টাকা-রুপির ডেবিট কার্ড চালু করছে বাংলাদেশ ব্যাংক
টাকার পাশাপাশি রুপিতে ব্যবহার করা যাবে, এমনই একটি ডেবিট কার্ড নিয়ে আসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই কার্ড চালু হলে বাংলাদেশিদের ডলার খরচ কমবে বলে মনে করছে ব্যাংক খাতের এই নিয়ন্ত্রক…
টাকার পাশাপাশি রুপিতে ব্যবহার করা যাবে, এমনই একটি ডেবিট কার্ড নিয়ে আসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই কার্ড চালু হলে বাংলাদেশিদের ডলার খরচ কমবে বলে মনে করছে ব্যাংক খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বাংলাদেশিরা ভারতে ঘুরতে গিয়ে এই কার্ড ব্যবহার করে লেনদেন করবেন বলে প্রত্যাশা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।
গত রোববার নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এ কথা জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে নিজস্ব ডেবিট কার্ড নিয়ে আসা হচ্ছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে টাকা পে কার্ড। এই কার্ড ব্যবহার করে দেশে কেনাকাটা করা যাবে। তারপর এটাকে আমরা রুপির সঙ্গে যুক্ত করে ফেলব, সেই প্রক্রিয়া চলছে’।
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, বাংলাদেশে এই কার্ড দিয়ে লেনদেন করা যাবে। আবার কেউ ভারতে গেলে ভ্রমণকারীর ১২ হাজার ডলারের যে ভ্রমণ কোটা আছে, সেই পরিমাণ অর্থ রুপিতে তিনি খরচ করতে পারবেন। ফলে মুদ্রার বিনিময়ের কারণে যে ক্ষতি হয়, তা আর হবে না। তাতে প্রায় ৬ শতাংশের মতো অপচয় কমবে। বাংলাদেশিরা সচরাচর সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করেন ভারতে। এতে করে অনেক ডলার বাঁচবে।
জানা গেছে, দেশে বিভিন্ন ব্যাংকের ডুয়েল-কারেন্সি কার্ড অর্থাৎ টাকার বাইরে ডলারের মাধ্যমে লেনদেন করার মতো ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড বিদ্যমান আছে। বিদেশে ভ্রমণ করতে গেলে এসব কার্ড ব্যবহার করে ভ্রমণকারীরা লেনদেন করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে লেনদেন চলে ডলারের মাধ্যমে। এ ছাড়া মাল্টি-কারেন্সি কার্ডও আছে প্রায় অনেক ব্যাংকের। এগুলোর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশের মুদ্রায় লেনদেন করার উপায় আছে।
যেহেতু আমাদের দেশ থেকে ভারতে অনেক বেশি লোক ভ্রমণে গিয়ে থাকেন, সেহেতু রুপিতে ব্যবহারযোগ্য নতুন ডেবিট কার্ড ভারতে ডলারের ব্যবহার কমাবে এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা বিনিময় হারজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এটি উঠে এসেছে যে, বাংলাদেশিরা প্রতিবেশী দেশ ভারত সফরে একক দেশ হিসেবে ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করেন। বস্তুত, দেশের বাইরে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের মোট খরচের চার ভাগের এক ভাগ হয় প্রতিবেশি দেশ ভারতে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত ভ্রমণে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে প্রায় ৭৩ কোটি টাকা খরচ করেছেন। মার্চে এই অর্থ ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১০৩ কোটি টাকা।
ভারতের পর বাংলাদেশিরা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বেশি খরচ করেন বলে জানা গেছে। মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশিরা খরচ করেছেন প্রায় ৫১ কোটি টাকা। মার্চে থাইল্যান্ডে গিয়ে ব্যায় করেছেন প্রায় ৪২ কোটি টাকা। এরপর দুবাই ও সিঙ্গাপুরে যথাক্রমে প্রায় ৪১ ও ৩৪ কোটি টাকা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশিরা ব্যয় করেছেন বলে তথ্যে উঠে এসেছে। সব মিলিয়ে মার্চ মাসে দেশের বাইরে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশিরা ব্যয় করেছেন মোট প্রায় ৪২৬ কোটি টাকা।
এদিকে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা জানান, গত বছর বাংলাদেশিদের জন্য ১৫ লাখের বেশি ভারতীয় ভিসা দেওয়া হয়েছিল। যা ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে একটি রেকর্ড। বাংলাদেশিরা মূলত চিকিৎসা ও ভ্রমণের জন্য ভারতে গিয়ে থাকেন।
সূত্র- প্রথম আলো
হোম পেজে যান- bankline