ডেভিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য
ডেভিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড দেখতে একই রকম হলেও এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে যা এই পোস্টে তুলে ধরা হলো।
Debit card এবং Credit card, এদের মধ্যে অবশ্যই কিছু বিশেষ পার্থক্য আছে। বিশেষ করে এই দুটির অর্থ যোগানের খাত সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেই সাথে এদের চার্জ ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধাতেও ভিন্নতা রয়েছে।
ডেভিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও এই কার্ড গুলো মূলত কেনা কাটার কাজেই ব্যবহার করা হয়, এবং এই কার্ড গুলোর চাহিদাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যাই হোক, এই পোস্টে আমি আলোচনা করবো এই ডেভিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য গুলো কি কি, আর এদের সুবিধা গুলো কি কি। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
Table of Contents
ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড কি
ক্রেডিট কার্ড
এটি এমন এক ধরণের প্লাস্টিক কার্ড যা ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের ইসু করে এবং কার্ডের বীপরিতে গ্রাহক একটি লিমিট পর্যন্ত অর্থ খরচ করার সুযোগ পায়। এটি ঋণ হিসেবে গ্রাহককে দেয়া হয়। এই অর্থ গ্রাহক তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই অর্থ রিটার্ণ করলে গ্রাহককে কোনো প্রকার সুদ দিতে হয় না।
অর্থাৎ, গ্রাহক যখন একটি কার্ড ইসু করে তখন তার কার্ডের একটি লিমিট নির্ধারণ করা হয় যে সে কতো টাকা সর্বোচ্চ এখান থেকে খরচ করতে পারবে। এই টাকায় সে কেনাকাটা সহ আরো অনেক কিছু করতে পারবে। তবে এখানে কিছু কাজ থাকে যা করা যাবে না। করলে গ্রাহক কে এক্সট্রা অর্থ গুনতে হতে পারে।
আরো পড়ুন- জেনে নিন কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ভালো |
ডেভিট কার্ড
এটিও একটি প্লাস্টিক কার্ড। অনেকটা ক্রেডিট কার্ডের মতোই, তবে এই ডেভিট কার্ডের বীপরিতে গ্রাহক তাদের নিজেদেরই একাউন্টে থাকা অর্থ খরচ করে থাকে। গ্রাহকের একাউন্টে অর্থ না থাকলে গ্রাহক এই কার্ডটি ব্যবহার করতে পারেনা।
অর্থাৎ আপনার একাউন্টে যতক্ষণ টাকা আছে আপনি ঠিক ততক্ষণই আপনার ক্রেডিট কার্ডটি ব্যবহার করতে পারছেন। একাউন্টের উপরই ডভিড কার্ড নির্ভর হয়ে থাকে। সুতরাং গ্রাহক কেনাকাটা বা অন্য যাই করুক, এর জন্য কোনো রিটার্ণ দেয়ার দরকার পড়ে না এবং লেট ফি বা সুদ দেয়ার মতো এমন কোনো বিষয়ও নেই।
ডেভিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য
ডেভিড কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য গুলো কি কি তা নিচে পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো:
ক্রেডিট কার্ড | ডেভিড কার্ড |
---|---|
১. এই কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করতে টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে পাওয়া যায়। | ১. এই কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করতে হলে গ্রাহকের একাউন্টে টাকা থাকতে হবে। |
২. ব্যবহারকারীর কাছে অর্থ না থাকলেও ব্যবহার করা যাবে। | ২. যে কোনো প্রকার খরচের জন্য একাউন্টে টাকা থাকা বাধ্যতামূলক। |
৩. এটি ব্যবহারকারীর একাউন্টের সাথে সংযুক্ত থাকে না। | ৩. এটি ব্যবহারকারীর একাউন্টের সাথে সংযুক্ত হয়ে থাকে। |
৪. ক্রেডিট কার্ড মাল্টি কারেন্সির হতে পারে। | ৪. ডেভিড কার্ডে সাধারণত একটি একটি কারেন্সি (বিডিটি) প্রদান করে থাকে। |
৫. ক্রেডিট কার্ডের বীপরিতে ব্যাংক ইন্সুরেন্স সুবিধা প্রদান করে থাকে। | ৫. ডেভিড কার্ডের বীপরিতে ব্যাংক ইন্সুরেন্স সুবিধা প্রদান করে না। |
৬. ক্রেডিট কার্ডে জয়েনিং ফি, প্রসেসিং ফি, লেট পেমেন্ট ফি, বার্ষিক ফি প্রদান করতে হয়। | ৬. ডেভিড কার্ডে কোনো প্রকার সুদ বা মুনাফা দিতে হয় না। কারণ ডেভিড কার্ড দিয়ে গ্রাহক নিজের টাকা নিজেই উত্তোলন করে থাকে। |
