদেনের জন্য।
- পরপর তিন বার ভুল পিন দিয়ে বিকাশে ঢুকার চেষ্টা করলে।
- একটি নাম্বারে অল্প সময়ের ব্যবধানে একাধিক বার সেন্ড মানি করলে। যেমন ১৫ মিনিটের ব্যবধানে।
এছাড়া আরো কিছু কারণ থাকতে পারে, যেকারণে আপনার একাউন্টি বিকাশ বন্ধ করে দিতে পারে।
#১. অস্বাভাবিক লেনদেনে বিকাশ একাউন্ট বন্ধ হতে পারে
এটি অনেক সময় দেখা যায় যে যদি বিকাশ একাউন্টি ফ্রডের শিকার হয় তবে তারা কিছু অস্বাভাবিক লেনদেন করার চেষ্টা করে। তখন বিকাশ একাউন্টির সুরক্ষার জন্য একাউন্ট বন্ধ করে দেয়। তাই দেখে নিন আপনার বিকাশ একাউন্ট হ্যাক হলে করণিয় কি তা।
#২. পরপর তিন বার ভুল পিন দিলে বিকাশ একাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে
আমরা অনেক সময় বিকাশের পিন ভুলে গেলে তা ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করার চেষ্টা করি। তবে এটা দুবারের বেশি করা উচিত নয়। কেননা যদি পর পর তিন বার আপনি ভুল পিন দিয়ে ঢুকার চেষ্টা করেন তবে বিকাশ সেই একাউন্টি বন্ধ করে দিবে। পিন ভুলে গেলে করণিয় কি তা জানতে পড়ুন বিকাশের পিন ভুলে গেলে করণীয়।
#৩. অল্প সময়ের ব্যবধানে এক নাম্বারে একাধিক বার সেন্ড মানি করলে বন্ধ হতে পারে
আপনি যদি ১৫ মিনিটের মধ্যে একই নাম্বারে একাধিক বার সেন্ড মানি করেন তবে আপনার একাউন্টি বন্ধ হতে পারে। এই সময়ের মধ্যে একই নাম্বারে একাধিক বার রিচার্জ করলেও আপনার নাম্বারটি বন্ধ হতে পারে।
বিকাশ একাউন্ট বন্ধ হলে যা করবেন
যেকোনো কারণে যদি আপনার বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয় তবে আপনি তা একাধিক উপায়ে আবার চালু করতে পারবেন। উপায় গুলো হলো:
- কাস্টমার কেয়ারে কল করে।
- বিকাশের লাইভ চ্যাটে যোগাযোগ করে।
- কাস্টমার কেয়ার ভিজিট করে।
কাস্টমার কেয়ারে কল করে বন্ধ বিকাশ একাউন্ট চালু করার নিয়ম
আপনার বিকাশ একাউন্ট যদি কোনো কারণে বন্ধ হয়ে যায় তবে আপনার কাজ হবে প্রথমেই বিকাশের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করা কল করার মাধ্যমে। এখানে তারা আপনার কাছ থেকে কিছু তথ্য চাইবে। সেগুলো সঠিক ভাবে দিন। তারপর তারা আপনার একাউন্ট চালু করতে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা নিবে। নিচে পর্যায়ক্রমে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
- প্রথমে কল করুন বিকাশ কাস্টমার সাপোর্ট নম্বর- 16247 তে।
- তারপর বাংলায় অনুসন্ধানের জন্য ১ চাপুন।
- এরপর ০ চাপুর বিকাশ কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধির সাথে কথা বলতে।
- কল ধরলে তাদের আপনার সমস্যা সম্পর্কে বলুন যে আপনার একাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে।
- সমস্যা শুনে তারা তা ঠিক করে দিতে আপনাকে কিছু তথ্য জিঙ্গেস করবে, যেমন আপনার নাম, আপনার ভোটার কার্ড নাম্বার, আপনার বিকাশে বর্তমান ব্যালেন্স কতো, ইত্যাদি।।
- আপনি যদি সব উত্তর ঠিক ঠাক দিতে পারেন তবে কাস্টমার কেয়ার থেকে আপনার একাউন্ট সচল করে দেয়া হবে।
