‘ডিজিটাল ব্যাংক’ লেনদেন ক্যাশলেস করার অন্যতম উপায়
বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংক চালু হতে যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী চলতি বাজেট বক্তৃতায় নতুন অর্থবছরেই ডিজিটাল ব্যাংকিং চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে অনেক কিছুই ক্যাশলেস হয়ে যাচ্ছে। আমরাও অনেক কেনাকাটায় নগদ টাকার পরিবর্তে মোবাইল ফাইন্যান্সিং সার্ভিস ব্যবহার করি। মোবাইল ফোনের কিউআর কোড স্ক্যান করে পেমেন্ট করি। এভাবেই ব্যাংকের অনেক সেবা পুরোপুরি ডিজিটাল হচ্ছে।
ব্রাঞ্চ ব্যাংকিংয়ের যে খরচ হয়, সেটা ভবিষ্যতে অনেক ব্যাংক নিতে পারবে না। দেখা গেছে নতুন প্রজন্ম প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের তুলনায় এ ধরনের ব্যাংকিং-এ বেশি আগ্রহী। সিঙ্গাপুর, ফিলিপিন, মালেশিয়ার মতো দেশেও দেখা গেছে, প্রচলিত ব্যাংকের তুলনায় ডিজিটাল ব্যাংক মানুষ বেশি পছন্দ করছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান ২০২২ সালে ডিজিটাল ব্যাংক ব্যবস্থা চালু করেছে। সারা বিশ্বে নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলো যখন প্রথাগত ফিজিক্যাল ব্যাংক থেকে মুখ ফিরিয়ে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকছে, ঠিক সেই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ডিজিটাল ব্যাংক চালু করার ঘোষনা দিয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রথাগত ব্যাংকের সংখ্যা মোট ৬১টি। ২০৪১ সালের মধ্যে ৭৫ শতাংশ ব্যাংকিং লেনদেন ক্যাশলেস করার সরকারের যে লক্ষ্য, তা বাস্তবায়নের জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিংই হল একমাত্র উপায়। কারণ ডিজিটাল পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এমএফএসের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রচলিত ব্যাংক সময় নির্ভর। অনেক সেবার জন্য সশরীরে যেতে হয়। ঋণ নেওয়া, একাউন্ট খোলা, স্টেটমেন্ট নেওয়ার জন্য অনেক সময় ব্যাংকে যেতে হয়। সেখানে গিয়ে কাগজপত্রে নিজের স্বাক্ষর করতে হয়। কিন্তু ডিজিটাল ব্যাংকে সেসব করতে হবে না এবং সব ধরনের সেবাই পাওয়া যাবে। এখানে লেনদেনের সকল বিষয় হবে ভার্চুয়ালি। মোবাইলের অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহকরা এই ব্যাংকে লেনদেন করতে পারবেন।
দেশে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনে আগ্রহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে গতানুগতিক পদ্ধতিতে কাগুজে নথি জমা দিয়ে নয়। ডিজিটাল পদ্ধতিতেই ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন করতে হবে। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র ডিজিটাল উপায়েই জমা দিতে হবে আগ্রহীদের। আবেদন ফি হবে পাঁচ লাখ টাকা মাত্র, যা অফেরতযোগ্য। আর এই ব্যাংক খুলতে ন্যূনতম মূলধন দরকার হবে ১২৫ কোটি টাকা। নতুন এই উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক চাইছে, বিদেশি কোনো ডিজিটাল ব্যাংক তথা সফট ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে আসুক। কারণ, তাদের উচ্চ প্রযুক্তি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অভিজ্ঞতা ও বিনিয়োগ প্রয়োজনিয় সবই রয়েছে।
তারা এ দেশে ডিজিটাল ব্যাংকের সঙ্গে থাকলে গ্রাহকেরাও আস্থা পাবেন। আর তাদের আমানতও সুরক্ষিত থাকবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের নীতিমালা চূড়ান্ত করার পর এই ব্যাপারে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে নীতিমালার পাশাপাশি আবেদনের যাবতীয় ছকও দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল ব্যাংকের কোনো শাখা, উপশাখা, এটিএম বুথ বা অন্য কোনো স্থাপনা থাকবে না। মোবাইল ফোন বা ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করেই গ্রাহকদের ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী চলবে এই ব্যাংকিং কার্যক্রম। ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তাদেরকে মূলধন সংরক্ষণ চুক্তি করতে হবে। কোনো ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়লে তা উদ্যোক্তাদের জোগান দিতে হবে।
ঋণখেলাপি আছে এমন কেউ ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। এছাড়াও ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের কারও বিরুদ্ধে ঋণখেলাপি সংক্রান্ত কোনো মামলা আদালতে চলমান থাকলে তারাও আবেদন করার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। মূলধন কম লাগবে বলে স্পন্সরদের জন্য প্রথাগত ব্যাংগুলোর তুলনায় ডিজিটাল ব্যাংকের অংশীদারিত্ব পাওয়া বেশ সহজ হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের খসড়া গাইডলাইনে ফিনটেক কোম্পানি, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান, মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস), ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের জন্য যৌথ উদ্যোগ নিয়ে সামনে এগিয়ে আসতে উত্সাহিত করেছে। ইতিমধ্যে অনেকেই এ বিষয়ে যোগাযোগ করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে।
হোমে যান – bankline