ডলারের দাম বাড়ে কমে কেন? এতে কার লাভ কার ক্ষতি?
অন্যান্য মুদ্রার মতো USD বা মার্কিন ডলারের দামও বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে সরবরাহ ও চাহিদা দ্বারা নির্ধারিত হয়। বৈদেশিক মুদ্রার বাজার হল যেখানে মুদ্রা কেনা এবং বিক্রি করা হয় এবং এর মূল্য সেই মুদ্রার সরবরাহ ও চাহিদার দ্বারা নির্ধারিত হয়।
মার্কিন ডলারের সরবরাহ এবং চাহিদাকে প্রভাবিত করতে পারে এমন বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। সবচেয়ে সাধারণ কিছু কারণ থেকে জেনে নিন ডলারের দাম বাড়ে কমে কেন।
ডলারের দাম বাড়ে কমে কেন?
সুদের হার: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ দ্বারা সুদের হার পরিবর্তন, মার্কিন ডলারের চাহিদাকে প্রভাবিত করতে পারে। যদি ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়ায়, তাহলে এটি মার্কিন ডলার এর উপর বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে, যা চাহিদা বাড়াতে পারে। ফলে এর দাম বৃদ্ধি পেতে পারে। বিপরীতভাবে, যদি ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমায়, মার্কিন ডলারের চাহিদা কমতে পারে, যার ফলে এর দাম কমে যেতে পারে।
অর্থনৈতিক ডেটা: ইতিবাচক অর্থনৈতিক ডেটা, যেমন শক্তিশালী কর্মসংস্থান সংখ্যা বা জিডিপি বৃদ্ধি, মার্কিন ডলারের চাহিদা বাড়াতে পারে, যার ফলে এর দাম বেড়ে যায়। অন্যদিকে, নেতিবাচক অর্থনৈতিক তথ্য, যেমন দুর্বল কর্মসংস্থান সংখ্যা বা জিডিপি হ্রাস, মার্কিন ডলারের চাহিদা হ্রাস করতে পারে, যার ফলে এর দাম কমে যায়।
রাজনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা: রাজনৈতিক বা ভূ-রাজনৈতিক ঘটনা, যেমন নির্বাচন, যুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অনিশ্চয়তা এবং অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে। যার ফলে বিনিয়োগকারীরা মার্কিন ডলারের মতো নিরাপদ মুদ্রা খুঁজতে পারে। এই বর্ধিত চাহিদা মার্কিন ডলারের দাম বাড়ার কারণ হতে পারে।
মুদ্রার হস্তক্ষেপ: কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি তাদের মুদ্রার মূল্যকে প্রভাবিত করতে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে হস্তক্ষেপ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রচুর পরিমাণে মার্কিন ডলার কেনে, তবে এটি চাহিদা বাড়াতে পারে এবং মার্কিন ডলারের দাম বাড়াতে পারে।
মার্কিন ডলারের দামকে প্রভাবিত করতে পারে এমন অনেক কারণের মধ্যে এগুলি কয়েকটি। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার গতিশীল এবং ক্রমাগত পরিবর্তনশীল, এবং মার্কিন ডলারের দাম দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় কারণের বিস্তৃত পরিসর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।
ডলারের অবমূল্যায়নে লাভ ক্ষতি
কোনো মুদ্রার বিনিময় হার কমানো হলে তাকে অবমূল্যায়ন বলা হয়। আর বিনিময় হার বাড়ানো হলে তাকে বলা হয় পুনর্মূল্যায়ন বা ঊর্ধ্বমূল্যায়ন। বিশ্বে এখন ভাসমান বিনিময় হার নীতি মানা হয়। ফলে বাজারের চাহিদা-জোগানের ওপর মুদ্রার বিনিময় হার অনেকাংশে নির্ধারিত হয়।
তবে পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে চায় না অনেক দেশই। কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখে দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশও এই দলেই পড়ে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এখন মধ্যবর্তী মুদ্রা হলো ডলার। ফলে এখন মূলত ডলারের মুদ্রার বিপরীতেই অবমূল্যায়ন বা পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
অবমূল্যায়ন পছন্দ করেন মূলত রপ্তানিকারকেরা। প্রবাস থেকে যাঁরা দেশে টাকা পাঠান, তাঁরাও এ থেকে লাভবান হন। যেমন এক ডলারের বিপরীতে টাকার দর ৮৪ থেকে ৮৭ টাকা বাড়ানোর অর্থ হচ্ছে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে তিন টাকা। এতে রপ্তানিকারকেরা প্রতি ডলার আয় থেকে বাড়তি তিন টাকা বেশি হাতে পাচ্ছেন। এতে তারা রপ্তানিতে উৎসাহিত হন।
অন্যদিকে আমদানি করতে হয় ডলার ক্রয় করে। ফলে আগের চেয়ে দুই টাকা বেশি দিয়ে আমদানিকারকদের ডলার কিনতে হয়। এতে আমদানি ব্যয়ও বেড়ে যায়।
মূলত সামগ্রিক লেনদেনের মধ্যে ভারসাম্যে ঘাটতি হলে একটি দেশ অবমূল্যায়নের পথে হাটে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়কালে বাণিজ্য যুদ্ধে জয়ী হতে চীন তার মুদ্রার বড় আকারের অবমূল্যায়ন করেছিলো। তখন চীন চেয়েছিলো রপ্তানি বাড়ুক। রপ্তানিকারকেরা এতে উৎসাহিত হয়ে রপ্তানি বাড়িয়ে দেবেন, তাতে রপ্তানির আয় বাড়বে। তখন লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি কমে আসবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে চলতি হিসেবে রেকর্ড ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কেননা বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা যত আয় করছে, তার চেয়ে ব্যয় হচ্ছে আরো অনেক বেশি। কারণ এখানে কমেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ ও বেড়েছে আমদানি ব্যয়। যার ফলে ডলারে টান পড়েছে। আর এতেই কমে যাচ্ছে টাকার মান।
সচরাচর যাদের আমদানি কম, কিন্তু রপ্তানি বেশি, তারাই অবমূল্যায়নে বেশি আগ্রহী হন। আবার রপ্তানিও কম থাকলে অবমূল্যায়ন করা যায়। প্রত্যাশা করা হয় যে, রপ্তানিকারকেরা উৎপাদন বাড়িয়ে দেবে।
অবশ্য বাংলাদেশের মতো দেশে উৎসাহ পেলেই উৎপাদন বাড়বে, এমনটা সাধারণত দেখা যায় না। এ জন্য অব্যবহৃত উৎপাদন ক্ষমতা থাকতে হয়। ভালো বিনিয়োগের পরিবেশেরও প্রয়োজন হয়। এসব না পেলে উৎপাদন বাড়বে না।
উৎপাদন ঠিকই বাড়ছে না, কিন্তু বাড়ছে আমদানি ব্যয়। এর প্রভাবেই দেখা দেয় মূল্যস্ফীতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর ডলার আধিপত্ত চাঙাই থাকবে। য়ার ফলে ভালো খবর আপাতত নেই। সবকিছুই নির্ভর করছে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর।
আরো পড়ুন
- ব্যাংকের চেক বই হারিয়ে গেলে করণীয়
- এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম
- ব্যাংক একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম
- বন্ধ ব্যাংক একাউন্ট চালু করার নিয়ম
- ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম