নভেম্বরেই চালু হচ্ছে দেশীয় ডেবিট কার্ড ‘টাকা পে’
বিদেশি কোম্পানির উপর নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড ‘টাকা পে’ চালু করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একদম শুরুতে আটটি ব্যাংককে সাথে নিয়ে শুরু হচ্ছে এই পাইলটিং প্রোগ্রাম। যে…
বিদেশি কোম্পানির উপর নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড ‘টাকা পে’ চালু করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একদম শুরুতে আটটি ব্যাংককে সাথে নিয়ে শুরু হচ্ছে এই পাইলটিং প্রোগ্রাম। যে সেবায় যুক্ত হবে সব ব্যাংক এই নভেম্বরের মধ্যেই।
ব্যাংকাররা বলছেন, এ কার্ড চালু করার পূর্বেই এর লেনদেন পদ্ধতি, কীভাবে চলবে এ স্কিম সে বিষয়ে দিক নির্দেশনা এবং পাশাপাশি গ্রাহক পর্যায়ে এর প্রচার প্রয়োজন।
দিন দিন লেনদেনে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের উপর নির্ভরশীলতা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত দেশে ডেবিট কার্ড আছে তিন কোটি ২৭ লাখ। আর লেনদেন হয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ক্রেডিট কার্ডেও লেনদেনের অংকটাও কিন্তু কম নয়।
ব্যাংকগুলোর ডেবিট ক্রেডিট কার্ডের সেবার বেশিরভাগই বিদেশি কার্ড যেমন: ভিসা, এমেক্স অথবা মার্স্টারকার্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এতে বড় অংকের একটি অর্থ হারাচ্ছে বাংলাদেশ। তাই ‘টাকা পে’ নামে ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড চালু করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ। এই কার্ড ব্যবহার করে দেশের ভেতরে যেকোনো কেনাকাটা করা যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, প্রাথমিকভাবে আটটি ব্যাংক নিয়ে পাইলটিং কার্যক্রম করা হচ্ছে। জাতীয় পর্যায়ে এই কার্ড ব্যবহার হলে গ্রাহকের খরচও কমবে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক একটি কার্ডের জন্য যেসব সেবা দেবে, তা সাশ্রয়ী মূল্যে হবে। তখন আন্তর্জাতিক কার্ড স্কিমগুলোর সঙ্গে এর একটি প্রতিযোগিতা হবে। এখন আন্তর্জাতিক কার্ড স্কিমগুলো যা নির্ধারণ করে দেয়, সচরাচর তাই আমাদের মানতে হয়।
তিনি আরো জানান, এই ডেবিট কার্ড ভারতীয় রুপির সঙ্গে যুক্ত করে ফেলার একটি প্রক্রিয়া চলছে। কেউ ভারতে গেলে তার ১২ হাজার ডলারের যে ভ্রমণ কোটা আছে, সে পরিমাণ অর্থ তিনি রুপিতে কেনাকাটা করতে পারবেন। ফলে মুদ্রার বিনিময়ের কারণে যে লস হতো, সেটা হবে না। তাতে দেখা গেছে প্রায় ছয় শতাংশের মতো অপচয় কমবে। বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করে থাকেন ভারতে। এতে বড় একটি ডলার এমাউন্ট বাঁচবে।
এরই মধ্যে ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড চালুর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে প্রধান করে দুটি কমিটি করা হয়েছে। এ সেবায় যুক্ত হয়ে গ্রাহক সব ব্যাংকের এটিএম বুথ ও পিওএস (পয়েন্ট অব সেল) মেশিন ব্যবহার করতে পারবেন লেনদেনের জন্য। অর্থাৎ, অন্যান্য ডেবিট কার্ডের মতোই ব্যবহার করা যাবে এই ‘টাকা পে’ কার্ড।
এই কার্ডের কার্যক্রমে প্রাথমিকভাবে পাইলটিং করবে যে আটটি স্থানীয় ব্যাংক, সেগুলো হলো- ব্র্যাক ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক এবং মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক।
জাতীয় এ ডেবিট কার্ড পদ্ধতি চালুকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ব্যাংকাররা। তবে এটা কী পদ্ধতিতে চলবে সে বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনার কথা বলছেন তারা।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, এই কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের একটি নিজস্ব ন্যাশনাল পেমেন্ট নেটওয়ার্ক তৈরি হয়ে যাচ্ছে। নিজস্বতার নতুন মোড়ক উন্মোচন হলে এক কার্ডেই মিলবে একাধিক ব্যাংকের টাকা উত্তোলনের বিশেষ সুবিধা। চার্জ আর ফিও কমবে গ্রাহকের।
ডাচ বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মোহাম্মদ শিরিন জানান, ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড চালুর মধ্য দিয়ে লেনদেনে এক নতুন যুগের সূচনা করবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনে কার্ড ব্যবহারের যে চার্জ তা কমিয়ে সর্বনিম্নে নামিয়ে আনবে। যাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের এ কার্ড ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
ব্যাংকিং এর আরো নিউজ পেতে দেখুন- Banking
ক্যাটাগরিতে যেতে- Banking