প্রকৃত ইসলামীক ব্যাংকগুলোর কর্ম পদ্ধতি যেমন হয়
প্রচলিত ব্যাংকগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইসলামী ব্যাংকগুলোও মূলত তিনটি কাজ করে থাকে। যথাঃ ১। আমানত সংগ্রহ ২। বিনিয়োগ প্রদান এবং৩। কমিশন ভিত্তিক সেবাদান। আমানত সংগ্রহ এর পদ্ধতি ইসলামী ব্যাংকিংয়ে ২…
প্রচলিত ব্যাংকগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইসলামী ব্যাংকগুলোও মূলত তিনটি কাজ করে থাকে। যথাঃ
১। আমানত সংগ্রহ
২। বিনিয়োগ প্রদান এবং
৩। কমিশন ভিত্তিক সেবাদান।
Table of Contents
আমানত সংগ্রহ এর পদ্ধতি
ইসলামী ব্যাংকিংয়ে ২ (দুই) পদ্ধতিতে আমানত সংগ্রহ করা হয়-
ক। আল-ওয়াদিয়াহ নীতি
খ। আল মুদারাবা নীতি
আল-ওয়াদিয়াহ আল আমানাহ (চলতি হিসাব) নীতি
আল ওয়াদিয়াহ শব্দটি আরবী। এটি ‘ওয়াদউন’ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ হচ্ছে-সংরক্ষণ করা, হেফাজত করা, নিরাপত্তা দান করা প্রভৃতি। ইসলামী পরিভাষায় আল ওয়াদিয়াহ হল- “ব্যবহার করার অনুমোদন বা অনুমতি সাপেক্ষে কোন দ্রব্য বা পণ্য তার মালিক কর্তৃক অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হেফাজত বা সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছায় আমানত বা গচ্ছিত রাখা।” ইসলামী ব্যাংকসমূহ আল-ওয়াদিয়াহ নীতিমালার ভিত্তিতে চলতি হিসাব খোলার মাধ্যমে জনগণের নিকট হতে ডিপোজিট সংগ্রহ করে।
আল-ওয়াদিয়াহ নীতিতে গ্রাহক ও ব্যাংকের মাঝে সম্পর্ক
আল ওয়াদিয়াহ চুক্তিতে দু’টি পক্ষ থাকে। যেমনঃ জমা গ্রহণকারী ও জমাকারী। জমাগ্রহণকারীর পক্ষকে বলা হয় ‘আল-মুস্তাউদা’। জমাকারী পক্ষকে বলা হয় ‘আল-মু-দি’। যে বস্তু জমা রাখা হয় তা হলো ‘আল ওয়াদিয়াহ’।
আল-ওয়াদিয়াহ নীতির শর্তসমূহ
‘আল ওয়াদিয়াহ’ হলো অর্থের নিরাপত্তা বিধানের চুক্তি। এর দ্বারা জমাকারী ব্যাংকের সাথে কোন ব্যবসায়ের কোনরূপ ঝুঁকি বহন করেন না। তিনি তার জমা টাকা যে কোন সময় ফেরত নেয়ার অধিকার রাখেন। এই পদ্ধতিতে জমাকারী ব্যাংকের কাছ থেকে কোন মুনাফা পান না। জমাকৃত অর্থের নিরাপদ হেফাজত করা ও অন্যান্য সেবা প্রদানের বিনিময়ে ব্যাংক জমাকারীর কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ নিতে পারে।
আল-ওয়াদি’আ বা চলতি হিসাবে ব্যাংক কেন মুনাফা প্রদান করে না
আল ওয়াদিয়াহ চলতি হিসাবের গ্রাহক তার প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা তুলতে পারেন। যেহেতু গ্রাহককে কোন ঝুঁকি বহন করতে হয়না, তাই ব্যাংক কোন মুনাফাও দিবে না। উসূলে ফিকহের ’লাভ ঝুঁকির সাথে ও ঝুঁকি লাভের সাথে’- এ নীতিমালার ভিত্তিতে চলতি হিসাবে ব্যাংক কোন মুনাফা প্রদান করে না।
শরীয়াহ লঙ্ঘনের ঝুকি
যদি গ্রাহকের কাছ থেকে যথাযথভাবে অনুমতি না নেয়া হয় বা গ্রাহক যদি নীতিটি না জেনে বুঝে স্বাক্ষর করেন বা তার অজ্ঞাতসারে স্বাক্ষর নিয়ে নেয়া হয় তাহলে শরীয়াহ লঙ্ঘনের ঝুকি থেকে যায়।
আল মুদারাবা নীতি
