একাউন্ট পে চেক জমা দেয়ার নিয়ম দেখে নিন
আমরা অনেকেই আছি যারা একাউন্ট পে চেক জমা দেয়ার নিয়ম জানি না। তাই আপনাদের সুবিধার্থে একাউন্ট পে চেক জমা দেয়ার নিয়ম এর পাশাপাশি নিচে একাউন্ট পে চেক পূরণ করার নিয়মও তুলে ধরলাম।
একাউন্ট পে চেক কে ক্রস চেক বা দাগ কাটা চেকও বলা হয়। এই একাউন্ট পে চেক জমা দেয়ার আগে তা নিয়ম মেনে পূরণ করতে হয়। প্রচলিত চেক লেখার মতোই কাছাকাছি নিয়ম। হয়তো একটু ভিন্ন হবে। আপনার চিন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ এই পোস্টে আপনার জন্য এসব ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আপনার পে চেকটি যদি পূরণ করা থাকে তবে একাউন্ট পে চেক জমা করার নিয়মটি দেখে নিন। আর যদি পূরণ করার নিয়ম জানতে চান, তবে দেখে নিন চেক লেখার নিয়ম নিঁচে থেকে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
একাউন্ট পে চেক জমা দেয়ার নিয়ম (সংক্ষেপে)
একাউন্ট পে চেক জমা দেয়ার নিয়ম ব্যাংক এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ধরণের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।সাধারণভাবে, নিম্নলিখিত নিয়ম এবং পদ্ধতিগুলি প্রযোজ্য হয়।
- চেকটি অনুমোদন করুন
- একটি ডিপোজিট স্লিপ পূরণ করুন
- চেক এবং ডিপোজিট স্লিপ জমা দিন
- তারপর ব্যাংক চেক যাচাই করবে, এরজন্য অপেক্ষা করুন
- অর্থ প্রদানের জন্য অপেক্ষা করুন
নিচে এগুলোর বিস্তারিত আলোচনা দেখতে পাবেন।
পে চেক লেখার নিয়ম
চেক লেখার ক্ষেত্রে সতর্কতা
- ব্যাক্তির নামে একাউন্ট পে চেক দিলে, তার এনআইডিতে দেয়া নাম নির্ভুল ভাবে লিখুন।
- কোম্পানিকে এই একাউন্ট পে চেক দিলে, কোম্পানির যেই নামে ব্যাংকে একাউন্ট আছে সেই নামটি ব্যবহার করুন।
- টাকার পরিমাণ অংকে লিখার সময় /- চিন্হ ব্যবহার করুন।
- টাকার পরিমাণ এবং /- চিন্হের মাঝখানে কোনো ফাকা জায়গা রাখবেন না, যেমন: (১০,০০০ /-) এভাবে। এতে কেউ চাইলে মাঝে আরেকটি শূন্যও বসিয়ে দিতে পারে।
- চেকে কি লিখবেন আগেই ঠিক করুন যাতে কাটা ছেড়া না হয়।
- একদিনে একটির বেশি চেক ব্যবহার করতে পারবেন না। তাই এব্যপারটি মাথায় রাখবেন যাতে সমস্যায় না পড়তে হয়।
- চেক লিখার পর চেকের পিছনে আপনার সিগনেচার দুবার আপনার মোবাইল নাম্বার সংযুক্ত করে দিন।
পে চেক পূরণ করার নিয়ম
আপনার ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট থেকে অন্য একাউন্টে টাকা পে করতে যেভাবে আপনার চেক লিখতে পারেন কোনো প্রকার কনফিউশন ছাড়া, তা নিচে পর্যায়ক্রমে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো। সেই সাথে আপনার সুবিধার্থে ব্যাংকের চেকের ছবি সহ দেয়া হলো।
চেক পূরণ করতে পারবেন বাংলায় বা ইংলিশে। চেকের বড় অংশটি যেভাবে পূরণ করবেন তা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো।
#১. Pay To
