দুবাই থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম
দুবাই থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম খুজছেন? এই পোস্টে দুবাই থেকে দেশে টাকা পাঠানোর কিছু নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
দুবাই থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম অনেক গুলো আছে। আপনি যেকোনো সুবিধা জনক উপায় অবলম্বন করতে পারবেন দেশে আপনার প্রিয়জনের কাছে টাকা পাঠানোর জন্য। নিচে আমি কয়েকটি উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি। চলুন এই নিয়ম গুলো দেখে নেয়া যাক।
Table of Contents
দুবাই থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর কোনো সিস্টেম আছে কি?
অবশ্যই আছে। বাংলাদেশের প্রচুর শ্রমিক দুবাইতে কাজ করে। তারা প্রতি বছর খুব ভালো এমাউন্টের রেমিটেন্স দেশে পাঠায়। টাকা পাঠানোর জন্য সেখানে তারা বৈধ এবং অনেক সময় অবৈধ উভয় পথ ব্যবহার করেন।
তবে এটা জেনে রাখা ভালো যে বৈধ অনেক সিস্টেমে এখন দেশে টাকা পাঠানো যায়। তাদের এই সিস্টেমগুলোই ব্যবহার করা উচিত। কেননা অবৈধ পথগুলো যেমন নিষিদ্ধ, তেমনই এখানে লেনদেন করা অতন্ত ঝুকিপূর্ণ।
দুবাই থেকে টাকা পাঠানোর মাধ্যম গুলো কি কি?
বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রবাসিদের রেমিটেন্স পাঠাতে সহযোগিতা করে থাকে। এর মধ্যে বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান আছে এবং আছে দেশি প্রতিষ্ঠান যারা বিদেশি অনেক এজেন্সির সাথে চুক্তিবদ্ধ ভাবে এই সেবা দিয়ে থাকে।
এখানে বেশ কিছু মাধ্যমের নাম নিচে পর্যায়ক্রমে দিয়ে দিচ্ছে, যেসকল মাধ্যম আপনার সুবিধা অনুযায়ি বেছে নিয়ে দেশে টাকা পাঠাতে পারবেন।
- ওয়াইজ
- ওয়েস্টার্ণ ইউনিয়ন
- ট্যাপ ট্যাপ সেন্ড
- মানিগ্রাম
ইত্যাদি।
যেসকল মাধ্যমে টাকা রিসিভ করা যাবে
- বিকাশে
- বিভিন্ন ব্যাংকের একাউন্টে সরাসরি (যেমন: ইসলামী ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ইত্যাদি)
- বিভিন্ন এজেন্ট পয়েন্টের মাধ্যমে
১. বিদেশ থেকে সোনালী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম |
২. বিদেশ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম |
৩. বিদেশ থেকে অগ্রণী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম |
দুবাই থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম
উপরে উল্লেখিত মাধ্যম গুলো, যেমন: ওয়াইজ, ট্যাপ ট্যাপ সেন্ড বা অন্য যেসকল উপায় আছে, এসকল মাধ্যমে বাংলাদেশে টাকা পাঠাতে পারবেন এবং চাইলে বেশ কিছু মাধ্যম থেকে সরাসরি বিকাশে বা ব্যাংক একাউন্টে রিসিভ করতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে মাধ্যম গুলোর অফিস ভ্রমণ বা তাদের অনলাইন সেবা নিতে হবে। সেখানে কিছু ফরমালিটি অনুসরণ করে আপনি টাকা দেশে পাঠাতে পারবেন।