মুদারাবা এক প্রকার অংশীদারি ব্যবসা। যে ব্যবসায় এক পক্ষ মূলধন যোগান দেয় এবং দ্বিতীয় পক্ষ শ্রম, মেধা ও সময় ব্যয় করে এবং চুক্তি অনুযায়ী উভয়পক্ষ লভ্যাংশ গ্রহণ করে তাকে মুদারাবা বলে। আর লোকসান হলে তা মূলধন যোগানদাতাকে বহন করতে হয়। মুদারাবা পদ্ধতিতে ইসলামী ব্যাংক সমূহ সঞ্চয়ী ও বিভিন্ন মেয়াদী আমানত সংগ্রহ করে।
আল-মুদারাবা পদ্ধতিতে গ্রাহক ও ব্যাংকের মাঝে সম্পর্ক
মুদারাবা পদ্ধতিতে গ্রাহক মূলধন সরবরাহ করেন। তাকে বলা হয় ‘সাহিবুল মাল’ অন্যপক্ষ তথা ব্যাংক তার মেধা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, সামর্থ্য ও মেহনতের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনার উদ্যোগ নেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি ‘সাহিবুল মালের’ মূলধন ব্যবহার করেন। এই উদ্যোক্তা বা ব্যবস্থাপক পক্ষকে বলা হয় ‘মুদারিব’। আল মুদারাবা পদ্ধতিতে গ্রাহক হলেন ’সাহিবুল মাল’ অথবা ’রাব্বুল মাল’ আর ব্যাংক হল ’মুদারিব’।
শরীয়াহ লঙ্ঘনের ঝুকি
যদি গ্রাহকের কাছ থেকে যথাযথভাবে অনুমতি না নেয়া হয় বা গ্রাহক যদি নীতিটি না জেনেবুঝে স্বাক্ষর করেন বা তার অজ্ঞাতসারে স্বাক্ষর নিয়ে নেয়া হয় তাহলে শরীয়াহ লঙ্ঘনের ঝুকি থেকে যায়। যদি চুক্তি অনুপাতে গ্রাহককে লভ্যাংশ না দেয়া হয় বা হারাম/ সুদের মাধ্যমে অর্জিত অংশ বন্টন করা হয় তাহলে শরীয়াহ লঙ্ঘনের ঝুকি থেকে যায়।
বিনিয়োগ প্রদান
ইসলামী ব্যাংক একাধিক পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করে থাকে। সাধারণত ইসলামী ব্যাংক নগদ টাকা গ্রাহককে প্রদান করার কথা নয়। বিশেষ করে যেখানে ইসলামী ব্যাংক বিক্রেতা হিসেবে কাজ করে সেখানে ব্যাংক কর্তৃক গ্রাহককে নগদ অর্থ দেয়ার প্রশ্নই আসে না। যদি কোন ইসলামী ব্যাংক এক্ষেত্রে নগদ অর্থ প্রদান করে, তবে নিঃসন্দেহে শরীয়াহ লংঘন হবে। তবে ইসলামী ব্যাংক যেখানে ক্রেতা হিসেবে বা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করে, সেখানে ব্যাংক হতে নগদ অর্থ গ্রাহকের নিকট যেতে পারে। ইসলামী ব্যাংকসমুহের বিনিয়োগ কার্যক্রমসমূহ হলো-
বাই মুরাবাহাঃ বাই মুরাবাহা পদ্ধতিতে ব্যাংক পণ্য ক্রয় করে গ্রাহকের নিকট বিক্রয় করে। অর্থাৎ এখানে ব্যাংক প্রথমে হয় ক্রেতা এবং পরে হয় বিক্রেতা। বাই মুরাবাহা তিনটি স্তরে সম্পন্ন হয়। এগুলো হলো-
(ক) গ্রাহক ব্যাংকের কাছে নির্ধারিত পণ্য ক্রয়ের জন্য আসবে এবং এ বিষয়ে ব্যাংকের সাথে চুক্তি করবে। অর্থাৎ গ্রাহক ব্যাংককে নির্দিষ্ট পণ্য ক্রয় করার কথা বলবে এবং পরে গ্রাহক ব্যাংকের নিকট হতে পণ্যটি ক্রয় করবে।
(খ) ব্যাংক গ্রাহকের জন্য নিজে পণ্য ক্রয় করবে এবং নিজ অধিকারে পণ্য নিয়ে আসবে।
(গ) ব্যাংক পণ্যের ক্রয় মূল্যের সাথে তার নিজ খরচ যুক্ত করে গ্রাহকের নিকট মোট খরচ এবং মুনাফা যোগ করে তার পণ্যের মোট বিক্রয়মূল্য স্পষ্টভাবে ঘোষণা করবে এবং গ্রাহকের নিকট পণ্য হস্তান্তর করবে। গ্রাহক তাৎক্ষণিক অথবা নির্দিষ্ট মেয়াদের ভিতর পণ্যের মূল্য পরিশোধ করবে।
একটি উদাহরণের মাধ্যমে বাই মুরাবাহা পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা হলো। ধরুন আপনি পাথরের ব্যবসা করেন। আপনি পাথর ক্রয় করে স্টক করেন এবং বিভিন্ন সাইজের পাথর তৈরি করে বিক্রয় করেন। এখন আপনি ১০ লক্ষ টাকার পাথর ক্রয় করতে চান এবং এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকে বিনিয়োগের জন্য গেলেন। ইসলামী ব্যাংক যারা পাথর উত্তোলন করে, অর্থাৎ প্রাথমিক উৎপাদনকারীকে ১০ লক্ষ টাকা প্রদান করবে। এরপর ইসলামী ব্যাংক নিজে অথবা তার প্রতিনিধির মাধ্যমে পাথর উত্তোলনকারীদের নিকট হতে পাথর বুঝে নেবে এবং আপনার নিকট ১১ লক্ষ টাকার (ধরে নেয়া হলো) বিনিময়ে নির্দিষ্ট মেয়াদে পরিশোধ স্বাপেক্ষে পাথর বিক্রয় করবে।
যদি আপনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাথরের মূল্য ব্যাংককে পরিশোধ করতে না পারেন, তবে ব্যাংক কারণ অনুসন্ধান করে আপনাকে জরিমানা করতে পারে। কিন্তু এই জরিমানার অর্থ কোনভাবেই চক্রবৃদ্ধি হয়ে মূলধন বাড়াবে না। আবার জরিমানার অর্থ শরীয়াহ এর দৃষ্টিকোণ হতে সন্দেহজনক হওয়ায় এটি ব্যাংকের আয়ের হিসাবে না এসে জনকল্যাণমূলক তহবিলে চলে যাবে। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ না করলে হয় না, সেটি হলো বাই মুরাবাহা পদ্ধতিতে পণ্যের মূল্য একবারই নির্ধারণ করা যায়। কোনভাবেই একাধিকবার নির্ধারণ করা যায় না। তাই নির্ধারিত সময়ের পর জরিমানা করা হলে সেই জরিমানার অর্থ কোনভাবেই ব্যাংকের আয়ের হিসাবে আসবে না।
এখন সুদী ব্যাংকের মাধ্যমে সিসি লোনের সাহায্যে আপনি ১০ লক্ষ টাকার পাথর ক্রয় করতে পারবেন। আবার ইচ্ছে করলে ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে পাথর ক্রয় না করে বিদেশ ভ্রমণ করতেও পারেন। কারণ সুদী ব্যাংক আপনাকে জামানত রেখেই সিসি লোন ইস্যু করেছে। আপনি সময়মত ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে চক্রবৃদ্ধি সুদসহ মূলধন বাড়তে থাকবে তথা ব্যাংকের আয় বাড়তে থাকে এবং এক পর্যায়ে গ্রাহক দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনি সাদা চোখে দেখছেন ইসলামী ব্যাংক এবং সুদী ব্যাংক উভয় ব্যাংক হতে ১০ লক্ষ টাকার পাথর ক্রয় করা যায়।
কিন্তু উভয় পদ্ধতির বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য থাকে। এই পার্থক্যগুলো হলো-
(ক) ইসলামী ব্যাংক আপনাকে পাথরের ব্যবসা করতে বাধ্য করে, কিন্তু সুদী ব্যাংকের সিসি লোন এর অর্থ পাথরের ব্যবসা ছাড়া অন্য কোন অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় হতে পারে।
(খ) ইসলামী ব্যাংক তারা মুনাফা ১ লক্ষ নির্ধারণ করে গ্রাহককে ১১ লক্ষ টাকা পরিশোধের কথা বলে, তবে সেই ১১ লক্ষ টাকার আর কোন বৃদ্ধি ঘটবে না। কিন্তু সুদী ব্যাংকে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ যোগ হয়ে ১১ লক্ষ টাকা আরো অনেক বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে।
(গ) অর্থ পরিশোধের সময়সীমা অতিক্রম করলে ইসলামী ব্যাংক জরিমানা করতে পারে। কিন্তু জরিমানার অর্থ ইসলামী ব্যাংকের আয়ে যোগ হয় না। এটি সওয়াবের নিয়ত ছাড়াই জনকল্যাণমূলক ফান্ডে চলে যায়। ইসলামী অর্থনীতি হলো ইসলামী জীবন ব্যবস্থার একটি অংশ। যখন মানুষ ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হবে, তখন দেখা যাবে যে, মেয়াদ উত্তির্ণ হওয়ার কারণে ব্যাংকের জরিমানা করার কোন প্রয়োজন থাকে না। অর্থাৎ উপযুক্ত কোন কারণে গ্রাহকের মেয়াদ উত্তির্ণ হয়েছে, যেখানে গ্রাহকের কোন হাত নেই। এসব ক্ষেত্রে কোরআনের ভাষ্য অনুয়ায়ী গ্রাহক আরো কিছু সময় পেতে পারে।
অন্যদিকে মেয়াদ উত্তির্ণ হওয়ার সাথে সাথে সুদী ব্যাংকে চক্রবৃদ্ধি সুদের কারণে মূলধনের পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং এতে ব্যাংকের আয়ের পরিমাণও বাড়তে থাকে।
বাই মুরাবাহা হতে অনেকের মনে প্রশ্ন সৃষ্টি হতে পারে, বাকীতে মূল্য বৃদ্ধি করা শরীয়াহভিত্তিক কিনা? এ বিষয়ে রাসুল (সাঃ) এর স্পষ্ট হাদীস আছে। হাদীসটি হলো আয়শা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন “রাসুল (সাঃ) এক ইয়াহুদীর নিকট হতে নির্দিষ্ট মেয়াদে মূল্য পরিশোধের শর্তে খাদ্য ক্রয় করেন এবং নিজের লোহার বর্ম বন্ধক রাখেন। (সহীহ বুখারী, ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়)। তাছাড়া ঈমামগণ বাকীতে অধিক মূল্য পরিশোধ করা বৈধ বলেছেন।
ইসলামী ব্যাংকসমূহ তাদের বিনিয়োগের একটি বড় অংশ বাই মুরাবাহা পদ্ধতিতে করে থাকে। তবে জনগণের সচেতনতার অভাবে বাই মুরাবাহা পদ্ধতিতে বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। যেমন উপরের উদাহরণে গ্রাহক প্রাথমিক উৎপাদনকারীর সাথে যোগসাজস করে পাথর ক্রয় না করে ১০ লক্ষ টাকা নগদ নিয়ে অন্যকোন প্রয়োজনে ব্যয় করতে পারে। এটি নিঃসন্দেহে শরীয়াহ এর লংঘন হবে এবং বিনিয়োগ কার্যক্রম সুদী ব্যাংকের অনুরূপ হয়ে যাবে। ব্যাংকের শরীয়াহ বোর্ডের অডিটে এ ধরনের লেনদেন দৃষ্টিগোচর হলে এখান হতে প্রাপ্ত মুনাফা সন্দেহযুক্ত হওয়ায় জনকল্যাণমূলক তহবিলে চলে যাবে। আবার ব্যাংক নিজ অধিকারে পণ্য না এনে যদি পণ্য সরাসরি গ্রাহকের নিকট চলে যায়, তবে শরীয়াহ লংঘন হবে। কারণ হলো পণ্য ক্রয়ের পর গ্রাহকের নিকট পৌছানোর পূর্ব পর্যন্ত ঝুঁকি ব্যাংককে বহন করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে অর্থাৎ পণ্য গ্রাহককে পৌছানোর পূর্বে যদি পণ্যের কোন ক্ষতি হয়, তবে ব্যাংকের সেই ক্ষতি বহন করতে হবে। কিন্তু ব্যাংক যদি সেই ঝুঁকি গ্রহণ না করে তবে বাই মুরাবাহাতে শরীয়াহ লংঘন হবে।
বাই মুয়াজ্জলঃ বাই মুয়াজ্জল অনেকটা বাই মুরাবাহার মত। তবে কিছুটা পার্থক্য আছে। আর সেটি হলো বাই মুয়াজ্জলে ব্যাংক গ্রাহককে পণ্যের ক্রয় মূল্য কত, তা বলে না এবং গ্রাহক ব্যাংকের নির্ধারিত মূল্য অবশ্যই বাকীতে পরিশোধ করবে। সোজা কথা হলো বাই মুরাবাহা নগদে বা বাকীতে হতে পারে এবং এখানে গ্রাহক ব্যাংকের মুনাফা কত হবে, তা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকে। কিন্তু বাই মুয়াজ্জল অবশ্যই বাকীতে হতে হবে এবং ব্যাংকের মুনাফা কত হবে, সে সম্পর্কে গ্রাহত জ্ঞাত থাকে না। বাই মুরাবাহাতে ব্যাংকের মুনাফা নির্ধারিত থাকে কিন্তু বাই মুয়াজ্জলে মুনাফা অজ্ঞাত থাকে। বাই মুরাবাহার মতই বাই মুয়াজ্জলেও ব্যাংক কর্মকর্তার দূর্বলতা এবং গ্রাহকের ভিন্ন উদ্দেশ্যর কারণে শরীয়াহ লংঘন হতে পারে।
