এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম
বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থা কে ইতোমধ্যেই অনেক আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এখানে চমৎকার কিছু সেবা চালু করা হয়েছে এই সেক্টরে। এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম বা মাধ্যম বেশ কয়েকটি রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে আপনার জানা থাকা প্রয়োজন।
এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম এর মধ্যে বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (বিইএফটিএন) বা BEFTN । RTGS (Real Time Gross Settlement), এবং NPSB (National payment Switch Banglaesh) এই ৩টি অন্যতম উপায়। আপনি ঘরে বসেই এই উপায় গুলো ব্যবহার করতে পারবেন টাকা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে। এছাড়া ব্যাংকে গিয়েও আপনি অন্য ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফারের সুবিধা নিতে পারবেন।
চলুন জেনে নেই এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম গুলো বিস্তারিত। সেই সাথে ট্রান্সফার লিমিট কত, কত সময় নেয় ট্রান্সফার হতে, ইত্যাদি। এছাড়াও বহু জিঙ্গাসিত কিছু প্রশ্নের উত্তর ও এই পোস্টে খুজে পাবেন।
Table of Contents
অন্য ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়মগুলো
- BEFTIN ফ্রি, কিন্তু তুলনা মূলক বেশি সময় নেয় ট্রান্সফার হতে। টাকা পাঠানোর নিয়ম নিচে বিস্তারিত দেয়া হয়েছে।
- RTGS তাদের জন্য প্রয়োজন যাদের বড় এমাউন্ট ট্রান্সফার করতে হয়। যেমন ধরুন বড় ব্যবসায়িরা। এখানে একটি ফি কাটা হয় এবং ইন্সটেন্ট ট্রান্সফার হয়। টাকা পাঠানোর নিয়ম নিচে বিস্তারিত দেয়া হয়েছে।
- NPSB তে ইন্সটেন্ট ট্রান্সফার হয়, কিন্তু কোনো কোনো ব্যাংক চার্জ কাটে এবং কোনো কোনো ব্যাংক কাটে না। এখানে সার্ভিস অনুযায়ি চার্জ ভিন্ন হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন- ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম
BEFTN কি?
BEFTN এর মানে হচ্ছে Bangladesh Electronic Fund Transfer Network । এটি বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় খুবই চমৎকার একটি ব্যাংকিং সেবা। এই সেবা গ্রহিতা তার পছন্দের বা নিকটবর্তি যে কোন একটি ব্যাংকের শাখা সিলেক্ট করতে পারেন। সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে অন্য আরেকটি যে কোনো ব্যাংকের যে কোন শাখায় টাকা পাঠাতে পারবেন।
এটি করতে আপনি ব্যাংকে যাওয়ার পাশাপাশি যদি অনলাইনে সুবিধাটি নিতে ব্যাংক ভেদে তাদের অনলাইন সিস্টেম ব্যবহারের নিয়ম জেনে নিন, যেমন আপনি সোনালী ব্যাংকের ই-ওয়ালেট এপ থেকে BEFTN করতে পারবেন বা ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন থেকে সুবিধাটি পাবেন। আর ব্যাংকের মাধ্যমে কিভাবে করবেন তা নিচে আলোচনা করা হলো।
ট্রান্সফার লিমিট ( BEFTN transfer limit )
এই পদ্ধতিতে একদিনে মিনিমাম ১০০ টাকা থেকে শুরু এবং সর্বোচ্চ ৫০০,০০০ পর্যন্ত ২০ বারে ট্রান্সফার করতে পারবেন। এই ২০ বারের মধ্যেই আপনাকে ট্রান্সফারটি করতে হবে।
টাকা পাঠানোর নিয়ম?