৭. ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকের কাছে কোনো স্টেটম্যান্ট প্রদান করা হয়। | ৭. ডেভিড কার্ডের গ্রাহকের কাছে স্টেটম্যান্ট প্রদান করা হয় না। |
৮. ব্যাংক হিসাবধারী যেকেউ ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন না। | ৮. ব্যাংক হিসাবধারী যেকেউ চাইলে ডেভিড কার্ড নিতে পারবেন। |
৯. এটিএম থেকে টাকা বের করলে এর বীপরিতে ইন্টারেস্ট কাটা হবে। | ৯. এটিএম থেকে টাকা বের করলে এর বীপরিতে ইন্টারেস্ট কাটা হবে না। |
এখানে উল্লেখিত এসকল পার্থক্য ছাড়াও আরো অনেক পার্থক্য আছে। এখানে কমন পার্থক্য গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা
ক্রেডিট কার্ডগুলি আপনাকে ক্রয়ের ক্ষেত্রে পে করার জন্য অতিরিক্ত সময় দেয়। মাস শেষ হওয়ার পর, আপনি গত ৩০ দিনে করা কেনাকাটার জন্য কতটা খরচ করেছেন তা উল্লেখ করে একটি বিল পাবেন। আপনার ক্রেডিট কার্ড বিল পরিশোধ করতে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সময় দেয়া হবে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে আপনার একটি ক্রেডিট হিস্ট্রি তৈরি হবে। যখনই আপনি আপনার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কিছু কিনবেন এবং তারপর সময়মতো তা পরিশোধ করবেন, আপনার ক্রেডিট হিস্ট্রিতে তা যুক্ত হবে। আপনার পজেটিভ ক্রেডিট হিস্ট্রি আপনার একটি ভালো ইমেজ তৈরি করবে এবং আপনার ক্রেডিট স্কোর বাড়াতে সাহায্য করবে৷ যা পরবর্তিতে আপনার বিভিন্ন লোন বা অন্য কোনো কাজে আপনাকে বিশেষ সহযোগিতা দিবে।
ডেভিট কার্ডের সুবিধা
ক্রেডিট কার্ডের পরিবর্তে একটি ডেবিট কার্ড ব্যবহার করা ঋণে পড়ার সম্ভাবনা হ্রাস করার একটি ভাল উপায়। এই পদ্ধতিটি আপনাকে আপনার বাজেটের মধ্যে সিমাবদ্ধ থাকার সুযোগ দেয়। আপনি যা খরচ করেন তা আপনার একাউন্ট থেকে কাটে। তাই আপনার বাড়তি খরচ করার সুযোগ নেই।
আপনার ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে এটিএম মেশিন থেকে নগদ তুলতে পারবেন। কিছু খুচরা বিক্রয়ের দোকান থেকে আপনি ক্যাশ ব্যাক অফারও পেতে পারেন।
যেহেতু আপনার ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে আপনি যে কেনাকাটা করেন তার অর্থ সরাসরি আপনার চেকিং অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া হয়, তাই মাসের শেষে আপনার বিল আসার বিষয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না। এর মানে হল যে আপনাকে সেই বিলে সুদ জমা হওয়ার বিষয়ে চিন্তা করতে হবে না।
ডেভিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর
ভিন্ন ভিন্ন ব্যাক্তির জন্য ভিন্ন ভিন্ন কার্ড ভালো। অর্থাৎ কারো জন্য যদি ডেভিট কার্ড ভালো হয়, তবে কারো জন্য ক্রেডিট কার্ড ভালো।
কারণ ক্রেডিট কার্ডে অনেক ধরণের অফার আছে, যদি আপনার রেগুলার এক্টিভিটিতে ক্রেডিট কার্ড লাভজনক হয়, তবে এটি ব্যবহার করা ভালো। আর আপনি যদি সময় মতো খরচ করা অর্থ ফেরত দিতে না পারেন, তবে আপনার জন্য ডেভিড কার্ড নেয়াই উত্তম হবে।
ব্যবহারের দিক থেকে কিস্তিতে কোনো পণ্য কেনার ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত। ক্রেডিট কার্ডধারীদের জন্য অনেক কোম্পানি বা ব্যবসায়িরা কিস্তি সুবিধা রাখেন। ফলে গ্রাহক কোনো বাড়তি টাকা না দিয়েই এই সুবিধা পেতে পারেন, যা তাদের জন্য লাভজনক বটে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে আপনার একটি ক্রেডিট হিস্ট্রি তৈরি হবে। অর্থাৎ আপনার লেনদেনের আচরনের উপর ভিত্তি করে এই হিস্ট্রি তৈরি হয়। যা আপনার ভবিষ্যৎ কার্ড ব্যবহার, ঋণ গ্রহণ, বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।
ডেভিট কার্ড কি ক্রেডিট কার্ডের মতো কাজ করতে পারে না। এদের ভিন্ন ভিন্ন ভাবেই ইসু করা হয়। তাই আপনি যে ধরণের কার্ড নিবেন, শুধু সে ধরণের কার্ডই ব্যবহার করতে পারবেন।
বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে জানুন
আরো দেখুন