ইসলামী ব্যাংক এ পদ্ধতিতে সাধারনত ক্ষুদ্র বিনিয়োগ করে থাকে এবং প্রায় সকল ক্ষেত্রেই গ্রাহককে সরাসরি টাকা দিয়ে দেয় এবং শরীয়াহ লঙ্ঘন করে থাকে। বৈদেশিক বানিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাংক রপ্তানিকারককে লোকাল ব্যা্ক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে কাচামাল সংগ্রহ করে দেয়।লোকাল ব্যা্ক টু ব্যাক এলসি হল গ্রাহকের পক্ষে কাচামাল সরবরাহকারীর নিকট পেমেন্টের অঙ্গীকার। যা সাধারনত ৪ মাসের বাকীতে হয়ে থাকে। ৪ মাসের মধ্যে গ্রাহকের রপ্তানি বিলের পেমেন্ট পাওয়ার পর ব্যাংক সাধারনত উক্ত ব্যা্ক টু ব্যাক এলসি পরিশোধ করে থাকে। কোন কারনে যথাসময়ে রপ্তানি বিলের পেমেন্ট না পাওয়া গেলে ব্যা্ক টু ব্যাক এলসি পরিশোধের জন্য ব্যাংক উক্ত কাঁচামাল রপ্তানিকারকের কাছ থেকে বাই মুয়াজ্জল পদ্ধতিতে ক্রয় করে থাকে। সাধারনত এ ক্ষেত্রে মালামালের কোন অস্তিত্ব থাকে না এবং শরীয়াহ লঙ্ঘিত হয়।
বাই সালামঃ বাই সালাম হলো অগ্রিম ক্রয় পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ব্যাংক গ্রাহকের নিকট পণ্য ক্রয়ের জন্য অগ্রিম মূল্য প্রদান করে থাকে। যেমন একজন কৃষককে ব্যাংক ১০০০ টাকা অগ্রিম প্রদান করল এবং বলল ৫ মাস পর ২ মণ আলু ব্যাংককে প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে আলুর পরিমাণ, গুণাগুণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। যদি পণ্যের পরিমাণ, গুণাগুণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকে, তবে বাই সালাম এর মাধ্যমে লেনদের বৈধ হবে না।
বাস্তব ক্ষেত্রে পণ্য রপ্তানিতে বাই সালাম এর প্রাকটিস হয়। যেমন ধরুন কোন গার্মেন্টস ফেক্টরির মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক ৫০ লক্ষ টাকার মোট ১০ হাজার পিস টি শার্ট আগামী ৩ মাসের মধ্যে রপ্তানির অর্ডার গ্রহণ করল। এখন ইসলামী ব্যাংক ঐ গার্মেন্টস ফেক্টরিকে ১০ হাজার পিস টি শার্ট এর জন্য অগ্রিম ৪৯ লক্ষ টাকা পরিশোধ করল এবং বলল পণ্য ৩ মাসের মধ্যে সরবরাহ করতে হবে। অর্থাৎ ইসলামী ব্যাংক গার্মেন্টস ফেক্টরি হতে অগ্রিম ৪৯ লক্ষ টাকার টি শার্ট ক্রয় করে বিদেশি কোম্পানির নিকট ৫০ লক্ষ টাকায় রপ্তানি করে ১ লক্ষ টাকা মুনাফা করল।
তবে অনেকক্ষেত্রে মালামাল প্রস্তুত হওয়ার পরে বা রপ্তানির পরেও এ পদ্ধতি প্রয়োগ হয় এবং শরীয়াহ লঙ্ঘন হয়। ব্যাংক অনেক সময়ই বিক্রয় প্রতিনিধি না বানিয়েই মালামাল গ্রাহককে দিয়ে রপ্তানি করায় এবং লভ্যাংশ ভোগ করে।
মুশারাকাঃ মুশারাকা হলো অংশীদারের ভিত্তিতে ব্যবসা করা। এই পদ্ধতিতে ব্যাংক এবং বিনিয়োগ গ্রাহক উভয়ই মূলধন প্রদান করবে এবং চুক্তি অনুযায়ী মুনাফা বন্টন করবে। কিন্তু ক্ষতি হলে মূলধনের অনুপাতে ক্ষতি বহন করতে হবে। মুশরাকা হলো ইসলামী অর্থনীতির প্রাণ। কিন্তু জনগোষ্ঠির মধ্যে ঈমান, আখলাক, আমানতদারী, দক্ষতা, যোগ্যতা ইত্যাদির ঘাটতি থাকলে মুশারাকা পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করা কঠিন হয়ে যায়। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (IBBL) এর ২০১৯ সালে মুশারাকা পদ্ধতিতে বিনিয়োগ হয়েছে মাত্র ৫৮ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (IBBL) ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে মুশারাকা পদ্ধতিতে বিনিয়োগ কার্যক্রম শুরু করেছিল। কিন্তু একেবারে প্রথম দিকে হওয়ায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনাগত দূর্বলতা এবং বিনিয়োগ গ্রাহকদের প্রকৃত তথ্য প্রদানে অপারগতার কারণে মুশারাকা পদ্ধতিতে ব্যাংকের ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে থাকে। তাই ব্যাংক বর্তমানে মুশারাকা পদ্ধতিতে তুলনামূলকভাবে অনেক কম বিনিয়োগ করে থাকে। বরং ব্যাংক অংশীদারিত্বে না গিয়ে বিক্রেতা হিসেবে কাজ করে।
উল্লেখ্য যে, বিক্রেতা হিসেবে কাজ করলে ব্যাংকের মুনাফা নিশ্চিত থাকে। একটু আগেই বলা হয়েছে ইসলামী অর্থনীতি হলো ইসলামী জীবন ব্যবস্থার একটি অংশ। যখন মানুষ ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হবে, তখনই ব্যাংক মুশারাকার মত অংশীদারিত্বে বিনিয়োগ বাড়াতে পারবে।
মুদারাবাঃ ব্যাংক যখন মুদারাবা পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করে তখন ব্যাংক হয় ‘সাহিব আল মাল’ অর্থাৎ মূলধন সরবরাহকারী। অন্যদিকে গ্রাহক হয় ‘মুদারিব’ অর্থাৎ যে ব্যাংক হতে মূলধন গ্রহণ করে তার শ্রম ও দক্ষতার এবং যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে ব্যবসা করে। এই পদ্ধতিতে চুক্তি অনুযায়ী মুনাফা বন্টন করবে। কিন্তু ক্ষতি হলে ‘সাহিব আল মাল’ হিসেবে ব্যাংককে ক্ষতি বহন করতে হবে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (IBBL) এর ২০১৯ সালে মুদারাবা পদ্ধতিতে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৪৭০ কোটি টাকা।
হায়ার পারচেজ আন্ডার শিরকাতুল মিল্কঃ এ পদ্ধতিতে ব্যাংক ও বিনিয়োগ গ্রাহক উভয়ই যৌথভাবে সম্পদের মালিকানা অর্জন করবে। এরপর ব্যাংকের অংশ গ্রাহককে ভাড়া দেয়া হবে এবং একইসাথে গ্রাহক ব্যাংকের অংশ কিস্তিতে ক্রয় করে ফেলবে। উল্লেখ্য যে গ্রাহক ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধের সাথে সাথে ব্যাংকের মালিকানা কমতে থাবে এবং গ্রাহকের মালিকানা বাড়তে থাকবে। ফলে ভাড়ার পরিমাণও কমতে থাকবে। একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের পর গ্রাহক সম্পূর্ণ সম্পদের মালিক হয়ে যাবে।
ধরুন, একটি বাড়ি নির্মাণের জন্য আপনি ৪০ লক্ষ টাকা এবং ইসলামী ব্যাংক ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছে। তাহলে ব্যাংক ঐ বাড়ির ৬০% এর মালিক। এখন ব্যাংক তার অংশের জন্য মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করল ১০ হাজার টাকা এবং আপনি ৬০ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে বাড়ির পুরো মালিকানা নিয়ে যাবেন। প্রতি মাসের কিস্তিতে বাড়ির মূল্য পরিশোধের জন্য ধরা হলো ৫০ হাজার টাকা। অতএব মাসিক কিস্তি হবে (১০ + ৫০) = ৬০ হাজার টাকা। উল্লেখ্য যে, যতই কিস্তি পরিশোধ করা হবে, ততই বাড়ির মালিকানায় ব্যাংকের অংশ কমতে থাকবে এবং গ্রাহকের অংশ বাড়তে থাকবে। তাই কিস্তি ৬০ হাজার টাকা হতে বাড়ি ভাড়া ১০ হাজার টাকা ক্রমান্বয়ে কমে আসবে এবং কমে আসা অংশটি বাড়ির মূল্য পরিশোধের সাথে যুক্ত হবে। ফলে ১০ বছরের কম সময়ের মধ্যে গ্রাহক বাড়ির সম্পূর্ণ মালিকানা পেয়ে যাবে।
মোটকথা, এখানে তিনটি চুক্তি হবে। (ক) মালিকানার ভিত্তিতে অংশীদারিত্ব। (খ) ইজারা তথা ভাড়ায় প্রদান। (গ) বাই তথা বেচাকেনা। তিনটি চুক্তিই একটি থেকে অপরটি আলাদা করবে। অন্যথায় ‘সফকাতাইনে ফী সাফকাহ’ তথা এক চুক্তিতে অন্য চুক্তি প্রবেশ করানোতে বিষয়টি বিতর্কিত হয়ে যাবে। তবে ব্যাংক এক্ষেত্রে একই চুক্তির মধ্যে তিনটি চুক্তিই করে থাকে এবং শরীয়াহ লঙ্ঘন করে।
حَدَّثَنَا الْفَضْلُ بْنُ سَهْلٍ، قَالَ: نا أَسْوَدُ بْنُ عَامِرٍ، عَنْ شَرِيكٍ، عَنْ سِمَاكٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: «نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صَفْقَتَيْنِ فِي صَفْقَةٍ» ، وَهَذَا الْحَدِيثُ أَسْنَدَهُ شَرِيكٌ بِهَذَا الْإِسْنَادِ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিঃ থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি চুক্তির মধ্যে দুটি চুক্তি করতে নিষেধ করেছেন। মুসনাদে বাযযার, হাদিস নং ২০১৭
أَخْبَرَنَا أَبُو خَلِيفَةَ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو الْوَلِيدِ، قَالَ: حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ سِمَاكٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ أَنَّهُ قَالَ: “لَا تَحِلُّ صَفْقَتَانِ فِي صَفْقَةٍ وَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَعَنَ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وشاهديه وكاتبه”
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক চুক্তির মাঝে দুই চুক্তি করা জায়েজ নেই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদ গ্রহীতা, সুদ প্রদানকারী, সুদের সাক্ষী ও লেখকের উপর লানত করেছেন। সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ৫০২৫, তাবারানি আওসাত ، হাদিস নং ১৬১০
ইসলামী ব্যাংকগুলো এ পদ্ধতিতে বাড়ী, গাড়ী এবং মেশিনপত্রে বিনিয়োগ করে থাকে। এক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ প্রায় ২০%। অর্থাৎ বাই মুরাবাহা এবং হায়ার পারচেজ আন্ডার শিরকাতুল মিল্ক এ দুটো পদ্ধতি শরীয়াহসম্মত হলে বেশীরভাগ আয় হালাল হত।
ইসলামী ব্যাংক এবং সুদী ব্যাংকের বিনিয়োগের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো নগদ অর্থ। ইসলামী ব্যাংক কোন নগদ অর্থ প্রদান করে না কিন্তু সুদী ব্যাংক সিসি লোনের দ্বারা গ্রাহকের একাউন্টে নগদ অর্থ প্রদান করে। এর ফলে অর্থনীতিতে নিম্নোক্ত প্রভাব পড়তে পারে-