শুধু মাত্র আপনার ব্যাংকের ”prescribed format” পূরন করে, সঙ্গে ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি সংযুক্ত করে এই প্রকৃয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। যে তথ্যগুলো প্রয়োজন হবেঃ
- ব্যাংক হিসাব নম্বর, ”Account Title” বা হিসাব শিরোনাম পূরন করতে হবে।
- আপনি যে ব্যাংকের যে শাখাতে টাকা পাঠাতে চান তা ঊল্লেখ করতে হবে।
- Beneficiary বা যার Account এ টাকা পাঠাতে চান সে ব্যাক্তির মোবাইল নম্বর।
- তারপর আপনার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর ও টাকা জমা করার উদ্যেশ্য, এগুলো পূরণ করতে হবে।
- সর্বশেষে আপনি মানি লন্ডারিং করছেন না এরুপ একটি ফরমে স্বাক্ষর করবেন।
এই পদ্ধতি অনুসরণ করে খুব সহজেই এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের যে কোন শাখাতে আপনি টাকা জমা করতে পারবেন।
এছাড়াও কোনো কোনো ব্যাংকের এপে বা অনলাইনে ব্যাংকিং এ সংযুক্ত থাকলে এই সুবিধা পেতে পারেন। ব্যাংকের ওয়েব সাইটের মাধ্যমে এই সুবিধা দিয়ে থাকে। যেখান থেকে সহজেই টাকা পাঠাতে পারবেন বাড়িতে বসেই।
ট্রান্সফার চার্জ
এ প্রকৃয়ায় কোনো চার্জ কাটে না।
আরো পড়ুন- লাভজনক স্থায়ী আমানত
কত সময় লাগে? ( BEFTN transfer time )
এ পদ্ধতি ২৪ ঘন্টা বা এক দিন সময় নিতে পারে। মানে আপনি যদি আজকে টাকা ট্রান্সফার করেন তবে গ্রহিতা পরদিন এই টাকা সংগ্রহ করতে পারবেন।
RTGS কি?
RTGS এর মানে হচ্ছে Real Time Gross Settlement। এ সিস্টেমেও অন্য যেকোনো ব্যাংকে টাকা পাঠাতে পারবেন। সাধারনত ব্যাবসায়ীরা এই RTGS পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন।
অনুমদিত কারেন্সি
এ পদ্ধতিতে ছয় ধরনের কারেন্সি ট্রান্সফার করা যাবে। কারেন্সি গুলো হলঃ
- টাকা
- ইউএস ডলার
- কানাডিয়ান ডলার
- ব্রিটিশ পাউন্ড
- ইউরো
- জাপানিজ ইয়েন
ট্রান্সফার লিমিট ( RTGS transfer limit )
টাকা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে এর একটি সর্বনিন্ম লিমিট রয়েছে। সর্বনিন্ম ১০০,০০০ টাকা থেকে শুরু হয় এটি এবং উর্ধ সিমা হচ্ছে ১৭ ডিজিট এর মধ্যে আপনি যত সংখ্যা লিখতে পারেন। তবে ফরেন কারেন্সি ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে নিন্মে কোনো নির্দিষ্ট লিমিট নেই। আপনি আপনার প্রয়োজন মতো ট্রান্সফার করতে পারবেন।
RTGS করার নিয়ম
RTGS এর জন্য আপনাকে ব্যাংকের একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে। সেখানে বেশ কিছু ইনফরমেশন চাইবে। সেগুলো হলঃ
টাকা গ্রহিতার বিস্তারিত
- রিসিভারের নাম
- রিসিভারের ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার
- ব্যাংক একাউন্টে থাকা নাম নির্ভুলভাবে
- ব্যাংকের ব্র্যাঞ্চের নাম
- উক্ত ব্র্যাঞ্চের রাউটিং নাম্বার
RTGS লেনদেনের বিস্তারিত
- RTGS ট্রান্সফার করার তারিখ
- RTGS ট্রান্সফারে কতো টাকা পাঠাবেন তা অঙ্কে
- RTGS ট্রান্সফারে কতো টাকা পাঠাবেন তা কথায়
টাকা প্রেরকের বিস্তারিত
- প্রেরকের নাম
- তার ঠিকানা
- যোগাযোগের নাম্বার
- টাকা পাঠানোর কারন
- প্রেরকের ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার
- প্রেরকের ব্যাংক চেকের নাম্বার
- চেকে উল্লেখিত তারিখ
এর পর সিগনেচার সহ ফর্ম টি ব্যাংকে জমা করতে হবে।
RTGS transfer time
এই ব্যবস্থার একটি সুবিধা হল এটি যে সময়ে টাকা ট্র্যান্সাফার করা হচ্ছে সেই সময়ে সঙ্গে সঙ্গে টাকা ট্রান্সফার হয়ে যায়। মানে কয়েক মিনিটের মধ্যেই একটি বড় অংকের অর্থ কোনো প্রকার সমস্যা ছাড়াই নিরাপদ ভাবে একটি ভিন্ন ব্যাংকে ট্রান্সফার করা যাবে। কখনো একটু সময় নিতে পারে, তবে তা ৩০ মিনিটের থেকে বেশি নয়।
ফান্ড ট্রান্সফার চার্জ ( RTGS transfer charge in bangladesh )
এখানে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত ফান্ড ট্রান্সফার ফি নিতে পারে।
NPSB কি?
NPSB এর মানে হচ্ছে National payment Switch Banglaesh। এটি একটি ইলেকট্রনিক অনলাইন প্লাটফর্ম, যার মাধ্যমে আন্ত ব্যাংকিং লেনদেন গুলো সম্পন্ন হয়। তবে এটি সব ব্যাংকে সাপোর্ট করে না।
বর্তমানে এটি ব্যবহার করে POS, ATM, Internet banking এর লেনদেন করছে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, বর্তমানে ৫৩ টির বেশি ব্যাংক এই NPSB এর আওতায় রয়েছে। তাদের যেকোনো একটির কার্ড দিয়ে তাদের অন্য যে কোনো ব্যাংকের ATM থেকে টাকা তুলতে পারবেন।[1]
ট্রান্সফার লিমিট
আপনি একটি ট্রান্জেকশনে সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা পাঠাতে পারবেন। এইভাবে দিনে আপনি সর্বোচ্চ ১০ টি ট্রান্জেকশন করতে পারবেন এবং এই ট্রান্জেকশনে সর্বোচ্চ ৩০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ট্রান্সফার করা যাবে।
কত সময় লাগে?
এ পদ্ধতিতে আপনি ইন্সটেন্ট টাকা পাঠাতে পারবেন। অর্থাৎ কয়েক সেকেন্ডর মধ্যে আপনি টাকা ট্রান্সফার করে দিতে পারবেন।
ফান্ড ট্রান্সফার চার্জ ( NPSB transfer charge )
এখানো কোনো কোনো ব্যাংক চার্জ কাটে আবার কোনো কোনো ব্যাংক কাটে না। চার্জ ব্যাংক অনুযায়ি ভিন্ন হয়।
টাকা পাঠানোর নিয়ম ( NPSB fund transfer )
এখন প্রায় সব ব্যাংকই তাদের মোবাইল এপ চালু করেছে। তাদের এই এপ গুলোতে সাধারণত তারা NPSB সুবিধা দিয়ে থাকে। সুতরাং আপনার যদি এমন কোনো ব্যাংকে একাউন্ট থাকে, এপস ডাউনলোড করে NPSB সিসটেমটি খুজে নিন। এই অপশনটি সাধারণত ফান্ড ট্রান্সফার অংশে খুজে পাবেন।
এছাড়াও ব্যাংকে গেলে এই সুবিধা পেতে পারেন।
NPSB সিস্টেমে ইসলামী ব্যাংকের ফান্ড ট্রান্সফার ভিডিওতে দেখুন
শেষকথা
এই পোস্টে উল্লেখিত উপায়গুলোর বিশেষ সুবিধা হচ্ছে, আপনার নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি মুক্ত থাকতে পারবেন, সময়ও বাচাঁতে পারবেন। এছাড়াও পদ্ধতি সম্পর্কে জানা থাকলে যে কোনো জরুরী প্রয়োজনে আপনার নিকটস্থ যে কোন ব্যাংকে থেকে এই সেবা গ্রহন করতে পারবেন আপনার নিজের ব্যাংক একাউন্ট থেকে ট্রান্সফার দিয়ে।
আর অনলাইনে এসব সেবা পেতে আপনি ব্যাংক ভেদে তাদের নিজস্ব অনলাইন সিস্টেম সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। আপনার সুবিধার্থে আমরা বিভিন্ন সময় এই নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট নিয়ে আসবো এবং এগুলোর লিংক নিচে যুক্ত করে দিবে।