বাংলাদেশে কোন ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ জেনে নিন
কোন ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ থাকবে তা নিয়ে ভাবছেন? এখানে আপনার সুবিধার্থে এবিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
কষ্ট করে আয় করা টাকা ব্যাংকে রাখার ব্যাপারে আমরা প্রায় দুশ্চিন্তায় থাকি যে কোন ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ হবে। আবার বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক সম্পর্কে বিভিন্ন নেগেটিভ কথা শুনা যায়, যা আমাদের ভয়কে আরো উসকে দেয়। সে ভয় থেকে আপনিও হয়তো একটি সুরক্ষিত ব্যাংক খুজছেন।
আর তাই এই পোস্টে আমরা দেখবো ব্যাংকগুলো কতটা নিরাপদ, কোন ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ, আর কিছু বেস্ট ব্যাংকের নাম। চলুন তবে শুরু করা যাক।
Table of Contents
ব্যাংক কি নিরাপদ?
বাংলাদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সমস্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এটি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে বাংলাদেশের সমস্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক কাঠামোর অধীনে রয়েছে এবং সেসব ব্যাংক নিয়মিতভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা নিরীক্ষা করা হয়। এতে তাদের নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়।
একারণে ব্যাংকগুলোকে নিরাপদ হিসেবে ধরা হয়। তবুও বাংলাদেশে অর্থ নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে ব্যাংকের সুনাম, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং সরকারি বিধিবিধানের মতো বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুন- ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম |
কোন ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ
যদিও সব ব্যাংককেই নিরাপদ হিসেবে ধরা হয়, তবুও ব্যাংক নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনার নিজের একটু অনুসন্ধান করা এবং বিভিন্ন ব্যাংকের মধ্যে তাদের সার্ভিস গুলোর তুলনা করে ব্যাংক বাছাই করে নেয়া ভালো। এতে করে আপনি আপনার জন্য বেস্ট সার্ভিসগুলো খুজে পাবেন।
এক্ষেত্রে ব্যাংকের সুনাম, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং সরকারি বিধিবিধানের মতো বিভিন্ন বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়ার পর ব্যাংকের সুদ, ফি এবং গ্রাহক পরিষেবার মতো বিষয়গুলিও বিবেচনায় নেয়া উচিত। যদি আপনার কাছে একটি বড় অঙ্কের টাকা থাকে, তাহলে আপনি ঝুঁকি ছড়িয়ে দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা জমা করার কথা ভাবতে পারেন।
এটাও মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে টাকা নিরাপদ রাখার কোনো 100% ফুলপ্রুফ উপায় নেই। সবচেয়ে নামকরা ব্যাংকগুলিও জালিয়াতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অর্থনৈতিক মন্দার মতো অপ্রত্যাশিত ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।
তাই কোন ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা না করে ভালো হবে ব্যাংকের সুনাম, আর্থিক স্থিতিশীলতা, ব্যাংকের সুদ, ফি এবং গ্রাহক পরিষেবা এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করা।
টাকা রাখার ব্যাপারে বিকল্পও ভাবতে পারেন। অনেকে এনজিও বা পোস্ট অফিসে টাকা জমান। দেখে নিন ব্যাংক এবং এনজিও এর মধ্যে পার্থক্য কি। ব্যাংক নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরো যা যা আমলে নেয়া যেতে পারে তা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
১. শেয়ারের প্রাইজ
বর্তমানে প্রায় সকল ব্যাংকই শেয়ার মার্কেটে উপস্থিত রয়েছে। সুতরাং আপনি যদি অনলাইন ঘেটে ব্যাংকগুলোর শেয়ারের গ্রাফ অনুসরণ করেন, তবে আপনার একটি আইডিয়া হবে যে ব্যাংকটির অবস্থা কেমন। যদি এমন হয় যে ব্যাংকটির শেয়ারের দর ক্রমাগত ভাবে নিন্মমুখি, তবে আপনাকে ধরে নিতে হবে যে এই ব্যাংকটি নিরাপদ নয়।
২. লোন ডিপোজিট রেশিও
ব্যাংকের লোনের ডিপোজিট রেশিও যদি ৭০% থেকে ৯০% এর মধ্যে হয়ে থাকে, তবে সেই ব্যাংকটিকে একটি নিরাপদ ব্যাংক হিসেবে ধরে নেয়া হয়।
এক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাংকের বিভিন্ন রকম লোন ডিপোজিট রেশিও হয়ে থাকে। কমার্শিয়াল যে ব্যাংক গুলো রয়েছে তারা সচরাচর গ্রাহকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থের প্রায় ২০-৩০ শতাংশ নিজেদের রিজার্ভে রেখে ৭০-৮০ শতাংশ লোন হিসেবে দিয়ে থাকে। যেটি লোন দেয়ার ক্ষেত্রে কারো কারো ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
৩. ব্যাংকের নেট অ্যাসেট
প্রত্যেক ব্যাংকেরই বাহিরে কিছু সম্পদ কেনা থাকে। আপনি একটি ব্যাংক নিরাপদ অবস্থানে আছে কিনা তা বুঝতে তাদের নেট অ্যাসেটের ভেলু যাচাই করে নিতে পারেন। ব্যাংক গুলোর নেট অ্যাসেট ভ্যালু সচরাচর তারা নাম করা পত্রিকা গুলোতে প্রকাশ করে থাকে।
৪. লিকুইডিটি মানি
যেসব ব্যাংকে নগদ অর্থের সংকট আছে, অর্থাৎ অর্থের যে তারল্য তা হিমসিম খাচ্ছে, এধরণের ব্যাংক গুলো কিছুটা রিস্কে থাকছে। অনেক সময় বিভিন্ন কারণে গ্রাহক এসকল ব্যাংকের উপর আস্থা হারিয়ে তাদের অর্থ উত্তোলনে মনোযোগি হয়। এক্ষেত্রে এই ব্যাংক গুলো কিছু সমস্যায় পড়ে। তাই এই ব্যাংক গুলো অনিরাপদ হিসেবে ভেবে নেয়াই ভালো।
৫. ব্যাংকের রেটিং
বিভিন্ন সোসাল মিডিয়া এবং ওয়েব সাইটে ব্যাংক গুলোর সার্ভিস নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে এবং রেটিংও দিয়ে থাকে। এগুলোর মাধ্যমেও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাংকের অবস্থান কেমন তা বুঝা যায়। সেই সাথে বাস্তবে তাদের সার্ভিস কেমন দিয়ে থাকে তাও বোঝা যায়।
আবার বিভিন্ন কোম্পানি আছে যারা ব্যাংকের সার্ভিস গুলোর ভিত্তিতে তাদের রেটিং দিয়ে থাকে। রেটিং দেখে বোঝা যায় একটি ব্যাংক কেমন সার্ভিস দিয়ে থাকে এবং কতোটা নিরাপদ তা।
বাংলাদেশের সবচেয়ে নিরাপদ ব্যাংক
যেমনটি বলছিলাম যে, বাংলাদেশে সব ব্যাংকই নিরাপদ। তবে আপনার সুবিধার্থে কয়েকটি ব্যাংকের একটি তালিকা দিয়ে দিচ্ছি যারা বর্তমানে ভালো করছে।
- ইসলামী ব্যাংক
- ব্র্যাক ব্যাংক
- ব্যাংক এশিয়া
- ডাচ বাংলা ব্যাংক
- সিটি ব্যাংক
এখানে শুধু প্রথম সারির কিছু ব্যাংকের নাম উল্লেখ করা হলো। এইখানে অন্য ব্যাংকে একাউন্ট না করার জন্য বলা হচ্ছে না। আপনি যেকোনো ব্যাংকে একাউন্ট করতে পারেন। আশা করি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাবে এমন কিছু নিয়ে ভাবার সময় এখনো হয়নি।
কোন ব্যাংকে একাউন্ট করলে ভাল হবে?