চেকের ব্যাংকের অংশের গ্রাহক কতৃক পূরণিয় যে অংশটি আছে, সেখানে Pay To একটি অপশন আছে। এই অপশনে আপনাকে উল্লেখ করতে হবে আপনি কাকে টাকা গুলো দিচ্ছেন।
ধরুন আপনি আপনার নিজের জন্য টাকা গুলো তুলতে চান। তবে আপনাকে লিখতে হবে “নিজ” বা “Self“। আবার যদি চান অন্য কাউকে টাকা দিতে, তবে তার নাম উল্লেখ করবেন।
#২. The Sum of Taka
এখানে আপনাকে আপনার টাকার পরিমাণ লিখতে হবে। ধরুন আপনি ১০,০০০ টাকা তুলতে চান, তবে তা আপনাকে কথায় লিখতে হবে ”দশ হাজার টাকা মাত্র”, বা “Ten Thousand Taka Only“। লিখে দুপাশে কলম দিয়ে টেনে দিন। আরো ভালো করে বুঝতে নিচে আরেকটি চেকের ছবি দেয়া হয়েছে, যা নিচের দিকে দেখতে পারবেন।
#৩. TK
The Sum of Taka এর ডানে TK এই অংশে আপনাকে আপনার টাকার পরিমাণ অংকে লিখতে হবে। যদি ১০,০০০ টাকা তুলতে চান তবে লিখতে হবে “১০,০০০/-”, বা “10,000” যেখানে ডান দিকে আমি (/-) এটি ব্যবহার করেছি।
এর কারণ হলো, ১০,০০০ এর পাশে যেনো আর কোনো শূন্য বা অন্য কোনো সংখ্যা দেয়ার মতো জায়গা না থাকে। কেউ যাতে এখানে চালাকি করে কিছু না করতে পারে এই জন্য সতর্কতা সরুপ এই ব্যবস্থ নিতে হবে। আর প্রয়োজন অনুযায়ি কমাও ব্যবহার করতে হবে।
#৪. Date
Date অংশটি পেয়ে যাবেন ডান দিকে একদম উপরে। এখানে খোয়াল করলে দেখতে পারবেন যে কিছু বক্স দেয়া আছে। বক্সের নিচে D D M M Y Y Y Y এমন লিখা আছে। এখানে D অংশে তারিখ, M অংশে মাস, এবং Y অংশে বছর দিতে হবে। যেমন ২ ১ ১ ২ ২ ০ ২ ৩ এভাবে বা 21 12 2023 এভাবে দিন, মাস এবং বছর দিতে হবে। আরো ভালো করে বুঝতে নিচে ছবি দেখুন।
#৫. Please Sign Above the line
নিচের দিকে খেয়াল করলে দেখতে পারবেন যে ছোট করে লিখা Please Sign Above the line, যেখানে আপনাকে আপনার সিগনেচার দিতে হবে। সেই সাথে চেকের পিছনে দুটি সিগনেচার দিয়ে দিবেন এবং সাথে আপনার মোবাইল নাম্বার টিও দিয়ে দিবেন। আরো ভালো করে বুঝতে নিচে ছবিটি লক্ষ করুন।
#৬. Write A/P
চেকের বাম দিকে উপরে কোনায় দুটি দাগ দিয়ে ছোট করে লিখে দিন A/P, যা দিয়ে এই চেকটি যে একাউন্ট পে চেক তা বুঝাবে এবং ব্যাংক টাকা ব্যাক্তির কাছে না দিয়ে একাউন্ট টু একাউন্ট ট্রান্সফার করে দিবে।
আরো পড়ুন- ডাচ বাংলা ব্যাংকের চেক লেখার নিয়ম
একাউন্ট পে চেক জমা দেয়ার নিয়ম
#১. চেকটি অনুমোদন করুন: চেকের প্রাপককে অবশ্যই তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার আগে চেকের পিছনে স্বাক্ষর করে এটি অনুমোদন করতে হবে।
#২. একটি ডিপোজিট স্লিপ পূরণ করুন: প্রাপককে অবশ্যই একটি ডিপোজিট স্লিপ পূরণ করতে হবে, যেখানে তাদের নাম, অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং জমা করার পরিমাণ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ডিপোজিট স্লিপ ব্যাংক থেকে নেয়া যাবে।
#৩. চেক এবং ডিপোজিট স্লিপ জমা দিন: প্রাপককে অবশ্যই ডিপোজিট স্লিপ পূরণ করার পর পে-চেক সহ ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
#৪. ব্যাংক চেক যাচাই করবে: স্লিপ জমা করার পর ব্যাংক চেক যাচাই করবে এবং জমার কাজ শুরু করবে। ব্যাংক এবং চেকের পরিমাণের উপর নির্ভর করে এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত কয়েক দিন সময় নিতে পারে।
#৫. অর্থ প্রদানের জন্য অপেক্ষা করুন: একবার চেকটি ক্লিয়ার হয়ে গেলে, প্রাপকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঐ অর্থ পাওয়া যাবে।
এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, কিছু ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট পে চেক জমা করার জন্য অতিরিক্ত কোনো কিছুর প্রয়োজনীয়তা বা সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। যেমন ধরুন নতুন অ্যাকাউন্টের জন্য একটি হোল্ডিং পিরিয়ড থাকতে পারে। অতএব, নির্দিষ্ট নিয়ম এবং পদ্ধতির ব্যাপারে জানতে আপনার ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
আরো পড়ুন- এক ব্যাংকের চেক অন্য ব্যাংকে জমা দেয়ার নিয়ম
শেষকথা
ক্রস চেক, দাগ চেক বা একাউন্ট পে চেক পূরণ করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন। বিশেষ করে যাকে বা যে প্রতিষ্ঠানকে পে করছেন তার ব্যাংক একাউন্টে থাকা নাম যেন ভুল না হয় তাই এনআইডি অনুসারে নাম উল্লেখ করুন।
আপনার সুবিধার্থে ইসলামী ব্যাংকের একটি পে চেক পূরণ করে এই পোস্টে দেখানো হলো। এখানে চেকটি অন্যান্য চেকের মতো হলেও ভিন্নতা হলো একাউন্ট পে চেক বুঝানোর জন্য আপনি আপনার পেকটির উপরের একটি অংশে দাগ কেটে A/P লিখে দিবেন। তাহলে এই চেক জমা করার পর ব্যাংক টাকা উল্লেখিত নামের ব্যাংক একাউন্টে পে করে দিবে।
আরো পড়ুন- ব্যাংক থেকে টাকা তোলার নিয়ম
প্রশ্ন এবং উত্তর
যেকোনো চেকের মতো একাউন্ট পে চেকের মেয়াদও ছয় মাস।
না, একাউন্ট নাম্বার উল্লেখ করার কোনো অপশন নেই ও তা সেখানে উল্লেখ করা যাবে না।
আপনি যে কোম্পানিকে পে করবেন, সেই কোম্পানির ব্যাংক একাউন্ট কার নামে খোলা হয়েছে সেই বিষয়টি আপনাকে জানতে হবে। এটি জানতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করুন এবং তাদের একাউন্ট কার নামে খোলা, তার নামটি সংগ্রহ করুন।
একাউন্ট পে চেকের ক্ষেত্রে চেকের বাম পাশে উপরে A/P লিখে দিতে হয়। তবেই এটি একাউন্ট পে চেক হিসেবে গণ্য হয়।
ব্যাংক হিসাব নিয়ে আরো পড়ুন
- ব্যাংক ঋণের জন্য আবেদন পত্র লেখার নিয়ম
- ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট আবেদন
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর জন্য আবেদন
- নতুন চেক বইয়ের জন্য আবেদন করার নিয়ম
- এক ব্যাংকের চেক অন্য ব্যাংকে জমা দেয়ার নিয়ম
- ব্যাংকের চেক বই হারিয়ে গেলে করণীয়