চতুর্থ প্রজন্মের ৯ ব্যাংক রয়েছে চরম সংকটে

অনিয়ম-দুর্নীতি, আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কারণে ও পরিবারতন্ত্রের বেড়াজালে পড়ে চরম সংকটে রয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের ৯ ব্যাংক। এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের বোঝা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

ADVERTISEMENT
চতুর্থ প্রজন্মের ৯ ব্যাংক রয়েছে চরম সংকটে

২০১২-১৩ সালের দিকে বিশেষ কিছু পরিকল্পনাকে মাথায় নিয়ে, এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের কেন্দ্রিয় ব্যাংক চতুর্থ প্রজন্মের নয়টি ব্যাংকে অনুমোদন দেয়। এসব ব্যাংকের মধ্যে দেশীয় উদ্যোক্তাদের মালিকানায় ছয়টি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের মালিকানায় অনুমোদন পায় তিনটি ব্যাংক।

দেশীয় উদ্যোক্তাদের পরিচালনায় অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলো নাম হলো:মধুমতি, মিডল্যান্ড, ইউনিয়ন, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স, মেঘনা ও পদ্মা ব্যাংক। প্রবাসীদের মালিকানায় অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলো হলো:- এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড

ADVERTISEMENT

অনুমোদন পাওয়ার পাশাপাশি এই ব্যাংক গুলোর তিন বছরের মাথায় দেশের পুঁজিবাজারেও তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর জন্য যেসব শর্ত ছিলো, তার কোনোটাই পূরণ করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। তার উপর বর্তমানে ব্যাংকগুলো বিশাল অংকের ঋণ খেলাপিতে জর্জরিত।

বেনামে দেয়া হচ্ছে ঋণ। নিয়ম নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে কেউ আগ্রাসী বিনিয়োগে ঝুঁকছে ও লস খাচ্ছে। ফলে আমানতের অর্থ ফেরত দিতে হিমশিম অবস্থা তৈরি হচ্ছে। কোথাও পর্ষদের প্রভাব খাটিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে শত শত কোটি টাকা। এই অনিয়ম-দুর্নীতি টাই যেন এখন তাদের মূল নীতি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে এই নয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ হয়েছে পাঁচ হাজার চারশত ছিয়াত্তোর কোটি বাহাত্তোর লাখ টাকা। ছয় মাসের ব্যবধানে বেড়েছে দুইশত কোটি দুই লাখ টাকা। আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে চারশত আটচল্লিশ কোটি পঞ্চাশ লাখ টাকা।

ADVERTISEMENT

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্ষদের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম-দুর্নীতি আর বিভিন্ন ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ার ফলে ব্যাংকগুলো হুমকিতে পড়েছে এবং ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে আর্থিক খাত। নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে নিজেদের ইচ্ছামতো চালানো হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক নির্দেশনার পরও শৃঙ্খলার মধ্যে আসেনি তারা।

অভিযোগ রয়েছে যে, রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব ব্যাংককে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। এসব কারণেই হয়তো নিয়ম নীতি তাদের আটকাতে পারে না। এই সমস্যা সমাধানে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণকারী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

পদ্মা ব্যাংক: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, নতুন প্রজন্মের নয় ব্যাংকের মধ্যে শীর্ষ খেলাপির তালিকায় রয়েছে পদ্মা ব্যাংক। এই চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার সাতশত নয় কোটি একচল্লিশ লাখ টাকা। এটি বাংলাদেশ ব্যাংক চিহ্নিত দশ দূর্বল ব্যাংকের মধ্যে একটি।

ADVERTISEMENT

ইউনিয়ন ব্যাংক: ইউনিয়ন ব্যাংকের বর্তমান খেলাপির পরিমাণ সাতশত বারো কোটি। বলা হচ্ছে, এটি মোট ঋণের প্রায় চার শতাংশ। তবে পাঁচ বছর আগে ব্যাংকের খেলাপির হার ছিল শূন্য দশমিক সাতান্ন শতাংশ।

মেঘনা ব্যাংক: রিপোর্ট অনুযায়ি, চলতি বছরের জুন শেষে মেঘনা ব্যাংকের খেলাপি দাঁড়িয়েছে দুইশত একচল্লিশ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের প্রায় ৬ শতাংশ। অথচ এই খেলাপির পরিমাণ ২০১৭ সালে মোট ঋণের ৩ শতাংশ ছিলো।

মিডল্যান্ড ব্যাংক: এই বছরের জুনের শেষে মিডল্যান্ড ব্যাংকের খেলাপি হয়ে পড়েছে ১৬২ কোটি টাকা। হিসাব অনুযায়ী যা খেলাপি ঋণ বিতরণকৃত মোট ঋণের প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ।

ADVERTISEMENT

মধুমতি ব্যাংক: অন্যদিকে, মধুমতি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার যদিও পাঁচ বছর আগে ছিল একেবারেই নগণ্য, তবে এই বছরের জুনের শেষ নাগাদ তিন দশমিক তেতাল্লিশ শতাংশ। এটি প্রায় একশত আশি কোটি টাকা, যা ২০১৭ সালে ছিল মাত্র ৯ কোটি টাকা।

সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক: আবার, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের খেলাপি এই বছরের জুনের শেষে হয়ে পড়েছে ৪১৮ কোটি। এটি তাদের বিতরণ করা মোট ঋণের ছয় শতাংশ। ২০১৭ সালে তাদের খেলাপি ঋণ ছিলো মাত্র একত্রিশ কোটি টাকা।

এনআরবি ব্যাংক: বর্তমানে এই বছরের জুনের শেষে এনআরবি ব্যাংকের মোট খেলাপির পরিমাণ একশত উনপঞ্চাশ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের তিন দশমিক তিহাত্তোর শতাংশ।

গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক: তারপর আছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, গত জুনের শেষ নাগাদ যাদের খেলাপি ঋণ দুইশত ষোল কোটি সত্তোর লাখ টাকা। এটি তাদের মোট ঋণের দুই দশমিক একাত্তোর শতাংশ।

ADVERTISEMENT

এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক: সবশেষ আছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দুইশত ছাব্বিশ কোটি বায়ান্ন লাখ টাকা। যা ডিসেম্বরে ছিল একশত চল্লিশ কোটি দশ লাখ টাকা।

ব্যাংকিংয়ের সকল আপডেট নিউজ পেতে ভিজিট করুন এই লিংকে
ADVERTISEMENT

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *