Credit Card নেয়ার ব্যাপারে ভাবছেন? তাহলে প্রথমে জেনে নিন ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা এবং অসুবিধা গুলো কি কি বা Credit card advantages and disadvantages, ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার কতো, ক্রেডিট কার্ডের বাৎসরিক চার্জ কতো, সহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আমি এই পোস্টে আলোচনা করেছি।
বিশ্ব ব্যাপি লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে Credit Card একটি অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম। বর্তমানে বিশ্ব ব্যাপি ২.৮ বিলিয়নেরও বেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার হচ্ছে। তবে ক্রডিট কার্ড সম্পর্কে অনেক ইউজারেরই পজেটিভ এবং একই সাথে নেগেটিভ ধারনা রয়েছে।
নেগেটিভ ধারনার কারনে অনেকেই কার্ড নেয়ার জন্য এলিজেবল হলেও তারা কার্ড নিতে চান না। অন্য দিকে অনেক ইউজারই ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা এবং অসুবিধা গুলো জেনে নিয়ে নিয়মিত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে এর সুবিধা গুলো যথাযথ ভাবে উপভোগ করছেন তাদের প্রয়োজন অনুযায়ি।
Table of Contents
ক্রেডিট কার্ড
এটি এমন একটি প্লাস্টিক কার্ড যা একটি বিশেষ ধরণের পরিষোধ ব্যবস্থার অংশ। এটি ব্যাংক কতৃক তাদের কাস্টমারদের চাহিদা অনুযায়ি ইসু করা হয়। যা ব্যবহার করে গ্রাহক একটি নির্দিষ্ট সিমা অনুযায়ি তাদের নিজেদের ব্যবহারের জন্য পন্য বা সেবা ক্রয় করতে পারে। এটি মূলত এক প্রকার লোন, যা কার্ড ব্যবহারকারীকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবার পরিষোধ করতে হয়।
বর্তমানে বহু শপিং মলে শপিং করার সময় এই কার্ড ব্যবহার করে কেনা কাটা করতে দেখা যায়। আবার অনলাইন ট্রান্জেকশনে এই কার্ডের ব্যবহার বর্তমানে উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। এছাড়া এই কার্ডের ডুয়েল কারেন্সি সুবিধা নিলে তা ইন্টারন্যাশনাল লেনদেনেও ব্যবহার করা যায়। এর এসব ফিচারের জন্য এই কার্ডটির ব্যবহার দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম
- ক্রেডিট কার্ড একটি নির্দিষ্ট লিমিটের মধ্যে আপনার প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন।
- আপনি যদি ওভার লিমিট খরচ করেন তাহলে আপনাকে এই অতিরিক্ত খরচের জন্য এক্সট্রা পেমেন্ট করতে হতে পারে।
- নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খরচ করা অর্থ রিটার্ন করে দিতে হবে যাতে যেকোনো পেনাল্টি হতে সেফ থাকা যায়।
- ক্রেডিট কার্ডের ইনফর্মেশনের ক্ষেত্রে একটু সতর্ক থাকবেন যেন যেকোনো অনাকাক্ষিত ঘটনা এরানো সম্ভব হয়।
এছাড়া আরো বেশ কিছু বিষয় নিচে এর সুবিধা অসুবিধা গুলো পড়ার সময় পেয়ে যাবেন।
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা এবং অসুবিধা
এই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের বেশ কিছু সুবিধা এবং একই সাথে কিছু অসুবিধাও থাকে, যা পর্যায়ক্রমে নিচে তুলে ধরা হলো।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা
#যথেষ্ট পরিষোধের সময় দেয়: ক্রডিট কার্ড থেকে লোন নিয়ে ১৫-৪৫ দিনের একটি গ্রেইছ পিরিওড পাওয়া যায় এ লোন পরিষোধ করার জন্য।
#ফ্রি মানি ব্যবহার করে ইনভেস্টমেন্ট করা যায়: অনেক ইউজারই এই লোন নিয়ে সল্প মেয়াদি বিভিন্ন ইনভেসমেন্টে বিনিয়োগ করে নির্দিষ্ট সময়ে সে টাকা আবার পরিষোধ করে দেয়। যদিও এখানে টাকার পরিষোধের সময় কম, তবুও ফ্রি মানি থেকে যা লাভ করা যায় তাই ভালো।
#EMI সুবিধা পাওয়া যায়: সব ক্রেডিট কার্ডই EMI সুবিধা দিয়ে থাকে। ইউজার এই সুবিধা ব্যবহার করে কোনো কিছু কিনার সময় তার খরচ ভাগ করে ফেলতে পারে। এই খরচ মাসিক কিস্তির মাধ্যমে পরিষোধ করতে পারে। যেমন কেউ যদি একটি ফ্রিজ কিনতে চান, তবে তার সেভিংস এর টাকা খরচ না করে মাসিক কিস্তির মাধ্যমে টাকা পরিষোধ করে তা কিনতে পারবেন।
#EMI লোনের চেয়ে বেশি সুবিধাজনক: EMI সুবিধা একটি লোন নেয়ার থেকে বেশি সুবিধাজনক। বেশিরভাগ ব্রান্ড এবং রিটেইলারই সেলস বুস্ট আপের জন্য জিরো ইন্টারেস্টের EMI সুবিধা দিয়ে থাকে। যেমন বাংলাদেশে স্যামসাং তাদের অফিসিয়াল ফোন কিনার ক্ষেত্রে ৩ থেকে আঠারো মাসের EMI সুবিধা দিয়ে থাকে।
#ক্রেডিট কার্ড পার্চেস সহজ: এছাড়া ক্রেডিট কার্ড পার্চেসে ইউজাররা খুব সহজে কার্ড ইশুয়ারের কিছু শর্ত পূরন করে খুব সহজেই EMI সুবিধা এবেইল করতে পারেন।
#ক্রডিট কার্ড তুলনামূলক সেইফ: ক্রডিট কার্ডকে ডেবিট কার্ডের তুলনায় বেশি সেইফ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ডেবিট কার্ডে যে কোনো কেনাকাটার ক্ষেত্রে সরাসরি ইউজারের ব্যাংক একাউন্ট হতে পে করা হয়। যার ফলে ডেবিড কার্ড ফ্রডের মাধ্যমে যে কোনো ট্রান্জেকশনে ইউজার সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অন্য দিকে ক্রেডিট কার্ড থেকে যে কোনো আনঅথরাইজড বা ফ্রডুলেন্ট ট্রানজেকশনের জন্য ইউজার দায়বদ্ধ থাকেন না। এ দায় ক্রেডিট কার্ড নেটওয়ার্ক প্রোভাইডার দের।
#ইউজারদের জন্য সিকিউরিটি সার্ভিস থাকে: ক্রেডিট কার্ড ইউজারদের সেফ রাখার জন্য ক্রেডিট কার্ড নেটওয়ার্ক প্রোভাইডার এবং ব্যাংক বিভিন্ন সিকিউরিটি সার্ভিস দিয়ে থাকে।
#রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং বেনিফিটস থাকে: এই কার্ড ব্যবহারের একটি আকর্ষনিয় বিষয় হচ্ছে রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং বেনিফিটস। কিছু নির্দিষ্ট শপ থেকে কেনাকাটা করে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে মূল্য পরিষোধ করলে দেয়া হবে কিছু পয়েন্ট। এই পয়েন্ট ব্যবহার করে কাস্টমার পরবর্তিতে বিশেষ কিছু উপহার পেতে পারে। যেমন: গিফ্ট কার্ড, ট্রাভেল প্যাকেজ ইত্যাদি।
#ইন্সুরেন্স সুবিধা থাকে: কার্ডের সাথে অনেক ব্যাংক ইন্সুরেন্স সুবিধা দিয়ে থাকে।
#ইন্টারন্যাশনালি এক্সেপ্টেড: যেকোনো ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্জেকশনের ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডের এক্সেপটেন্স রেট অনেক বেশি। যারা প্রায় বিদেশে যাত্রা করেন তাদের জন্য ক্রেডিট কার্ড বহণ করা তুলনা মূলক বেশি সুবিধাজনক। কেননা এই কার্ড ইসুয়ারদের বিস্তৃত নেটওয়ার্কের জন্য এই কার্ড গুলো অনেক দেশেই এক্সেপ্টেবল।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের অসুবিধা
#অপ্রয়োজনিয় কেনা কাটার সমস্যা: বাই নাও পে লেটার সুবিধার জন্য এই কার্ডের ব্যবহারকারীরা অনেক সময় অযথা শপিং করতে থাকে, যা পরে সমস্যার কারণ হতে পারে।
#ইন্টারেস্ট রেট বেশি: সাধারণ লোনের তুলনায় ক্রেডিট কার্ডের ইন্টারেস্ট রেট অনেক বেশি। যদি কোনো ইউজার সময় মতো অর্থ পরিষোধ করতে না পারে তবে তাকে তুলনা মূলক অনেক বেশি ইন্টারেস্ট চার্জ করা হয়।
#এটিএম থেকে অর্থ তুলতে চার্জ বেশি কাটে: ব্যাংক এই কার্ড গুলো দিয়ে এটিএম থেকে সরাসরি অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে মোটা অংকের টাকা ইন্টারেস্ট হিসেবে চার্জ করে।
#কিছু হিডেন ফি এবং টার্মস এন কন্ডিশন্স থাকে: সচরাচর কার্ডের সাথে কিছু হিডেন ফি এবং টার্মস এন কন্ডিশন্স থাকে যা ব্যাংক কাস্টমারকে প্রথমে জানাতে চায় না। যেমন: প্রসেসিং ফি, ইন্সুরেন্স ফি, এনুয়াল ফি, জিএসটি চার্জ, ফরেইন ট্রান্জেকশন চার্জ, মার্তআপ ফি, লেইট পেমেন্ট ফি, ক্যাশ উইথড্রয়াল ফি, ব্যালেন্স ট্রান্সফার ফি, পেপার স্টেটম্যান্ট ফি, এসএমএস ফি, ভ্যাট ইত্যাদি।