নিচে এই ব্যাপারে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ওয়াইজ এর মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম
ওয়াইজ একটি ইউকে-ভিত্তিক মানি ট্রান্সফার কোম্পানি এবং বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর বিশ্বস্ত একটি মাধ্যমে। বর্তমানে এটির গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২১ বিলিয়ন এর বেশি।
এটি পরিচালিত হয় প্রকৃত এক্সচেঞ্জ রেটের ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে এখানে ব্যাংক নির্ধারিত কোন চার্জ নেই। যার অর্থ দাঁড়ায় গ্রাহক সর্বনিম্ন মানি এক্সচেঞ্জে রেট সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া এখানে কোন হিডেন ফি নেই।
ওয়াইজ টাকা পাঠানোর জন্য নামে মাত্র একটি চার্জ নেয়। এটি ১ শতাংশ-এরও নিচে। যেখানে ক্রেডিট কার্ড দিয়েই বিদেশি মুদ্রা ক্রয় করলে ২.৫ পার্সেন্ট চার্জ কাটে, অথবা ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠালে আরও বেশি চার্জ কাটে। সেটা ১০০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে- যা এমাউন্টের ওপর নির্ভর করে।
খুবই কম রেটে টাকা পাঠানো যায় ওয়াইজ থেকে। বিশেষ করে যদি কোন লোকাল ব্যাংক একাউন্ট থেকে মানি ট্রান্সফারে ওয়াইজ ব্যবহার করা হয়।
ওয়াইজ একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম
সবার প্রথমে https://wise.com/invite/a/matiurr লিংকে ভিজিট করতে হবে। তারপর ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়ী অপশনে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে। ব্যক্তিগত একাউন্টের করতে লাগবে নাম, মোবাইল নম্বর, জন্ম তারিখ ও ইমেইল। ব্যবসায়ীক একাউন্টের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স থাকা জরুরি।
আইফোনের ক্ষেত্রে অ্যাপলস্টোর এবং এন্ড্রয়েড-এর ক্ষেত্রে প্লে-স্টোরে গিয়ে ওয়াইজের অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে। ডাউনলোড হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দেশের পাসপোর্ট অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ভেরিফিকেশন করতে হবে। এছাড়া গুগল আইডি, ফেসবুক অথবা অ্যাপল আইডি দিয়ে একাউন্ড খোলা যায়।
ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন টাকা পাঠানোর নিয়ম (দুবাই থেকে)
ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন একটি মাল্টি ন্যাশনাল আমেরিকান কোম্পানি। যেকেউ চাইলেই এই মাধ্যমে বিশ্বের অন্যা যে কোনো দেশে তাদের অর্থ হস্তান্তর করতে পারবেন।
এই প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ভাবে তাদের গ্রাহকদের সেবা দিয়ে থাকে। গ্রাহক তাদের অফিস ভিজিট করে এই সেবা নিতে পারবে। আবার ওয়েব সাইট ও মোবাইল এপ্লিকেশনের মাধ্যমেও তারা এই সেবা গ্রহণ করতে পারবে।
এছাড়া তাদের সাথে দেশিয় কিছু প্রতিষ্ঠানের সংযুক্ত সেবায় গ্রাহক সরাসরি অর্থ গ্রহণ করতে পারে। যেমন বিকাশের মাধ্যমে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের অর্থ গ্রহণ করা যায়, অথবা চাইলে ব্যাংক একাউন্টেও এই টাকা গ্রহণ করা যায়।
গ্রাহক যদি দুবাইতে তাদের অফিস ভিজিট করে তবে এজেন্ট গ্রাহক কে একটি ফর্ম দিবে, যেখানে গ্রাহক তার তথ্য এবং অর্থ রিসিভারের তথ্য দিবে। এখানে কোনো কারণে যোগাযোগ করতে পারার জন্য তার কন্টাক্ট ডিটেইলস এবং রিসিভারের নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার, টাকার পরিমাণ, প্রয়োজনে ব্যাংক একাউন্ট, ইত্যাদি তথ্য নিয়ে থাকে।
পরে এজেন্ট গ্রাহককে একটি রেফারেন্স নাম্বার দিবে যা MTCN নামে পরিচিত। এই নাম্বারটি গ্রাহককে রিসিভার কে দিতে হবে। কেননা এই নাম্বার দিয়েই রিসিভার তার টাকা সংগ্রহ করতে পারবে।
এসম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন ওয়েস্টার্ণ ইউনিয়ন নিয়ে লেখা আমাদের একটি পোস্ট ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন টাকা পাঠানোর ও গ্রহণ করার নিয়ম।
ট্যাপ ট্যাপ সেন্ড দিয়ে টাকা পাঠানোর নিয়ম
ট্যাপ ট্যাপ সেন্ড দিয়ে প্রায় সবগুলো দেশ থেকে এখন টাকা পাঠানো যায়। বাংলাদেশে আপনি চাইলে বিকাশ এবং ব্যাংক একাউন্টেন মাধ্যমে আপনি ট্যাপ ট্যাপ সেন্ড থেকে টাকা গ্রহণ করতে পারবেন।
এই মাধ্যমে টাকা পাঠাতে খুবই ছোট একটি এমাউন্ট চার্জ করা হয়। এখানে কোনো এক্সট্রা চার্জ করা হয় না। তাই এই ব্যাপারে চিন্তার কোনো বিষয় নেই।
টাকা পাঠানোর জন্য নিচের নিয়মটি ফলো করুন:
- আপনার ফোন থেকে, Taptap Send অ্যাপটি ডাউনলোড করুন
- সাইন আপ করুন এবং আপনার তথ্য দিন
- আপনার প্রাপকের নাম এবং মোবাইল নম্বর দিন
- তারপর তা সেন্ড করুন
মানিগ্রামে টাকা পাঠানোর নিয়ম
মানিগ্রাম একসময় অনেক জনপ্রিয় একটি মাধ্যম থাকলেও বর্তমানে এর প্রতিদন্দি বাড়ার সাথে সাথে এর জনপ্রিয়তা কিছুটা কমে গেছে। তবুও তারা বর্তমানে ভালোই সার্ভস দিয়ে থাকে।
আপনি মানিগ্রামের অনলাইন সার্ভিস নিয়ে বিদেশ থেকে দেশে টাকা পাঠাতে পারবেন। সেই সাথে এই টাকা আপনি সরাসরি ব্যাংক বা বিকাশের মাধ্যমে রিসিভ করতে পারবেন।
যেসব মাধ্যমে টাকা রিসিভ করতে পারবেন
দুবাই থেকে পাঠানো টাকা বিভিন্ন মাধ্যমে আপনি রিসিভ করতে পারবেন। যেমন: বিকাশ বা ব্যাংক একাউন্ট।
বিদেশ থেকে বিকাশে টাকা রিসিভ
এখন বিদেশ থেকে প্রায় সব মাধ্যমে আপনি চাইলে দেশে বিকাশে টাকা পাঠাতে পারবেন। বিকাশ বর্তমানে অনেক গুলো ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির সাথে যোথ ভাবে কাজ করছে। যার ফলে রেমিটেন্স পাঠানোর বেশির ভাগ মাধ্যমে আপনি এখন বিকাশে টাকা পাঠানোর সিস্টেম খুজে পাবেন। তাই এখন বিকাশে রেমিটেন্স আনা অনেক সহজ একটি বিষয়।
বিদেশ থেকে ব্যাংকে টাকা রিসিভ
