বিদেশ থেকে ইসলামী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম
আপনারা যারা বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম খুজছেন তাদের জন্য ইসলামী ব্যাংক একটি ভালো মাধ্যম হতে পারে। বিদেশ থেকে ইসলামী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম অনুসরণ করে আপনি খুব সহজেই দেশে আপনার প্রিয় জনের কাছে টাকা পাঠাতে পারবেন।
IBBL বা ইসলামী ব্যাংকের দুটি এপস আছে, “Cellfin এবং M Cash”। এ দুুটি এপস ব্যবহার করে ও বিদেশ থেকে ইসলামী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম অনুসরণ করে আপনি আপনার Remittance দেশে আনতে পারবেন। এই পোস্টে আপনি সেলফিনে রেমিটেন্স গ্রহণের বিস্তারিত এবং সংক্ষেপে এমক্যাশে রেমিটেন্স গ্রহণ সম্পর্কে জানতে পারবেন।
তো চলুন দেখে নেয়া যাক বিদেশ থেকে ইসলামী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম এবং তা কিভাবে দেশ থেকে রিসিভ করবেন। সম্পূর্ণ প্রকৃয়াটি বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হলো। সেই সাথে ইসলামী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন এবং উত্তরও থাকছে আজকের এই পোস্টের একদম শেষে।
Table of Contents
ইসলামী ব্যাংকে রেমিটেন্স পাঠানো সংক্রান্ত বিস্তারিত
বিদেশ থেকে ইসলামী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম এখানে ধাপে ধাপে দেখানো হবে। প্রতিটি নিয়ম এখানে বলে দেয়া হবে বিস্তারিত ভাবে। টাকা রিসিভ করার আগে কি করতে হবে বা টাকা পাঠানোর পরে কি করতে হবে সবই উল্লেখ থাকবে।
আপনি এই নিয়ম অনুসরণ করে খুব সহজে বিদেশ থেকে আপনার যে রেমিটেন্স তা বাংলাদেশে নিয়ে আসতে পারবেন। আপনার যদি বিস্তারিত পড়ার পরও কোনো অসুবিধা হয় বুঝতে তবে আপনি শেষে দেয়া নাম্বারে যোগাযোগ করে বুঝে নিতে পারবেন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
বিদেশ থেকে ইসলামী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম
আপনারা হয়তো ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন এপ সম্পর্কে জেনে থাকবেন। এই এপটি ব্যবহার করতে আপনাকে প্রথমে একটি ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট তৈরী করতে হবে। চাইলে আপনারা অনলাইনেও এই একাউন্ট খুলতে পারবেন। আর একাউন্ট যদি থেকে থাকে তাহলে আপনাকে সেটা সেলফিনের সাথে যুক্ত করতে হবে।
আপনাকে যিনি টাকা পাঠাবেন তাকে ইসলামী ব্যাংকের ফরেন রেমিটেন্স হাউজ গুলো খুজে নিতে হবে। সেই সাথে যিনি টাকা পাঠাবেন তার আপনার কিছু তথ্যও প্রয়োজন হবে। সেখানে ব্যাংকে গিয়ে আপনার এসব তথ্য টাকা সহ সাবমিট করলে তারা তাকে একটি ইউজার স্লিপ দিবেন। সেই সাথে টাকা ট্রান্সফার করে দিবে।
যেসব জিনিস দরকার হবে
বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে রিসিভারের (অর্থাৎ আপনার বা যিনি টাকা গ্রহণ করবেন) কিছু তথ্য প্রয়োজন হয় যা সেন্ডার কে সরবরাহ করতে হয়। যা যা দরকার হবে তা নিচে উল্লেখ করে দেয়া হল।
- সেলফিন ফ্রি ভার্চুয়াল কার্ড নাম্বার।