#ডিমেরিট পাওয়া ক্রেডিট হিস্ট্রির ঝামেলা: সঠিক সময়ে লোন পরিষোধ না করলে তা ক্রেডিট স্কোর কমিয়ে দেয় এবং এই রেকর্ড তার ক্রেডিট হিস্ট্রিতেও থেকে যায়। ভবিষ্যতে অন্য লোন নিতে গেলে এই হিস্ট্রি ইউজার কে ডিফল্টার হিসেবে দেখিয়ে লোন নেয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা করতে পারে।
ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার
২০২০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড এর ইন্টারেস্ট রেট ২০ শতাংশ ঠিক করে দেয়। যেখানে প্রচলিত লোনের ইন্টারেস্ট রেট মাত্র ৯ শতাংশ। অর্থাৎ কেউ যদি ক্রেডিট কার্ডের লোন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিষোধ করতে না পারে তবে তাকে শতকরা ২০% সুদ গুনতে হবে তার নেয়া লোনের বিপরীতে।
যে ব্যাংকের এটিএম কার্ড দিয়ে সব এটিএম থেকে টাকা তোলা যায়
বাংলাদেশে NPSB নেটওয়ার্কের অংশ এমন ব্যাংকগুলি দ্বারা ইস্যু করা এটিএম কার্ডগুলি দেশের সমস্ত এটিএম থেকে টাকা তোলার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। NPSB হল বাংলাদেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্তঃসংযোগ এবং আন্তঃকার্যযোগ্যতা সক্ষম করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক (বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক) এর একটি উদ্যোগ। আরো জানতে পড়তে পারেন যে ব্যাংকের এটিএম কার্ড দিয়ে সব এটিএম থেকে টাকা তোলা যায়।
আরো পড়ুন- ক্রেডিট কার্ড নেয়ার নিয়ম। |
শেষকথা
ক্রেডিট কার্ড ইসু করানোর আগে গ্রাহকের উচিত হবে কার্ডের সম্পর্কে ভালো মন্দ সুবিধা অসুবিধা বিস্তারিত জেনে নেয়া। এর হিডেন চার্জ ও অন্যান্য যে টার্মস এন্ড কন্ডিশনস আছে তা বিস্তারিত ভাবে ব্যাংক থেকে খবর নিয়ে তারপর তা পার্চেস করা।
ব্যাংক অনেক সময় ইউজারকে শুধু এর ভালো দিক গুলো বলে তা পার্চেস করানোর চেষ্টা করে। ইউজারকে বুঝতে হবে এই কার্ডটি কি তার আসলে কোনো প্রয়োজন আছে কিনা বা যেসকল কাজে সচরাচর এটি ব্যবহার হয় তার সাথে তিনি যুক্ত আছেন কিনা।
আরো পড়ুন- কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ভালো |
ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর
সচরাচর ক্রেডিট কার্ড এর ইন্টারেস্ট রেট ২০ শতাংশ এর আশে পাশে থাকে।
এটি এক এক ব্যাংকের ক্ষেত্রে এক এক রকম। কিছু ব্যাংক আছে যারা একটি নির্দিষ্ট এমাউন্ট পর্যন্ত লেনদেনের জন্য কোনো প্রকার চার্জ করে না। আবার কিছু ব্যাংকে ভার্চুয়াল ফ্রি কার্ড পাওয়া যায়।
এটা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করে। আপনি যদি সময় মতো টাকা পরিষোধ করতে পারেন এবং অন্যান্য চার্জ ও টার্মস এন্ড কন্ডিশনস সম্পর্কে আপনার স্পষ্ট ধারনা থাকে এবং তাতে যদি আপনার কোনো সমস্যা না থাকে তবে আপনি ক্রেডিট কার্ড পার্চেস করতে পারেন।
ক্রেডিট লিমিট সচরাচর বেতনের তিন থেকে চার গুন হয়ে থাকে।
দ্রুত ব্যাংকে যোগাযোগ করা। সেই সাথে আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। তাই আরো জানতে পড়ুন এটিএম কার্ড হারিয়ে গেলে করণীয়।
আস্তে আস্তে বের করার চেষ্টা করা। আর নাহয় ব্যাংকে যোগাযোগ করা। আরো বিস্তারিত জানতে পড়ুন- এটিএম বুথে কার্ড আটকে গেলে করণীয়।
কিছু ব্যাংকের ক্রডিট কার্ড সম্পর্কে জানুন
1. ইসলামী ব্যাংক খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড ফিচার |
2. ডাচ বাংলা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড |
3. এটিএম কার্ড ব্যবহারের নিয়ম |