আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতিতেও ব্যাংকিং ডিপ্লোমা বাধ্যতামূলক
ব্যাংকের পর এবার দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রেও ব্যাংকিং ডিপ্লোমা বাধ্যতামূলক হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদেরও পদোন্নতি পাওয়ার জন্য ব্যাংকিং ডিপ্লোমার দুই পর্ব পাস করতে হবে। ব্যাংকের…
ব্যাংকের পর এবার দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রেও ব্যাংকিং ডিপ্লোমা বাধ্যতামূলক হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদেরও পদোন্নতি পাওয়ার জন্য ব্যাংকিং ডিপ্লোমার দুই পর্ব পাস করতে হবে।
ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম বাধ্যতামূলক করার পর থেকে এই নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে ব্যাংকারদের মধ্যে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাংকাররা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন। এমনকি এ সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
ব্যাংকারদের এমন ক্ষোভ ও সমালোচনার মধ্যে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তে অনড় অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন করে সেটির পরিধি বাড়ানোরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কার্যক্রমে সরাসরি সংশ্লিষ্ট নয়, যেমন: ডাক্তার, আইন কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, প্রচার ও প্রকাশনা পদে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা প্রযোজ্য হবে না। নতুন এ নির্দেশনা আগামী ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। ব্যাংকাররা বলছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে অনেকেই পদোন্নতির যোগ্যতা সম্পন্ন হবেন। আবার অনেকেই আছেন, যাঁদের পদোন্নতির সময় এরই মধ্যে পেরিয়েও গেছে। এখন তাঁরা ডিপ্লোমা পাস না করলে আর পদোন্নতির যোগ্য বিবেচিত হবেন না। তাই অনেক ব্যাংকার এ সিদ্ধান্তে চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে যে নির্দেশনা জারি করেছে তাতে বলা হয়েছে যে, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা দুই পর্বে পাস না করলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বা সমতুল্য পদের পরবর্তী পদে কোনো কর্মকর্তা পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন না। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ নিয়ম কার্যকর হবে।
দুই পর্বের পরীক্ষার প্রতি পর্বে ছয়টি করে ১২টি বিষয় থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কার্যক্রমে সরাসরি সংশ্লিষ্ট নয়, যেমন: ডাক্তার, আইন কর্মকর্তা, প্রকৌশলী (পুরকৌশল, যন্ত্রকৌশল, তড়িৎকৌশল, তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা), প্রচার ও প্রকাশনা পদে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা প্রযোজ্য হবেনা। নতুন এ নির্দেশনা আগামী ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
এদিকে তীব্র সমালোচনার মুখেও চলতি সপ্তাহে এক মিটিংয়ে পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারের মাধ্যমে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (আইবিবি) যৌথ ওই বৈঠকে এই পরীক্ষার নাম পরিবর্তনেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, ব্যাংকিং ডিপ্লোমার পরিবর্তিত নাম হবে ‘ব্যাংকিং প্রফেশনাল এগজামিনেশন’। শুধু নামে নয়, এ পরীক্ষার পুরো পদ্ধতিও সংস্কার করা হয়েছে। এরই মধ্যে পরীক্ষার সিলেবাস আধুনিকায়ন করে আইবিবির ওয়েবসাইটেও তা প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে সিলেবাস আরও পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা হবে, যাতে করে পেশাগত জ্ঞানের ক্ষেত্রে ব্যাংকাররা হালনাগাদ বিষয়গুলো জানতে পারেন। এ পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন, খাতা মূল্যায়ন ও গুণগত মান আরও বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবেও বলে জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষার পদ্ধতিতে সংস্কারের প্রাথমিক কার্যক্রম হিসেবে এ পরীক্ষার পাসের নম্বর ৫০ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগে ৪৫ শতাংশ নম্বর পেয়েই পাস করতে হতো। মাঝে পাস নম্বর বাড়ানোর ফলে অনেকেই এ পরীক্ষায় আর পাস করতে পারছেন না।
আইবিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সর্বশেষ পরীক্ষায় প্রথম পর্বে সব বিষয়ে পাস করেছেন ২ হাজার ১৯২ জন। যদিও অংশ নিয়েছিলেন মোট প্রায় ৪০ হাজার ব্যাংকার। আইবিবি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। তবে এটি পৃথকভাবে পরিচালিত হয়।