- একাউন্ট ধারীর পুরো নাম।
- একাউন্ট ধারীর মোবাইল নাম্বার।
উক্ত জিনিস গুলো যেখানে পাবেন:
আপনি যদি একটি সেলফিন একাউন্ট তৈরি করেন তবে আপনি একটি ফ্রি ভার্চুয়াল কার্ড পাবেন। এটি সবার জন্য ফ্রি। এই কার্ডের একটি নাম্বার থাকে। এই নাম্বারটি যিনি টাকা পাঠাবেন তাকে দিতে হবে।
সেই সাথে আপনার পুরো নাম যেটা আপনি ব্যাংকে ব্যবহার করেছেন সেটা আপনার পরিচয় পত্র থেকে নির্ভুল ভাবে দিবেন এবং আপনার পার্সনাল মোবাইল নাম্বারও দিতে হবে।
রেমিটেন্স পিন
ফরেন রেমিটেন্স হাউজ গুলোতে আপনার দেয়া এসব তথ্য সহ টাকা সহ সাবমিট করলে তারা তাকে (মানি সেন্ডারকে) যে একটি ইউজার স্লিপ সরবরাহ করে সেই স্লিপে একটি পিন ও বেশ কিছু তথ্য দেয়া থাকবে।
এই পিনটি পরবর্তিতে আপনার প্রয়োজন হবে যখন আপনি টাকা গ্রহণ করতে যাবেন। তাই আপনার সেন্ডার থেকে এই পিনের ব্যপারে জিঙ্গেস করুন এবং তা সংগ্রহ করুন।
আরো পড়ুন- রেমিটেন্স পাঠানোর বিভিন্ন উপায় গুলো দেখুন
বিদেশ থেকে টাকা রিসিভ করার নিয়ম
প্রথমে যথা নিয়মে নাম্বার ও পিন দিয়ে আপনাকে আপনার সেলফিন একাউন্টে লগ ইন করে নিতে হবে। এরপর আপনার সামনে এপের হোম পেজটি ওপেন হয়ে যাবে। সেখানে রিসিভ রেমিটেন্স নামে একটি অপশন পাবেন। সেই অপশনে ক্লিক করতে হবে।
এখন আপনার সামনে একটি ফর্ম আসবে যেখানে আপনাকে বেশ কিছু তথ্য প্রদান করতে হবে। এই প্রয়োজনিয় তথ্য গুলো যেগুলো আপনাকে দিতে হবে তা আমি নিচে তুলে ধরলাম।
- Sender’s name বা যিনি টাকা পাঠাবেন তার নাম।
- Sender’s Country বা যে দেশ থেকে পাঠাচ্ছেন।
- Sender’s mobile number বা যিনি টাকা পাঠাবেন তার মোবাইল নাম্বার।
- Amount বা কি পরিমান টাকা পাঠাচ্ছেন।
- Remittance pin বা একটি গোপন কোড।
- 6 digit pin বা আপনার পাসওয়ার্ড।
সেন্ডার নেম অবশ্যই ঠিক মতো জেনে নিয়ে দিতে হবে এবং যে দেশ থেকে পাঠাচ্ছে সেই দেশের নাম ও মোবাইল নাম্বার সহ। টাকার পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় হিসেব করে লিখতে হবে। এক্ষেত্রে গুগল থেকে জেনে নিন বর্তমানে উক্ত দেশের টাকার রেট বাংলাদেশি টাকায় কতো তা।
তারপর যিনি টাকা পাঠিয়েছেন তিনি ব্যাংক থেকে যে স্লিপটি পেয়েছেন সেখানে রেমিটেন্স পিন নাম্বারটি দেয়া থাকবে। সেই নাম্বারটি সংগ্রহ করে তা এখানে দিয়ে এবং শেষে ৬ ডিজিটের আপনার যে সেলফিন পাসওয়ার্ডটি তা দিয়ে নিচে থাকা সাবমিট অপশনে ক্লিক করতে হবে।
একাউন্টে টাকা ঢুকার পর একাউন্ট ব্যালেন্স জানতে পড়ুন- ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট চেক করার নিয়ম এই পোস্টি।
ভুল ইনফর্মেশন দিলে যা হবে
ভুল তথ্য দিলে আপনার টাকা আটকে যাবে। এটি আপনার একাউন্টে যুক্ত হবে না। সেক্ষেত্রে আপনাকে ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। হয়তো এজন্য কিছু ঝামেলা পোহাতে হতে পারে। তাই আপনার উচিত এ ব্যাপারে প্রথম থেকে সচেতন থাকা এবং যে সকল ইনিফরমেশন দিচ্ছেন তা ঠিক আছে কিনা নিশ্চিত করা।
টাকা পেতে কত সময় লাগবে?