দেশে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থাকা ব্যাংক গুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক অন্যতম। তাই আমার রেকমেন্ডেশন থাকবে এই ব্যাংকে একাউন্ট করার। এখানে তাদের গ্রাহক সেবাও খুবই ভালো। তাদের ব্যাংকে একাউন্ট করতে পারবেন ঘরে বসেই। অন্যান্য ব্যাংকেও একাউন্ট করতে পারেন, আপনার সুবিধা বিবেচনা করে। একাউন্ট করার নিয়ম দেখে নিন।
ইসলামী ব্যাংক | ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট খোলার নিয়ম |
ব্র্যাক ব্যাংক | ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম |
ব্যাংক এশিয়া | ব্যাংক এশিয়া একাউন্ট খোলার নিয়ম |
ডাচ বাংলা ব্যাংক | ডাচ বাংলা ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম |
সিটি ব্যাংক | সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম |
ঘরে বসে কিভাবে ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট করতে পারেবন এবং তা কিভাবে ঘরে বসে পরিচালনা করবেন তা সহ আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন “ইসলামী ব্যাংক“।
আরো পড়ুন- ফিক্স ডিপোজিট করার জন্য কোন ব্যাংক ভালো হবে। |
শেষকথা
বাংলাদেশের কেন্দ্রিয় ব্যাংক বাংলাদেশের সব ব্যাংক সমূহকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মুটামুটি তাদের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেন। তাই এটি সহজে বলা যায় না যে ব্যাংক গুলো দেউলিয়া হয়ে যাবে।
কখন যদি কোনো ব্যাংকের আসলেই খারাপ অবস্থা হয়, তখন তারা এই কেন্দ্রিয় ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ধরণের সাপোর্ট পায়ে থাকে কাম বেক করার জন্য। তাই বলা যায় যে মুটামুটি সব ব্যাংক নিরাপদ।
তবে এতসব সাপোর্ট পাওয়ার পরও যে ব্যাংক কখন দেউলিয়া হয়না তা কিন্তু বলা যাবে না। তবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এই রকম ব্যাংকের দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার নজির নেই।
তাই দুশ্চিন্তা না করে আপনার উচিত হবে যেসকল ব্যাংক ভালো করছে এবং খুব বেশি গ্রাহকদের বিশ্বস্ততা পাচ্ছে তাদের ব্যাংক গুলোতে একাউন্ট করা।
কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর
এটা অবশ্যই বলতে হবে যে কোনো ব্যাংকে টাকা রেখে দেয়ার থেকে তা কোথাও ইনভেস্ট করা সবচেয়ে উত্তম। কেননা আপনি যখন টাকা ব্যাংকে রেখে দিচ্ছেন তখন আপনার টাকা কিন্তু জমা থাকছে।
এর বিপরীতে হয়তো ব্যাংক আপনাকে খুব ছোট একটি লাভ দিবে, তবে তা যদি আপনি সময়ের সাথে বাড়া ইনফ্লেশন এর সাথে হিসেব করতে যান তবে দেখবেন তা আপনার জন্য খুবই কম, তেমন কোনো লাভ নিয়ে আসছে না। তাই টাকা রেখে দেয়ার থেকে ভালে তা ইনভেস্ট করা।
এক্ষেত্রে ব্যাংকের সুনাম, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং সরকারি বিধিবিধানের মতো বিভিন্ন বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়ার পর ব্যাংকের সুদ, ফি এবং গ্রাহক পরিষেবার মতো বিষয়গুলিও বিবেচনায় নেয়া উচিত। এভাবে আপনি আপনি আপনার জন্য একটি নিরাপদ ব্যাংক বেছে নিতে পারবেন।
আরো পড়ুন
- ডলারের দাম বাড়ে কমে কেন?
- ব্যাংকের চেক বই হারিয়ে গেলে করণীয় কি?
- ব্যাংক এবং এনজিও এর মধ্যে পার্থক্য কি?
- বেসরকারি বা সরকারি ব্যাংকে চাকরির যোগ্যতা যা চাওয়া হয়
- এক ব্যাংকের চেক অন্য ব্যাংকে জমা দেয়ার নিয়ম
অনলাইন ব্যাংকিং | বাংলাদেশে অনলাইন ব্যাংকিং সম্পর্কে জানুন |
ব্লগের হোমে যেতে | bankline |