- আপনার একাউন্ট সচল হওয়ার সাথে সাথে আপনার মোবাইলে একটি এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।
বিকাশের লাইভ চ্যাটে যোগাযোগ করে একাউন্ট চালু করার নিয়ম
বিকাশের ওয়েব সাইটে লাইভ চ্যাট অপশনে আপনি আপনার যেকোনো সমস্যা সম্পর্কে বিকাশের কোনো এজেন্টের সাথে কথা বলতে পারবেন। এখানে আপনার সমস্যা সম্পর্কে তাদের জানান, যে আপনার একাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে।
তারা আপনার সমস্যা অনুযায়ি একটি অভিযোগ গ্রহণ করবে। তারপর একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা আপনার সমস্যাটি সমাধান করার জন্য আপনাকে কল করবে।
কাস্টমার কেয়ারে ভিজিট একাউন্ট চালু করার নিয়ম
অন্য উপায় গুলো যদি আপনার কাছে কঠিন মনে হয় তবে আপনি আপনার নিকটস্থ বিকাশ কাস্টমাার কেয়ারে চলে যেতে পারেন। সেখানে গিয়ে আপনি আপনার সমস্যা সম্পর্কে বললে তারা আপনার সমস্যা সমাধান করে দিবে।
তবে কাস্টমার কেয়ার ভিজিট করার সময় আপনার ডকুমেন্টস যেমন এনআইডি কার্ড অবশ্যই সাথে করে নিয়ে যাবেন। আর যদি একাউন্ট অন্য কারো নামে হয়ে থাকে তবে আপনি একা গিয়ে তা সমাধান করতে পারবেন না। যার একাউন্ট তাকেই যেতে হবে। প্রয়োজনে আপনি তার সাথে যেতে পারেন।
আর যদি আপনার জানা না থাকে যে একাউন্ট কার নামে করা, তবে আপনি একটি নিয়ম ফলো করে তা জেনে নিতে পারবেন। কাস্টমার কেয়ারে কল করে আপনি এটি জানতে পারবেন না। কারণ তারা তা বলবে না। আপনার যা করতে হবে তা হলো আপনার সেলফিনের সহযোগিতা নিতে হবে।
আপনার যদি সেলফিন একাউন্ট করা থাকে তবে সেখান থেকে খুব সহজে আপনার বিকাশ কার নামে খোলা তা বের করে ফেলতে পারবেন। আর যদি আপনার কোনো সেলফিন একাউন্ট না করা থাকে তবে কোনো সমস্যা নেই। আপনি তা ঘরে বসেই খুব সহজে প্লে-স্টোর থেকে ডাউনলোড করে একাউন্ট করে নিতে পারবেন।
সেলফিনে আপনি যদি আপনার বিকাশ একাউন্টে ফান্ড ট্রান্সফার করেন, তবে সেখানে আপনার মোবাইল নাম্বার দেয়ার পরের ধাপে আপনার পুরো নাম প্রদর্শিত হবে। এখানেই আসলে বুঝা যায় যে ওই নাম্বারটিতে কার নামে বিকাশ একাউন্ট খোলা আছে। এভাবে আপনি আপনার সিমে কার নামে বিকাশ একাউন্ট করা তা জানতে পারবেন।
শেষকথা
বিকাশ একাউন্ট সচরাচর সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়। খুব বড় কোনো সমস্যা না হলে পার্মানেন্টলি একাউন্ট বন্ধ করা হয় না। আর এই সাময়িক বন্ধ কাস্টমারের একাউন্টের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে করা হয়ে থাকে। যেকোনো অস্বাভাবিক লেনদেনের ক্ষেত্রে কাস্টমারের একাউন্টকে সুরক্ষিত রাখতে বিকাশ এই পদক্ষেপ নিয়ে থাকে।
আপনার একাউন্ট যদি সাময়িক বন্ধের শিকার হয় তবে তা খুব বেশি একটা চিন্তার বিষয় নয়। এটি ঠিক করতে আপনি বিকাশ হেল্প লাইনে যোগাযোগ করুন। তারা আপনার সমস্যার সমাধান করে দিবে।
তাদের হেল্প লাইন নাম্বারে কল করলে তারা আপনার সাথে সরাসরি কথা বলবে। তখন আপনি আপনার সমস্যার কথা তাদের বলুন। এখানে একাউন্ট যে আপনার তা নিশ্চিত করার জন্য তারা আপনাকে একাউন্ট রিলেটেড কিছু প্রশ্ন করবে। এগুলোর যথাযথ উত্তর দিন। তারপর তারা আপনার সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা নিবে।
প্রশ্ন এবং উত্তর
হ্যাঁ, আপনি তা ঘরে বসেই ঠিক করতে পারবেন। বিকাশ সচরাচর সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে থাকে। আপনার একাউন্টি যদি সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে থাকে তবে আপনি হেল্প লাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে এবং আপনার কিছু তথ্য তাদের দেয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার একাউন্টি ঠিক করে নিতে পারবেন।
আপনি নরমালি বলুন যে লাস্ট কতো টাকা লেনদেন হয়েছে তা আপনার মনে নেই। অনেক সময় দির্ঘদিন লেনদেন না করার কারণে এমনটা হতেই পারে। তখন এজেন্ট আপনাকে অন্য কোনো তথ্য জিঙ্গেস করবে।
কিছু প্রশ্ন যেমন আপনার এনআইডি কার্ড নাম্বার, বার্থ ডেইট এগুলো তো আপনার কাছে থাকবেই। তাই এসব তথ্য সঠিক ভাবে দিন। যেগুলো আপনার মনে নেই যেমন বর্তমান ব্যালেন্স বা লাস্ট ট্রান্জেকশন ইত্যাদি, এগুলো মনে নেই বলবেন। আশা করি সমস্যা হবে না।
হ্যাঁ আছে। আপনি যদি বিকাশের কাস্টমার কেয়ারে কল করেন তবে তারা কিন্তু আপনাকে এই ব্যাপারে কোনো তথ্য দিবে না। এই তথ্য আপনাকে অন্য কোনো মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করতে হবে। এর জন্য আছে ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন বা ব্র্যাক ব্যাংকের আস্থা এপ। সেখানে ফান্ড ট্রান্সফার করলে আপনি আপনার সিমে কার নামে একাউন্ট করা তার নাম সেখানে দেখতে পাবেন।
বিকাশ কাস্টমার কেয়ারের নাম্বারটি হলো 16247 ।
আপনি যদি আপনার বিকাশের পিন তিন বার ভুল দিয়ে থাকেন তবে আপনার একাউন্ট সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর তা ঠিক করতে হলে আপনাকে কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করতে হবে।
মূলত আপনার একাউন্টের নিরাপত্তার জন্য বিকাশ থেকে আপনাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হবে, যাতে করে তারা নিশ্চিত হতে পারে যে এই একাউন্টের মালিক আপনিই। এমনও হতে পারে অন্য কেউ কল করে আপনার একাউন্টের পিন পরিবর্তন করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন করার মাধ্যমে মূলত আপনার নিরাপত্তাই দেয়া হচ্ছে।
বিকাশের অন্যান্য পোস্ট গুলো পড়ুন
- বিকাশে বিদ্যুৎ বিল চেক ও পরিশোধ করার নিয়ম
- বিকাশ সিম হারিয়ে গেলে করণীয়
- বিকাশ থেকে রকেটে টাকা ট্রান্সফার করার নিয়ম
- বিদেশ থেকে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
- বিকাশ থেকে মোবাইল রিচার্জ করার নিয়ম
- বিকাশ অটো রিচার্জ বন্ধ করার নিয়ম
- বিকাশ থেকে ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম
- বিকাশ থেকে কার্ডে টাকা পাঠানোর নিয়ম