আপনার দেয়া তথ্য ব্যাংকের রেমিটেন্স শাখা চেক করবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আপনি হয়তো এক থেকে দুই ঘন্টার মধ্যে আপনার টাকা একাউন্টে যুক্ত হতে দেখবেন। আপনাকে একটি ম্যাসেজের মাধ্যমে তা জানিয়ে দেয়া হবে। তবে এই সময় বিভিন্ন ব্যাংক অনুযায়ি বিভিন্ন হতেও পারে।
ইসলামী ব্যাংক রেমিটেন্স বোনাস
বর্তমানে সরকারী ভাবে রেমিটেন্সের উপর প্রনোদনা প্রদান করা হচ্ছে। এখন যারা দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন তাদের পাঠানো টাকার উপর ২.৫ % হারে এই প্রনোদনা প্রদান করা হচ্ছে। তাহলে আপনি যদি ১০০,০০০ টাকা দেশে পাঠান, সেই টাকার সাথে আপনি আরো এক্সট্রা ২৫০০ টাকা পাবেন।
একনজরে বিদেশ থেকে ইসলামী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম
- আপনার ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট লাগবে,
- একাউন্টের কিছু তথ্য রেমিটেন্স সেনন্ডারকে পাঠাতে হবে,
- রেমিটেন্স সেন্ডার ফরেন রেমিটেন্স হাউজ থেকে আপনার একাউন্টে টাকা পাঠাবে,
- টাকা পাঠানোর পর আপনাকে রেমিটেন্স পিন সরবরাহ করবে,
- সবশেষ টাকা রিসিভ করার নিয়ম অনুসরণ করে আপনি টাকা রিসিভ করবেন।
কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর
টাকা রিসিভ করার জন্য আপনাকে সেলফিন এপের রেমিটেন্স অপশন থেকে একটি ফর্ম পূরণ করে সেটা সাবমিট করতে হবে। সেটা ব্যাংক চেক করার পর সব ঠিক থাকলে আপনার টাকা ব্যাংক একাউন্টে যুক্ত হয়ে যাবে। ডিটেইলস পড়ুন এই পোস্টে…
এই পিনটি মানি সেন্ডার টাকা পাঠানোর সময় ব্যাংক তাকে একটি ইনভয়েজ দিয়ে থাকে। যে ইনভয়েজে একটি রেমিটেন্স পিনও দেয়া থাকে। সুতরাং আপনাকে যিনি টাকা পাঠাবেন তার কাছ থেকে এই রেমিটেন্স পিন সংগ্রহ করুন।
আরো পড়ুন- ইসলামি ব্যাংকগুলো কি ঘুরিয়ে সুদ খায়?
ইসলামী ব্যাংক এমক্যাশে রেমিটেন্স পাঠানোর নিয়ম
সেলফিনের পাশাপাশি আপনি এমক্যাশেও বিদেশ থেকে রেমিটেন্স পাঠাতে পারবেন। বিদেশে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর অফিস বা মনোনীত যেকোন এজেন্ট ও এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে সরাসরি এমক্যাশ একাউন্টে টাকা পাঠানো যাবে।
এখানে খুব দ্রুততার সাথে টাকা জমা হবে। টাকা জমা হলে আপানার নাম্বারে একটি এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। এজেন্ট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মনোনীত এজেন্টের কাছ থেকে এই টাকা উত্তোলন করা যাবে।
উপরে সেলফিনে টাকা পাঠানোর নিয়মের অংশে এজেন্ট ও এক্সচেঞ্জ হাউজ গুলোর একটি লিংক পেয়ে যাবেন। সেখান থেকে চেক করে নিন কোন কোন দেশ থেকে সরাসরি টাকা পাঠাতে পারবেন ইসলামী ব্যাংকে।
এমক্যাশ একাউন্টে টাকা পাঠানোর জন্য যা প্রয়োজন
- টাকার পরিমান নির্ধারণ করা।
- গ্রহীতার নাম।
- ১২ ডিজিটের এমক্যাশ একাউন্ট নাম্বার।
- ব্যাংকের নাম : ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।
ইসলামী ব্যাংক একাউন্টে রেমিটেন্স পাঠানোর নিয়ম
বর্তমানে এক্সচেইন্জ হাউজগুলো থেকে কিছু ইনফর্মেশন দেয়ার মাধ্যমে আপনি বিদেশ থেকে ইসলামী ব্যাংকের একাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠাতে পারবেন। এরজন্য আপনার নিকটস্থ এক্সচেইন্জ হাউজের সহযোগিতা নিন। এখানে আপনার যেসকল ডকুমেন্টস দরকার হবে:
- ব্যাংকের সুইফট কোড।
- রিসিভারের অ্যাকাউন্ট নম্বর।
- প্রাপকের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার।
- স্থানান্তরের উদ্দেশ্য।
আর ইসলামী ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট দিয়েও বিদেশ থেকে টাকা রিসিভ করা যায়।
ইসলামী ব্যাংকের অন্যান্য পোস্টগুলো
- ইসলামী ব্যাংক অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম
- সহজে ইসলামী ব্যাংকের চেক লেখার নিয়ম
- ইসলামী ব্যাংক ডিপিএস রেট ও ডিপিএস খোলার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত
- ইসলামী ব্যাংক লোন সংক্রান্ত যাবতিয় তথ্য