যেকোনো মাধ্যমে থেকে ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠানো এখন অসম্ভব কিছু না। অন্য কোনো মাধ্যমে টাকা রিসিভ করা যাক বা না যাক, এই মাধ্যমে কিন্তু বিদেশ থেকে টাকা আসলে সরাসরি একাউন্টে ডিপোজিট হয়ে যায়। প্রায় সবজায়গা থেকেই আপনি এখন দেশের ব্যাংকে থাকা একাউন্টে টাকা পাঠাতে পারবেন।
ইসলামী ব্যাংকে দুবাই থেকে টাকা পেরণ
আপনি চাইলে দুবাই থেকে সরাসরি দেশে আপনার ইসলামী ব্যাংকে থাকা একাউন্টে টাকা পাঠাতে পারবেন। এর জন্য আপনার টাকা পাঠানোর মাধ্যম গুলোতে ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম খুজে বের করুন। ব্যাংকে টাকা পাঠানো গেলে ইসলামী ব্যাংকে সহজেই আপনি আপনার টাকা পাঠাতে পারবেন।
আরো পড়ুন- পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম বাংলাদেশ থেকে
ব্যাংক এশিয়াতে রেমিটেন্স পাঠানোর নিয়ম দেখুন ভিডিওতে
বিদেশ থেকে বিকাশে টাকা পাঠানোর নিয়ম
- আপনাকে অনুমোদিত এবং তালিকা ভুক্ত কিছু পার্টনার ব্যাংক ব্রাঞ্চ, বা মানি এক্সচেইঞ্জ, বা এমটিও (মানি ট্রান্সফার অর্গানাইজেশন) এজেন্টের কাছে যেতে হবে। (MTO List)
- ট্রান্সফার করার জন্য কিছু তথ্য যেমন: রিসিভারের নাম, মোবাইল নাম্বার, ইত্যাদি দিতে হবে।
- প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান করতে হবে।
- এর পর ব্যাংক/মানি এক্সচেইঞ্জ/এমটিও এজেন্ট কাজটি শুরু করতে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা নিবে।
এভাবে খুব সহজে এবং সুবিধাজনক উপায়ে বাংলাদেশে আপনার প্রিয়জনের বিকাশ একাউন্টে টাকা পাঠাতে পারবেন। সব ঠিক থাকলে তারা আপনার টাকা সেন্ড করে দিবে।
বৈধ উপায়ে রেমিটেন্স পাঠানোর সুবিধা
আপনি যদি বৈধ সকল উপায় ব্যবহার করে দেখে টাকা পাঠান, বিশেষ করে ব্যাংকিং চ্যানেলে, তবে আপনি পাবেন সরকার ঘষিত ২.৫০% বোনাস। এটি বিভিন্ন সময়ে কম বেশি হয়ে থাকে। আমি যখন এই আর্টিকেলটি আপডেট করছি, তখন কেন্দ্রিয় ব্যাংক কতৃক অন্যান্য ব্যাংক গুলোকে ৫% পর্যন্ত প্রনোদনা দেয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
শেষকথা
বাংলাদেশের অনেক প্রবাসী ভায়েরা দুবাইতে কাজ করেন। সেখানে তারা খুবই কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করেন। তারপর মাস শেষে তা দেশে প্রিয়জনের নিকট পাঠিয়ে থাকেন। তবে অনেকে হয়তো সঠিক মাধ্যম বাছাই করতে না পেরে প্রতারিতও হন।
কখনই অচেনা বা অবিশ্বস্থ দালালের মাধ্যমে লেনদেন করবেন না। এতে আপনার টাকা হারানোর ঝুকি রয়েছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন করুন, তাহলে আপনি সেইফলি আপনার টাকা দেশে পাঠাতে পারবেন এবং সাথে পাবেন একটি নির্দি্ষ্ট এমাউন্টের প্রনোদনা।
বিদেশ থেকে দেশে টাকা পাঠাতে নিয়ে অন্যান্য পোস্টগুলো পড়ুন
বিদেশ থেকে দেশে টাকা পাকা পাঠানো নিয়ে আরো বিস্তারিত তথ্য পেতে আমাদের একটি ক্যাটাগরি রেমিটেন্স ভিজিট করে দেখতে পারেন। এখানে আরো বিস্তারিত তথ্য সহ পোস্ট পাবেন যা আপনার জন্য উপকারী হতে পারে।
রেমিটেন্স নিয়ে আরো জানতে পড়ুন Remittance এই পোস্টি।