(ক) ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ উৎপাদনশীল খাতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কারণ ইসলামী ব্যাংক সরাসরি নগদ অর্থ প্রদান না করে বিনিয়োগ দ্রব্য ক্রয় করে গ্রাহকের নিকট দ্রব্য পৌছিয়ে দেয় অথবা গ্রাহকের সাথে মালিকানায় অংশগ্রহণ করে। কিন্তু সুদী ব্যাংক গ্রাহকের নামে ৫ কোটি টাকা সিসি লোন প্রদান করে তার দায়িত্ব শেষ করে। গ্রাহক এই ৫ কোটি টাকা নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় করতে পারে, আবার অন্য খাতেও ব্যয় করতে পারে। এমনকি গ্রাহক এই অর্থ সম্পূর্ণ অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করতে পারে। ফলে গ্রাহকের ঋণ খেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং চক্রবৃদ্ধি সুদের মাধ্যমে গ্রাহক দেউলিয়া হয়ে গেলে তার জামানত ব্যাংকের দখলে চলে যায়।
(খ) ইসলামী ব্যাংকিং এর জন্য ব্যাংক কর্মকর্তা এবং গ্রাহকের মধ্যে সততা, ন্যায়পরায়ণতা, আমানতদারী থাকতে হবে। যদি এর ঘাটতি থাকে, তবে সুদি ব্যাংকে সিসি লোন যেভাবে নগদ উঠিয়ে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করা সম্ভব, ঠিক একইভাবে ইসলামী ব্যাংকেও গ্রাহক নগদ টাকা গ্রহণ করতে পারবে। তবে পদ্ধতিগত পার্থক্য থাকার কারণে ইসলামী ব্যাংকে নগদ অর্থ উঠানো বেশ কঠিন কাজ। তাছাড়া শরীয়াহ অডিটে বিষয়টি ধরা পড়লে এর মুনাফা ব্যাংকের আয়ের হিসাবে যায় না, বরং জনকল্যাণমূলক তহবিলে চলে যায়। অবশ্য ইসলামী ব্যাংক বিক্রেতা না হয়ে অংশীদার হলে নগদ অর্থ ব্যাংক হতে বিনিয়োগ গ্রাহকের হাতে যাওয়া দোষণীয় নয়।
(গ) ইসলামী ব্যাংকের যে সমস্ত কর্মকর্তা এবং গ্রাহকরা ইসলামী ব্যাংকের নীতিমালার বাইরে গিয়ে শরীয়াহ লংঘন করেন এবং শরীয়াহ লংঘনের কারণে ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম সমালোচিত হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম এবং সুদী ব্যাংকের কার্যক্রম একই, তাদের জন্য রাসুল (সা.) এর বক্তব্য হলো, “সুদখোর, সুদদাতা, এর স্বাক্ষী এবং সুদের হিসাব/ দলীল লেখক সবাই সমান অপরাধী”। হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত এবং ‘আবু দাউদ শরীফে’ ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়ে আছে। অর্থাৎ ইসলামী ব্যাংকে চাকুরি করা সত্ত্বেও ব্যাংকের কর্মকর্তারা স্বজ্ঞানে শরীয়াহ লংঘনের কারণে সুদের হিসাব বা দলীল লেখক হিসাবে সমান অপরাধী হবেন এবং জাহান্নামের দিকে ধাবিত হবেন।
কমিশন ভিত্তিক সেবাদান
এ ক্ষেত্রে ব্যাংক নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে সেবা দিয়ে থাকেন যেমনঃ পে অর্ডার, টিটি, অনলাইন, ব্যাংক গ্যারান্টি, এলসি ইত্যাদি। তবে এ জাতীয় আয় সাধারনত ব্যাংকের মালিক বা ডাইরেক্টরগন পেয়ে থাকেন। এটা সুদমুক্ত। তবে এ আয় থেকে ব্যাংক কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের বেতন বা জমাকারীদের মুনাফা দেয়া হয়না। বিধায় ব্যাংক বিনিয়োগের মাধ্যমে সুদ উপার্জন করলে তা কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের বেতন বা জমাকারীদের মুনাফা হিসেবে প্রদান করা হয়।
আরো পড়ুন