১২টি কাজ যা আপনার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে করা উচিত নয়

একটি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের আগে আপনার উচিত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে সচেতন হওয়া। এই পোস্টে আমরা দেখবো কোথায় কোথায় আমাদের Credit Card ব্যবহার করা উচিত নয়।

ADVERTISEMENT

দিনে দিনে Credit Card এর ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে মানুষ যেমন অনেক ভাবে উপক্রিত হচ্ছে, ঠিক তেমনি অনেক সময় অসতর্কতার কারণে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। আপনি যদি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে সচেতন হোন তবে অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটার হাত থেকে রক্ষা পাবেন।

আমি আজকের এই পোস্টে বলবো এমন ১২টি কাজ যা আপনার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে করা উচিত নয়। এই ১২ টি কাজ কি কি, চলুন তা দেখে নেয়া যাক।

ADVERTISEMENT

#১. অপ্রয়োজনে ক্রেডিট কার্ড সংগ্রহ করা

এমন অনেকেই আছেন যারা কার্ড দরকার হোক বা না হোক, তারা তা পার্চেস করেন। অথবা কার্ড প্রোভাইডারের কথায় অনুপ্রাণিয় হয়ে তা পার্চেস করেন। অথচ তার তা কোনো কাজে আসে না। আবার অনেকে একটি কার্ড থাকার সর্তেও আরো একাধিক কার্ড পার্চেস করে। যা হয়তো কোনো কাজে আসে না শুধু তার কার্ড চার্জের বোঝা বাড়ানো ছাড়া।

#২. ফি সম্পর্কে ধারনা না রাখা

কার্ডের অনেক ধরণের চার্জ থাকে। ব্যবহারকারীরা অনেক সময় ক্রেডিট কার্ডের যে বিভিন্ন চার্জ আছে এ ব্যাপারে জানেনই না। আবার দেখা যায় কিছু কিছু কার্ড প্রোভাইডার কার্ডের সব রকম চার্জ সম্পর্কে গ্রাহককে অবহিত করেন না।

ADVERTISEMENT

একজন গ্রাহকের উচিত একটি কার্ড পার্চেস করার আগে সেই কার্ড তার জন্য কতোটুুকু সুবিধাজনক বা এটির চার্জ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা। যাতে করে পরে কোনো সমস্যায় না পরতে হয়।

আপনার নিজের জন্য একটি ক্রেডিট কার্ড কিভাবে বাছাই করা উচিত যা আপনার জন্য সর্বোচ্চ উপকারে আসবে তা জানতে নিচের পোস্টি পড়ুন।

আরো পড়ুন- কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ভালো

#৩. কার্ডে ব্যালেন্স রেখে দেওয়া

অনেকেই মনে করেন যে কার্ডে টাকা রাখলে আপনার ক্রেডিট স্কোর বৃদ্ধি পায়। কিন্তু আসলে এমন কিছুই ঘটে না। ক্রেডিট স্কোর বৃদ্ধি মূলত আপনার খরচের উপর নির্ভর করে। যতো বেশি খরচ করবেন ততো বেশি ক্রেডিট।

ADVERTISEMENT

এছাড়াও আপনি যদি আপনার কার্ডে ব্যালেন্স রেখে দেন, তবে কোনো কারণে যদি আপনার ক্রেডিট কার্ড অন্য কারো কাছে যায় বা কার্ড ইনফর্মেশন হ্যাক হয় তবে আপনার অর্থ হাত ছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই অপ্রয়োজনে কার্ডে ব্যালেন্স রাখা থেকে বিরত থাকুন।

#৪. অপরিচিত সাইটে কার্ড ব্যবহার করা

আমরা অনেক সময় বুঝে বা না বুঝে অনেক অপরিচিত সাইট থেকে কেনা কাটা করে ফেলি বা সাইটে আমাদের ক্রেডিট কার্ডের তথ্য দিয়ে থাকি। তবে আপনি হয়তো জানেন না যে আপনার এই ধরণের লেনদেন আপনাকে ঝুকিতে ফেলতে পারে।

এই ধরণের লেনদেনে আপনার তথ্য পাচার হয়ে যেতে পারে হ্যাকারদের কাছে এবং পরে আপনার অর্থও। তাই এ ধরণের লেনদেন থেকে দূরে থাকা উচিত এবং প্রয়োজনে শুধু নামকরা বিশ্বস্ত সাইট গুলো থেকে কেনাকাটা করা উচিত।

ADVERTISEMENT

#৫. ছোট পেমেন্ট করা

আপনার কেনাকাটার জন্য আপনি যে ক্যাশ-ব্যাক ক্রেডিট কার্ড বা পুরস্কারের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন তার উপর নির্ভর করে আপনি বিনামূল্যে নগদ বা এয়ারলাইন মাইলস এর মতো পুরস্কার সংগ্রহ করতে পারেন।

কিন্তু আপনার ক্রেডিট কার্ডের ব্যালেন্স নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে যদি আপনি প্রতিটি ছোট কেনাকাটার জন্য আপনার কার্ড সোয়াইপ করেন। আপনার ব্যালেন্স যত বেশি হবে, পরিশোধ করাও তত কঠিন হবে। মাসের শেষে, আপনি ভাবতে থাকবেন যে এই ২০টি কফি সত্যিই অতিরিক্ত ব্যায় ছিল কিনা।

ছোট আইটেমগুলির জন্য অর্থ প্রদানে আপনার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার পরিবর্তে নগদ ব্যবহার করার কথা ভাবুন। এটি শুধুমাত্র আপনার ক্রেডিট কার্ডের ব্যালেন্স বাড়ানো থেকে আপনাকে বাঁচাবে না, এটি আপনাকে একটি বাজেটে আটকে রাখতে সাহায্য করবে। কারণ প্রতিবার যখন আপনি কিছু কিনবেন, তখন আপনার ওয়ালেটে ডুব দিতে হবে।

আরো পড়ুন- যে ব্যাংকের এটিএম কার্ড দিয়ে সব এটিএম থেকে টাকা তোলা যায়

ADVERTISEMENT

#৬. কার্ড ম্যাক্স আউট করা

আপনার ক্রেডিট কার্ডের যে লিমিট তা যদি ক্রস করেন বা কার্ড ম্যাক্স আউট করেন, তবে বাড়তি অর্থের জন্য আপনাকে এক্সট্রা পে করতে হবে। অথচ আপনাকে আপনার লিমিটের মধ্যে থেকে খরচের জন্য কোনো প্রকার বাড়তি ফি দিতে হয় না।

তাই খরচ করার সময় আপনার ক্রেডিট লিমিটের উপর নজর রাখুন। লিমিট ক্রস করার আগেই কার্ড ব্যবহার বন্ধ করুন। আর আপনার স্টেটম্যান্ট সবসময় চেক করুন।

#৭. নগদ উত্তোলন করা

আপনার ক্রেডিট কার্ড থেকে নগদ উত্তোলন করা মানে হচ্ছে স্বল্পমেয়াদী ঋণ নেয়া যা আপনি আপনার ক্রেডিট কার্ড অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ধার করেন। আপনার ঋণের বার্ষিক সুদের হার এবং ফি আপনার ব্যাংক এবং ক্রেডিট কার্ড ইস্যুকারীর উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হবে।

ADVERTISEMENT

আর এই ঋণের সুদের হার সচরাচর ব্যাংক ঋণের সুদের হারের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। অনেক সময় তা ব্যাংকের ঋণের সুদের হারের তুলনায় প্রায় ‍দ্বিগুন হয়ে থাকে।

#৮. সময় মতো পেমেন্ট না করা

সময় মতো ক্রেডিট কার্ডের পেমেন্ট না করা আপনার জন্য মারাত্মক হতে পারে। কেননা এই অনিয়ম আপনার ক্রেডিট স্কোরে নীতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং আপনার স্কোর কমিয়ে দিবে।

আবার এই নীতিবাচক প্রভাব কিন্তু এখানেই সিমাবদ্ধ নয়। আপনি যদি কখনো লোন নেয়ার ব্যাপারে ভাবেন তবে এই ডিমেরিট পয়েন্ট আপনার জন্য অসুবিধা তৈরি করবে। এর জন্য আপনি লোন নাও পেতে পারেন। তাই আপনার এই বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত। এর জন্য আপনি চাইলে অটো পেমেন্ট চালু করে রাখতে পারেন।

#৯. বিভিন্ন বিল পরিষোধ করা

কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফি, মেডিকেল বিল ইত্যাদির বিল সাধারণত উচ্চ বাজেটের হয়ে থাকে। আপনি যদি আপনার ক্রেডিট লিমিটের বাইরে গিয়ে এই বিল পরিষোধ করেন তবে তা আপনার জন্য বাড়তি বোঝা তৈরি করবে তা রিটার্ণ করার সময়।

আবার অনেকে তাদের ইউটিলিটি বিল ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও পরিষোধ করে। আপনি যদি ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ঘন ঘন বিল পরিশোধ করেন, বিশেষ করে যদি আপনি আপনার ব্যালেন্স ট্র্যাক রাখতে অবহেলা করেন তাহলে আপনার জন্য আর্থিক সমস্যায় পড়া সহজ।

আপনার ক্রেডিট সীমা অতিক্রম করা এবং কার্ডে অনুপস্থিত পেমেন্ট আপনাকে অতিরিক্ত সুদের চার্জ এবং লেট করলে লেট ফি দিয়ে জর্জরিত করবে।

#১০. বন্ধকী পেমেন্ট করা

আপনি যদি কখনও ভেবে থাকেন, “আমি কি ক্রেডিট কার্ড দিয়ে আমার বন্ধকী পরিশোধ করতে পারি?” উত্তরটি হ্যাঁ হতে পারে, কিন্তু এটি কোনো ভাল সিদ্ধান্ত হতে পারে না। বিশেষ করে যদি আপনার নগদ সঙ্কট আপনাকে এমন একটি ক্রেডিট কার্ড দিয়ে আপনার বন্ধকী পরিশোধ করতে প্রলুব্ধ করে যার চার্জ তুলনামূলক অনেক বেশি।

বেশিরভাগ বন্ধকী কোম্পানি আপনাকে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে সরাসরি অর্থপ্রদান করতে দেয় না। যদিও কিছু তৃতীয়-পক্ষ কোম্পানি আপনাকে আপনার বন্ধকী পরিশোধ করতে আপনার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে সাহায্য করবে। তবে তারা প্রায়ই এই সুবিধার জন্য ফি নেয়, যা প্রতি মাসে আপনি যে পরিমাণ বিল পরিশোধ করছেন তার সাথে যোগ হবে।

#১১. স্টক এবং অন্যান্য বিনিয়োগ করা

অনেকে মনে করেন যে ক্রেডিট কার্ডের ফ্রি মানি দিয়ে স্টকে ইনভেস্ট করা লাভজনক হতে পারে, এমনকি অনেকে ইনভেস্ট করেও থাকেন।

ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে স্টকগুলির মতো বিনিয়োগ কেনা অনেক ক্ষেত্রে খারাপ সিদ্ধান্ত হতে পারে। কারণ এতে উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, মার্কেটওয়াচ সম্প্রতি একজন কানাডিয়ান আর্থিক বিশ্লেষকের বিষয়ে রিপোর্ট করেছে, যে এইভাবে জুয়া খেলে বড় হারে হেরে গিয়েছিলেন।

#১২. ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করা

আপনার ক্রেডিট স্কোর পাওয়ার অনেক কারণের মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে আপনার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের গড় সময়। আপনি যখন একটি ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করেন, তখন আপনার ক্রেডিট স্কোর প্রভাবিত হয়।

উদাহরণস্বরূপ, আপনার যদি ৫ বছরের পুরনো একটি কার্ড এবং ২ বছরের পুরনো একটি কার্ড থাকে, তাহলে আপনি গড়ে ৩.৫ বছরের ক্রেডিট পেয়েছেন। এখন আপনি যদি ৫ বছর বয়সী কার্ডটি বন্ধ করেন, তবে আপনার ক্রেডিট করার বয়স ২ বছর কমে যাবে।

সাধারণত ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয় না, বিশেষ করে আপনার পুরনো কার্ড। যদিও, এমন কিছু সময় আছে যখন ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করার দরকার হতে পারে। যেমন: যখন আপনার কাছে একটি বার্ষিক ফি নেওয়া হয়, যা আপনার কার্ডের সুবিধার চেয়ে বেশি মনে হয়।

আরো পড়ুন- ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা এবং অসুবিধা

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে আমাদের অন্যান্য পোস্ট গুলো পড়ুন

১. ক্রেডিট কার্ড নেয়ার নিয়ম
২. সুদমুক্ত ইসলামী ব্যাংক খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড ফিচার
৩. ডাচ বাংলা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সুবিধা
৪. ডেভিড কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য
৫. ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ডের পার্থক্য এবং সাদৃশ্য

হোম পেজে যেতে ক্লিক করুন bankline-এ।

ADVERTISEMENT

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *