ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যাংকিং যেভাবে নিরাপদ করতে পারেন

ঈদের ছুটিতে ব্যাংক বন্ধ থাকার এই সময়ে আর্থিক লেনদেনে বড় ভরসা এখন মোবাইল ব্যাংকিং সেবা (এমএফএস)। এ ছাড়াও ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট বা অ্যাপসনির্ভর ব্যাংকিং সেবা চালু থাকছে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা।…

ADVERTISEMENT

ঈদের ছুটিতে ব্যাংক বন্ধ থাকার এই সময়ে আর্থিক লেনদেনে বড় ভরসা এখন মোবাইল ব্যাংকিং সেবা (এমএফএস)। এ ছাড়াও ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট বা অ্যাপসনির্ভর ব্যাংকিং সেবা চালু থাকছে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা। এই সময়ে এসব সেবা ব্যবহারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি, যা আপনাকে রক্ষা করতে পারে বড় আর্থিক ক্ষতি থেকে। ব্যাংকগুলো নিজেদের সেবা সুরক্ষিত রাখতে প্রযুক্তি ও নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে। ব্যাংকাররা মনে করেন, গ্রাহকদেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

এই সময়ে এসব সেবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ব্যাংকাররা। তাঁরা বলছেন, প্রথমত কার্ডের কোড বা পিন কারও সঙ্গে ভাগাভাগি (শেয়ার) করা যাবে না। এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা অ্যাপসনির্ভর সেবায় দ্বিস্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা বা পিন ব্যবহার করতে হবে। এমএফএসের ক্ষেত্রেও পিন কেউ যেন না জানে তা নিশ্চিত করতে হবে।

ADVERTISEMENT

গ্রাহকের ক্ষেত্রে কী ধরনের সচেতনতা প্রয়োজন, সে সম্পর্কে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান (এবিবি) ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাহক সতর্ক থাকলে ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে গ্রাহককে সব সময়ই নিজের কার্ডের বিভিন্ন তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে।

তিনি বলেন, ‘কার্ড নম্বর, পিন, সিভিভি কিংবা ওটিপি অন্য কারও সঙ্গে শেয়ার না করার মাধ্যমে গ্রাহক ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন। এ ছাড়া আমরাও প্রতিনিয়ত ই-মেইল, এসএমএস, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রচারণা কার্যক্রমের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’

ব্যাংকাররা বলছেন, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড এমন স্থানে রাখা উচিত, যেন সহজে কারও তা চোখে না পড়ে। মুঠোফোন বা ক্যামেরায় কেউ যাতে গ্রাহকের কার্ডের ছবি তুলতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। মূল্য পরিশোধের পর কার্ড ফেরত নেওয়া হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে। কার্ডে বিল পরিশোধের পর যে রসিদটি দেওয়া হয়, সেটি সরাসরি ফেলে না দিয়ে কুচি কুচি করে কেটে ফেলা অথবা পুড়িয়ে ফেলা উচিত। ফলে কার্ডের তথ্য অন্য কারও কাছে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

ADVERTISEMENT

গ্রাহকদের পরামর্শ দিয়ে তাঁরা বলেন, অকেজো হয়ে যাওয়া বা নষ্ট কার্ড কখনো সরাসরি আবর্জনার পাত্রে ফেলে দেবেন না। ক্রেডিট কার্ডের নম্বর বা এ-সম্পর্কিত স্পর্শকাতর তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। ব্যাংকের অনুমোদিত বা নির্ধারিত ব্যক্তি ছাড়া কার্ডের তথ্য অন্য কেউ চাইলে জিজ্ঞেস করে তাঁর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হোন। সাধারণত ক্রেডিট কার্ডের তথ্য আদান-প্রদানের জন্য ব্যাংকের নির্দিষ্ট ফোন নম্বর থাকে। এর বাইরে কোনো নম্বর থেকে ফোন করে কেউ কার্ডের তথ্য চাইলে সে সম্পর্ক নির্ধারিত ব্যাংক থেকে নিশ্চিত হোন। লেনদেনের যে পিন বা পাসওয়ার্ড আছে, তা যেন অন্য কেউ না জানে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

দেশে ডেবিট কার্ড বিতরণের শীর্ষে আছে ডাচ্‌-বাংলা, ইসলামী, ব্যাংক এশিয়া, দি সিটি ও সোনালী ব্যাংক লিমিটেড। আর ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে দি সিটি, ব্র্যাক, প্রাইম, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ইউসিবিএল। ডেবিট কার্ড আছে ৩ কোটির বেশি ও ক্রেডিট কার্ড ২১ লাখের বেশি। গত ফেব্রুয়ারিতে ডেবিট কার্ডে লেনদেন হয়েছিল ৩৬ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা ও ক্রেডিট কার্ডে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ডিজিটাল লেনদেনের ঝুঁকি সম্পর্কে প্রথম আলোকে বলেন, সব সেবাতেই ঝুঁকি আছে। তাই বলে তো সেবা বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। কেউ যদি কারও সঙ্গে পিন ভাগাভাগি না করেন, তাহলে জালিয়াতি হওয়ার ঝুঁকি কম। ব্যাংক সেবার পিন পরিবারের সদস্যদেরও জানানো যাবে না।

ADVERTISEMENT

তিনি বলেন, এমন অনেক ঘটনা পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে দেখা গেছে পরিবারের সদস্যরাই পিন জেনে নিয়ে জালিয়াতিতে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। এই সেবার জন্য ব্যাংকগুলো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। সামনের দিনে ব্যাংক সেবায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও রোবোটিকস আনতে হবে।

এ তো গেল কার্ডের নিরাপত্তার দিক। ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা অ্যাপসনির্ভর সেবাতেও কোনোভাবে পিন, পাসওয়ার্ড বা কোড অন্য কারও সঙ্গে শেয়ার বা ভাগাভাগি করা যাবে না। পাশাপাশি যে মোবাইল বা ডিভাইস থেকে এই সেবা ব্যবহার করা হচ্ছে, সেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেন পাসওয়ার্ড সংরক্ষিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য দ্বিস্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা ব্যবহার করতে হবে। এতে প্রতিটি লেনদেনের জন্য পৃথক নম্বর (ওটিপি) তৈরি হবে, যা লেনদেনের আগে মোবাইলে চলে আসবে। একইভাবে অ্যাপস বা ইউএসএসডি মাধ্যমে এমএফএস ব্যবহার করে লেনদেনে পিন বা কোড কারও সঙ্গে শেয়ার বা ভাগাভাগি করা যাবে না।

ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারে শীর্ষে আছে ডাচ্‌-বাংলার নেক্সাস পে, ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন, ব্র্যাক ব্যাংকের আস্থা, সোনালী ব্যাংকের ই সেবা, সিটি ব্যাংকের সিটি টাচ ও ইস্টার্ণ ব্যাংকের ইবিএল স্কাই। আর এমএফএসে শীর্ষে বিকাশ, এরপরই নগদ।

ADVERTISEMENT

ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের জানিয়েছে, অনলাইনে কেউ আপনার কার্ডের তথ্য চাইলে তা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন। ই-মেইলে কার্ডসংক্রান্ত তথ্যের অনুরোধ জানিয়ে কোনো মেইল পেলে তা এড়িয়ে চলুন। অনলাইনে কেনাকাটা করে মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে।

আরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, স্বীকৃত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে মূল্য পরিশোধের জন্য কার্ডের নম্বর দেবেন না। অনলাইন কেনাকাটার ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ইন্টারনেট ব্রাউজারের সহায়তা নিতে পারেন। কার্ড হারিয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন। দ্রুত সময়ে কার্ডটি লক হলে ক্ষতির সম্ভাবনা অনেকাংশে কমানো সম্ভব হয়।

ADVERTISEMENT

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *