যুক্তরাষ্ট্রে কেন শুক্রবারেই ব্যাংক দেউলিয়া ঘোষিত হয়

বাংলাদেশের মতো দেশে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও পশ্চিমা বিশ্বে কিন্তু শুক্রবার হচ্ছে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস। আর পশ্চিমা দুনিয়ায় এই শুক্রবারের সঙ্গে ব্যাংকধসের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আসলে বিষয়টি হলো, ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া বা তার দেউলিয়া হওয়ার ঘোষণা সাধারণত শুক্রবারই দেওয়া হয়।

ADVERTISEMENT

সিএনএনের সংবাদে এমন কিছু ব্যাংক বন্ধের তালিকা দেওয়া হয়েছে, যেগুলো এই শুক্রবারই বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

  • ১৪ মার্চ শুক্রবার ২০০৮: তারল্যসংকটে বন্ধ হয়ে যায় বিয়ার স্টার্নস।
  • ১২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ২০০৮: লেহম্যান ব্রাদার্সের নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করার আগে শেষ লেনদেন হয় এই শুক্রবারে।
  • ২৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ২০০৮: নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো ওয়াশিংটন মিউচুয়ালের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বৃহত্তম ব্যাংকধসের একটি নজির ছিলো।
  • ১০ মার্চ শুক্রবার ২০২৩: নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক বন্ধের ঘটনা।
  • ১০ মার্চ শুক্রবার ২০২৩: সিগনেচার ব্যাংক থেকে আমানতকারীরা ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলার তুলে নেয়। দুই দিন পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নেয়।
  • ১৭ মার্চ ২০২৩: ক্রেডিট সুইসের ধস ঠেকাতে ইউবিএস ব্যাংকটিকে কেনার দর ঘোষণা করা হয়।

ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া বা দেউলিয়া ঘোষণা করা অনেক বড় একটি সিদ্ধান্ত। এতে সচরাচর গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এ খবরে শেয়ারবাজারে ধসও নামে। তাই এ ধরনের ঘোষণা দেওয়ার ক্ষেত্রে দিনক্ষণ নির্ধারণ করাও জরুরি বিষয়। যেকোনো দিন হুট করে না দেওয়াই উত্তম।

ADVERTISEMENT

সিএনএনের সংবাদে বলা হয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো সাধারণত গ্রাহকদের আতঙ্কিত করতে চায় না। ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া বা দেউলিয়া ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত কখনো একদিনে হয় না। ব্যাংকের স্বাস্থ্য খারাপ হওয়া শুরু হলেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বেশ কিছুদিন সময় হাতে পায় পর্যবেক্ষণের জন্য। তখন তারা দেখেশুনে বা ধীরে সুস্থে এ ঘোষণা দিয়ে থাকে।

শুক্রবার বন্ধ বা দেউলিয়া ঘোষণা করা হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ৬০ ঘণ্টার মতো সময় পায়। শনি ও রোববার সবকিছু বন্ধ থাকলে শেয়ারবাজারে ধস কিছুটা হলেও ঠেকানো সম্ভব হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশন (এফডিআইসি) এর মুখপাত্র ডেভিড বার সিএনএনকে বলেন, বিষয়টা অনেকটাই সিনেমার মতোই– ৪৫ থেকে ৫০ জনের দল প্রিন্টার, কপিয়ার, কম্পিউটার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে কার্যালয়ে প্রবেশ করে। তারা তখন আগের রাতে কার্যালয়ে থাকা কর্মীদের নিয়ে হিসাব-নিকাশ করতে বসে যায় এই জন্য যে কোন সম্পদ বিক্রি করা যায়, তা ঠিক করতে।

ADVERTISEMENT

এই দলের মূল উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে, ব্যাংকের জঞ্জাল দূর করা, যাতে সোমবার সকালে আবার কার্যক্রম চালু করা যায়। এ ক্ষেত্রে আদর্শ মানদণ্ড হচ্ছে, নতুন মালিকানার অধীনে ব্যাংকটি আবার চালু করা।

নতুন মালিকানার অধীনে ব্যাংক চালু করতে পুরোনো অনেক কিছুই পরিবর্তন করা হয়– যেমন পোস্টার, ক্যাশিয়ার চেক ও অন্যান্য কাগজপত্র নবায়ন করা। সেই সাথে নতুন ব্যাংকের কাগজপত্র, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি প্রস্তুত করা।

তবে প্রয়োজন হলে শুক্রবার ছাড়া অন্যান্য দিনেও ব্যাংক বন্ধ বা দেউলিয়ার ঘোষণা আসতে পারে। যেমন ১৯৯৯ সালে ফার্স্ট ন্যাশনাল ব্যাংক অব কিস্টোন বুধবার ক্লোজ করে দেওয়া হয়।

ADVERTISEMENT

ডেভিড বার সিএনএনকে বলেন, তখন ওই ব্যাংকে বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে এবং ব্যাংকের প্রায় অর্ধেক সম্পদের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। কাজেই বুধবার এ ব্যাংক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এফডিআইসি গ্রাহকদের অর্থ পরিশোধ করতে বৃহস্পতিবারই চেক ইস্যু করার কাজ শুরু করে। কারণ, সোমবার ছিল শ্রমিক দিবস। সেদিন সব ব্যাংক বন্ধই থাকে।

এবার সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের আমানত তুলে নেওয়ার হিড়িক পড়ে গেলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষে আর শুক্রবার দিন শেষের জন্য অপেক্ষা করা সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার গ্রাহকেরা ৪২ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার আমানত তুলে নেন। শুক্রবারও তাঁরা ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার তুলে নেবেন—এমন সম্ভাবনা ছিল। সে জন্য দিনের মধ্যভাগেই ব্যাংকটি বন্ধ করার ঘোষণা দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এর ফলে রোববার রাতের মধ্যে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের আড়াই লাখের বেশি আমানতের বিমাও নিশ্চিত করতে পারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফলে সোমবার সকালেই সহযোগী ব্যাংকের মাধ্যমে এসভিবির সব গ্রাহক আমানত তুলে নেওয়ার সুযোগ পান।

ADVERTISEMENT
ADVERTISEMENT

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *