ফ্রি ক্যাশ আউট সেবা দেয়ার পরিকল্পনা নগদের
বাংলাদেশের অন্যতম একটি জনপ্রিয় মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সেবা হলো নগদ। নগদের অ্যাপ থেকে পাওয়া যায় অসাধারণ সব সুযোগ সুবিধা। বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মালিকানাধীন এই মোবাইল ব্যাংকিং এর প্রতিষ্ঠান সবসময়ই কম চার্জ…
বাংলাদেশের অন্যতম একটি জনপ্রিয় মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সেবা হলো নগদ। নগদের অ্যাপ থেকে পাওয়া যায় অসাধারণ সব সুযোগ সুবিধা।
বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মালিকানাধীন এই মোবাইল ব্যাংকিং এর প্রতিষ্ঠান সবসময়ই কম চার্জ বা ফি এর মাধ্যমে গ্রাহক আকর্ষণ ধরে রাখতে চেয়েছে। এতোদিন তারা এমএফএস সেবায় ক্যাশ আউট চার্জ অন্যাদের তুলনায় কম নির্ধারণ করে আসছে। তবে নগদের এখানেই থেমে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।
আরও বেশি মানুষকে এমএফএস সেবার মধ্যে নিয়ে আসতে নগদ এই বছরের মধ্যেই পুরোপুরি বিনামূল্যে ক্যাশ আউট বা কোনো চার্জ ছাড়াই নগদ টাকা উত্তোলন সেবা চালু করতে চায়। ফ্রি ক্যাশ আউট সেবা চালুর মাধ্যমে নগদ দেশের এমএফএস সেবায় নতুন এক যুগের সূচনা করতে আগ্রহী। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতো এগিয়ে যাবেই, সাথে আরও বেশি মানুষ এমএফএস সেবা ব্যবহার করতে আগ্রহী হবে বলে আশাবাদী নগদ।
সম্প্রতি নগদের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জনাব তানভীর মিশুক এই পরিকল্পনার কথা জানান। পুরোপুরি বিনামূল্যে এই ক্যাশ আউট বা নগদ টাকা উত্তোলনের সেবা চালু করলে এতে নগদের আয় কমে যাবে বলে মনে করছেন না তিনি। বরং এর ফলে নগদ আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক গুলো মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস চলমান আছে। যদিও বিকাশ এখানে অগ্রগণ্য, তবে নগদ ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা অর্জন করে নিচ্ছে। বিদ্যমান এমএফএস সেবাগুলো বর্তমানে টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে প্রতি হাজারে ১০ টাকা হতে ১৮.৫০ টাকা পর্যন্ত চার্জ নিয়ে থাকে। নগদ অ্যাপ হতে এই চার্জ বর্তমানে প্রতি হাজারে ভ্যাটসহ ১১.৪৮ টাকা ।
নগদ খুব শীঘ্রই তাদের নন-ব্যাংক ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন “নগদ ফিনান্স পিএলসি” নামে চালু করতে যাচ্ছে। এই সেবার মাধ্যমে ফ্রিতে নগদ ক্যাশ আউট সেবা দিতে পারবে বলে জানিয়েছে তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সকল অনুমতি শীঘ্রই পেয়ে যাবে বলে আশা করছে নগদ।
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যাংক থেকেই বিনামূল্যে টাকা উত্তোলন করা যায়। অনেক দিন ধরেই এমএফএস গ্রাহকরা বিনামূল্যে এই টাকা উত্তোলনের সুবিধা চেয়ে আসছিলেন। এই সেবাটি চালু হলে সাধারণ ব্যাংকের মতোই নগদে থাকা ব্যালেন্স পুরোপুরি বিনামূল্যে চার্জ ছাড়াই যে কোন এজেন্টের কাছ থেকে উত্তোলন করা সম্ভব হবে।
নন-ব্যাংক ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন বা এনবিএফআই হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবার পর নগদ শুধুমাত্র ফ্রি ক্যাশ আউট সেবা নয়, সাথে আরও বেশ কিছু ফিনান্সিয়াল সেবা চালু করতে চায় তারা। যেমন কম খরচে ঋণ প্রদান। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে নগদ ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং স্বল্প আয়ের মানুষের দিকে নজর দিতে চায়। কাজেই সল্প খরচে সহজে অনলাইনের মাধ্যমেই লোন প্রদানের ব্যবস্থা করবে নগদ। শুধু তাই নয় ১০ টাকা থেকে সঞ্চয় করার সুবিধাও চালু করার পরিকল্পনা আছে তাদের। উল্লেখ্য যে বিকাশ থেকে লোন নেয়া যাচ্ছে বর্তমানে।
এনবিএফআই সেবা থেকে প্রাপ্ত লাভ থেকেই নগদ সহজে তাদের এমএফএস সেবাতে বিনামূল্যে ক্যাশ আউট করার সুবিধা নিয়ে আসতে পারবে। অর্থাৎ নগদ তাদের মূল লাভ করতে চায় বিভিন্ন এনবিএফআই সেবা দিয়ে। ডেইলি স্টারের সাথে এক সাক্ষাৎকারে এমনটিই জানিয়েছেন নগদ এমডি জনাব তানভীর মিশুক।
২০১৯ সালে নগদ চালু হলেও প্রথম ই-কেওয়াইসি সেবা চালুর মাধ্যমে খুব দ্রুতই অসংখ্য গ্রাহক পেয়ে যায় নগদ। ফলে খুব সহজে এবং দ্রুত নগদ অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব হয় ও মোবাইল ফিনান্সিয়াল সেবায় নতুন এক দিগন্তের সূচনা হয়। ২০২০ সালে প্রথম নগদ তাদের ক্যাশ আউট চার্জ কমিয়ে আনে। ফলে নগদে লেনদেনের পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। নগদ অদুর ভবিষ্যতে ডিজিটাল ব্যাংক চালুর পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা চালুর ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে।
দেশে সর্বোমোট ১৩ টি এমএফএস সেবার ১৯.১০ কোটি একাউন্ট রয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন এই সেবার মাধ্যমে প্রায় ৩০০০ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। চার বছর আগেও এই লেনদেনের পরিমাণ ছিল মাত্র ১২০০ কোটি টাকার মতো। নগদের নতুন এই সেবা চালু হলে এই লেনদেনের পরিমাণ আরও কয়েক গুন বেড়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নে এমএফএস সেবা নিঃসন্দেহে বড় ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। কাজেই নগদ বিনামূল্যে ক্যাশ আউট সেবা চালু করতে পারলে সেটি এমএফএস সেক্টরে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে তা বলাই যায়।
nice